শনিবার, ১৮ জুলাই, ২০২০

CESC বেসরকারীকরণ ~ সব্যসাচী চ্যাটার্জী

আচ্ছা  CESC নাকি জ্যোতি বোস বেসরকারিকরণ করেছিল...

এটা একটু পড়ে দেখতে পারেন।

সত্যিই কি লাভজনক সরকারি সংস্থা সি.ই.এস.সি. গোয়াঙ্কাদের হাতে তুলে দিয়েছিলেন জ্যোতি বসু ? 

লেটস চেক দ্যা ফ্যাক্ট এন্ড ল।

কলকাতার নগরায়নের ইতিহাসে বৈদ্যুতিকরণ ছিল একটি ঐতিহাসিক ঘটনা। ১৮৭৬ সালে কলকাতা মিউনিস্যিপ্যাল কর্পোরেশন গড়ে ওঠে। ১৮৭৯ সালে কলকাতায় প্রথম পরীক্ষামূলক ভাবে বিদ্যুতের আলো জ্বালানো হয়। এই কাজে যার ভূমিকা অবস্মরণীয় তিনি রুকস ইভেলিন বেল ক্রম্পটন নামে এক বিখ্যাত প্রযুক্তিবিদ ও শিল্পপতি। তাঁরই উদ্যোগে ইংল্যান্ডের  আলোকিকরন হয়েছিল।যেকোনো শিল্পের মত এক্ষেত্রেও প্রযুক্তি এবং পুঁজির একত্র উদ্যোগে গড়ে ওঠে  বিভিন্ন ব্রিটিশ বিদ্যুৎ কোম্পানী। যেহেতু ভারতের মত ব্রিটিশ উপনিবেশে বিদ্যুতায়ন শুরু হয়েছিল ইংরেজদের উদ্যোগে সেহেতু সেই উদ্যোগের উদ্যেশ্য ছিল ঔপনিবেশিক অর্থাৎ এখানে বিদ্যুৎ উৎপাদন থেকে সরবারহ সমস্ত কিছু শুরু হয়েছিল প্রথমত অফিস কাছারি ও শহরের কার্যক্ষেত্রের চাহিদা অনুসারে।যেমন বিদ্যুৎ ক্ষেত্রকে না বুঝলে বিদ্যুতায়ন বা বিদ্যুৎ পরিষেবা বোঝা সম্ভব নয়।তেমন ভারতের বৈদ্যুতিকরণের অগ্রগতি না বুঝলে বিদ্যুৎ পরিষেবার সমস্যা গুলি বোঝা কার্যত অসম্ভব। আম্ফান পরবর্তী সময়ে আমার নিজস্ব মতামত সম্বলিত কয়েকটি পোষ্টে অনেকে অনেকগুলি প্রশ্ন করেছেন, আমি সেই প্রশ্নগুলির জবাব দেবার চেষ্টা করব। বলে রাখা ভালো যে, আমি ব্যক্তিগত ভাবে বিদ্যুৎ শিল্প বা পরিষেবা সংক্রান্ত বিশেষজ্ঞ নই, তাই আমার এই উত্তরগুলিকে একজন সচেতন রাজনৈতিক কর্মীর বক্তব্য হিসাবেই ধরে নেওয়াটাই সঠিক হবে। প্রথমে প্রশ্ন গুলিকে ভাগ করে নেওয়া যাক। 

👉 আম্ফান পরবর্তী পরিস্থিতিতে বিদ্যুৎ পুনরায় সংযুক্তিকরনের কাজে কোলকাতার বিদ্যুৎ সরবারহ সংস্থার ব্যর্থতা কি সঙ্গত? মানে তাঁদের কি কিছুই করার ছিলনা ? 

👉ক্যালকাটা ইলেকট্রিক সাল্পাই কর্পোরেশন কি শুধুই একটি বেসরকারি সংস্থা ? সরকার বা পুরসভার কিছুই কি করার নেই ?

👉বামফ্রন্টের আমলে কি ক্যালকাটা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কর্পোরেশন সরকারি নিয়ন্ত্রনমুক্ত করে বেসরকারি হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিল ? বিদ্যুৎ পরিষেবার ক্ষেত্রে এক্ট অফ গড বা ফোর্স মেজিওর ক্লজ কি কার্যকরী এই প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সময়ে ?

👉একটি অত্যাবশ্যক পরিষেবা প্রদানকারী বেসরকারি সংস্থার উপর সরকারের কি কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই ?

নীচের ফ্যাক্টস গুলি দেখলেই উপরের প্রশ্নগুলির উত্তর পাওয়া যাবে। 

*পরাধীন ভারতে বিদ্যুৎ ক্ষেত্রঃ
.............................................

পরাধীন ভারতে বিদ্যুৎ ক্ষেত্র ছিল সম্পূর্ণভাবে বেসরকারি নিয়ন্ত্রণে। একমাত্র বিদ্যুতের দাম নিয়ন্ত্রণের মত কয়েকটি ক্ষেত্রে আঞ্চলিক অথবা প্রাদেশিক সরকারগুলির ভূমিকা দেখা যায়।১৮৯৭ সালে ক্যালকাটা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কর্পোরেশন গড়ে ওঠার প্রায় ষোল বছর আগে কলকাতায় প্রথম বৈদ্যুতিক আলো জ্বালানো হয়।সেটা ১৮৮৭ সালে চালু হয় কলকাতার বৈদ্যুতিকরনের আইন। এই আইনে বিদ্যুৎ পরিষেবার কাজে কোনো কোম্পানীকে নিয়োগ করার ধারা ছিল না।১৮৯৬ সালে রুকস সাহেব গভর্মেন্ট বাহাদুরের আমন্ত্রণে এই আইনে বিদ্যুৎ পরিষেবা প্রদানের ক্ষেত্রে কোনো লাইসেন্সী নিয়োগের ধারা বানানোর জন্য ... কাজ শুরু করেন। এই সময়েই ১৯০০ সালে  সি.ই.এস. সি একচেটিয়া বিদ্যুতায়নের লাইসেন্স পায়।১৮৭৯ সালের ২৪ শে জুলাই কোলকাতায় P.W. Fleury and Co. এর উদ্যোগে প্রথম পরীক্ষামূলক ভাবে আলো জ্বালানো হয়।কলকাতার বৈদ্যুতিকরনের ক্ষেত্রে ইংরেজদের অবদান অনস্বীকার্য। প্রখ্যাত ইংরেজ বিদ্যুৎ শিল্পপতি রুকস ইভলিন বেল ক্রম্পটন তিনি ইংরেজ সরকারকে প্রথম বিদ্যুত আইনের খসড়া বানাতে সহায়তা করেন।১৮৮৭ সালে বিদ্যুৎ আইন আসে। এই আইনে বিদ্যুৎ পরিষেবার কাজে কোনো কোম্পানীকে নিয়োগ করার ধারা ছিল না।  ১৮৯৫ সালে ক্যালকাটা ইলেক্ট্রিক লাইটিং এক্ট আসে। এই আইনে প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে লাইসেন্সী নিয়োগ পদ্ধতির কথা বলা হয়। এই আইন অনুসারে ১৮৯৭ সালে মেসার্স Kilburn and Company যা Indian Electric Company র এজেন্ট একুশ বছরের জন্য  কোলকাতার বিদ্যুৎ লাইসেন্স পায়। ১৮৯৭ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে লন্ডনে অনুষ্ঠিত বিশেষ সভায় Indian Electric Company র নাম  Calcutta Electric Supply Corporation Ltd. হয়। তারা কলকাতা ও লাগোয়া অঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবারহের ইজারা (লাইসেন্স) লাভ করে। ১৯১০ সালের ভারতীয় বিদ্যুৎ আইন অনুযায়ী সরকারের হাতে লাইসেন্স দেবার ক্ষমতা ছিল। কিন্তু বাজারে একমাত্র দীর্ঘস্থায়ী অভিজ্ঞতার কারনে সি.ই.এস.সি. বিদ্যুৎ ক্ষেত্রে মনোপলি অর্জন করে। সেই থেকেই কলকাতায় এই কোম্পানীটির মনোপলির জন্ম।

সি.ই.এস.সির ক্ষেত্রে সরকার বা পুরসভার নিয়ন্ত্রণের প্রশ্নেও কিছু বক্তব্য আছে। আইন অনুসারে সি.ই.এস.সিকে সমস্ত সহায়তা করার দায়িত্ব সরকারের ও নির্দিষ্ট ভাবে বললে, পুলিশ ও প্রশাসনের। একই ভাবে, দুর্যোগের প্রশ্নে সরকারকে আবশ্যিক সহায়তা করার দায়িত্ব সি.ই.এস.সি বা অন্যান্য পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থার। তাই কিছুই করার নেই বলাটা শুধুই মুর্খামি। মানুষকে চরমতম বিপর্যয়ের হাত থেকে বাঁচানোর বদলে তাকে বিপদের সামনে ফেলে দেওয়ার জনৃ। চলুন ইতিহাসের পাতা থেকে একটু খুঁজে দেখার চেষ্টা করি এই ধরনের সংকট কিভাবে মোকাবিলা করা হয়েছিল কলকাতা পুরসভার পক্ষ থেকে। এই প্রশ্নের উত্তরটি খুঁজতে গেলে আমাদের চলে যেতে হবে ১৯২৪ সালে। সেই যে বছর কোলকাতা কর্পোরেশন স্বরাজ পার্টির দখলে আসে।মেয়র হন দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাস।এই সময় কলকাতা কর্পোরেশনের সাথে ক্যালকাটা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কর্পোরেশনের নানা বিষয়ে সংঘাত বাধে।প্রথমত, সেইসময় সি.ই.এস.সির সাথে বিরোধ হয় বিদ্যুৎ ক্ষেত্রে তাদের একচেটিয়া অধিকারের ইস্যুতে। সীমাবদ্ধ ক্ষমতার মধ্যে দাঁড়িয়ে কলকাতা কর্পোরেশন চিত্তরঞ্জন দাসের নেতৃত্বে বিদেশী নিয়ন্ত্রিত বিদ্যুৎ পরিষেবা কোম্পানীর জায়গায় দেশীয় কোম্পাণীগুলিকে উৎসাহিত করে।মনে রাখা দরকার এই যে এই সময় কলকাতা কর্পোরেশনের কাছে না ছিল ক্ষমতা, না ছিল আর্থিক সামর্থ।১৯৩০ সালে অসহযোগ আন্দোলনের সময় থেকেই স্বরাজ পার্টির নিয়ন্ত্রণে থাকা কলকাতা কর্পোরেশন বিদ্যুতের দাম কমানোর দাবীতে সি.ই.এস সি. কে চাপ দিতে থাকে। এই চাপ সৃষ্টির ফলে ১৯৩৩ সালে সি.ই.এস.সিকে তাদের বিদ্যুতের দাম কমাতে হয়।আসলে কলকাতা তথা ঔপনিবেশিক ভারতের বৈদ্যুতিকরণ না বুঝলে আজকের সমস্যা বোঝা যাবে না।

স্বাধীন ভারতে বিদ্যুৎ ক্ষেত্রঃ
....…....................................
বিদ্যুৎ ক্ষেত্রকে বুঝতে গেলে বিদ্যুৎ উৎপাদন থেকে সরবারহ সবটাই বুঝতে হবে। দেশ স্বাধীন হবার পর পঞ্চবার্ষিকি পরিকল্পনায় বিদ্যুৎ ক্ষেত্রকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয় এবং রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে পরিকল্পিত বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়। সরবারহ সুনিশ্চিত করতে রাজ্যে রাজ্যে স্টেট ইলেক্ট্রিসিটি বোর্ড গঠিত হয় রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে।পশ্চিমবঙ্গে ১৯৫৫ সালে তৈরি হয় পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিদ্যুৎ পর্ষদ। ২০০৩ সালের কেন্দ্রীয় আইন অনুসারে এই সংস্থাটি অবলুপ্ত হয়ে বর্তমানে দুটি কোম্পানি গড়ে উঠেছে ২০০৭ সালে। প্রথমটি, পশ্চিমবঙ্গে রাজ্য বিদ্যুৎ বন্টন নিগম বা ওয়েস্ট বেঙ্গল স্টেট ইলেকট্রিসিটি ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানী‌। অন্যটি (WBSETCL-Transmission Co. Ltd.)। সংবিধান অনুসারে বিদ্যুত হল একটি যুগ্ম তালিকাভুক্ত বিষয়। ফলত, কেন্দ্রীয় আইনের বাইরে গিয়ে রাজ্যগুলি আইন বানালেও কেন্দ্রীয় আইন লাগু হয়। দেশের সংবিধান ও আইন ঘাঁটলে আমরা দেখি বিদ্যুৎ একটি অধিকার।সুপ্রীম কোর্ট বা হাইকোর্টের রায় দেখলে আমরা আরো দেখি যে, বিদ্যুৎ সংযোগ আমাদের  জীবনের অধিকারের অবিচ্ছেদ্য অংশ।কারন জল বা বিদ্যুতের মত পরিষেবাগুলি মানুষের বেঁচে থাকার শর্ত। ঠিক যে কারনে কলকাতা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কর্পোরেশন একটি বেসরকারি সংস্থা হলেও পরিষেবা প্রদানের চরিত্র অনুসারে তাদের বিরুদ্ধে হাইকোর্ট সংবিধানের ২২৬ নং অনুচ্ছেদ অনুসারে নির্দেশ জারী করতে পারে। ১৯৮৬ সালে প্রকাশিত সি.ই.এস.সি. গেজেটে কথা কোম্পানীর অন্যতম উপদেষ্টা শ্রী এস.কে রায় লিখেছিলেন যে, এটি দেশের হাতে গোনা বেসরকারি সংস্থাগুলির একটি যারা জন হিতকর ক্ষেত্রে নিয়োজিত।এই কারনেই তাদের একচেটিয়া অবস্থানের সৃষ্টি হয়েছে। তাই আর পাঁচটা বেসরকারি সংস্থার সাথে সি.ই.এস.সির তুলনা করা যুক্তিসংগত নয়।সি.ই.এস.সি র ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যাবে কোনোদিনই সি.ই.এস.সির পরিচালনা সরকারের হাতে ছিলনা ১৯৭০ সালে শুধুমাত্র লন্ডনের পরিচালকমন্ডলীর হাত থেকে ভারতের পরিচালক মন্ডলীর হাতে আসে। ভারতীয় করনের জন্য ১৯৭৮ সালে ক্যালকাটা ইলেকট্রিক সাপ্লাই  (ইন্ডিয়া) লিমিটেড নাম হয় কোম্পানীর।১৯৮৭ সালে এই কোম্পানীর নাম বদল করে হয় সি.ই.এস.সি. লিমিটেড। অর্থাৎ, এগুলো শুধুই নাম বদল। জনহিতকর ক্ষেত্রে নিয়োজিত  একটি বেসরকারি কোম্পানীর উপর সরকারের নিয়ন্ত্রণ রাখতে ১৯৯৮ সালে ইলেকট্রিসিটি রেগুলেটরি কমিশন আইন আসে। এতদিন শুধু লাইসেন্সের ক্ষেত্রে সরকারি নিয়ন্ত্রণ ছিল। এবার বিদ্যুতের দাম নির্ধারনের ক্ষেত্রে সেই নিয়ন্ত্রণ এলো।১৯৮৯ সাল থেকে সি.ই.এস.সির সঙ্গে গোয়েঙ্কাদের সম্পর্ক সৃষ্টি হয়।সেই ব্রিটিশ আমল থেকে চলে আসা লাইসেন্সের ভিত্তিতেই তাঁরা কাজ করে আসছে। তাই লাইসেন্স দেবার ক্ষেত্রে বিধান রায়, জ্যোতিবসু, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য কিংবা মমতা বন্দোপাধ্যায় নতুন কিছু করেন নি।

গোয়েঙ্কা ও সি.ই.এস.সি
.....................................

এবার আসি আশির দশকের শেষের সি.ই.এস.সির শেয়ার কেনায় প্রশ্নে। সঞ্জীব গোয়েঙ্কার প্রয়াত বাবা রমাপ্রসাদ গোয়েঙ্কা দেশের অধিগ্রহণ সম্রাট বা টেকওভার কিং  বলে পরিচিত ছিলেন, ১৯৮৯ সাল থেকে সি.ই.এস.সি র সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলেন। এটি ছিল একটি বেসরকারি সংস্থার আভ্যন্তরীণ ম্যানেজমেন্টের প্রশ্ন। ভারতের কোম্পানী আইন অনুসারে এক্ষেত্রে কোনো সরকারের কোনো ভূমিকা থাকেনা। জ্যোতি বসু সরকারেরও কোনো ভূমিকা ছিলনা।
২০০৩ সালের আগে চালু থাকা তিনিটি কেন্দ্রীয় আইনকে একত্রিত করে ইলেকট্রিসিটি এক্ট ২০০৩ আসে। এই আইনে স্পষ্ট করে ভারতের বিদ্যুৎ ক্ষেত্রে সরকারি ভূমিকার প্রশ্নে কিছু মৌলিক পরিবর্তন আসে। অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনটি হল বেসরকারি সংস্থাগুলিকে লাইসেন্স দেওয়া ও একই জায়গায় দুটি সরবারহ কোম্পানীকে বিদ্যুত সরবারহের জন্য রাস্তা খুলে রাখা। এই প্রথম আইন করে একচেটিয়া সরবারহের সুযোগ পরিবর্তন করা হয়। সৃষ্টি হয় খোলা বাজারের প্রতিযোগিতা।তাহলে মমতা ব্যাণার্জীর সরকারের দোষ কোথায় ? না সি.ই.এস.সির আভ্যন্তরীণ পরিচালনার ক্ষেত্রে সরকারের হাত নেই।

কিন্তু পাবলিক ইউটিলিটি সার্ভিসের ক্ষেত্রে ডিসাসটার ম্যানেজমেন্ট এক্ট অনুযায়ী রাজ্য সরকার নিশ্চিত ভাবেই নিয়ন্ত্রণ করতে পারে সি.ই.এস.সিকে।মমতা ব্যাণার্জী তা করেন নি।  বিদ্যুত বন্টন নেটওয়ার্কের যথাযথ মেনটিন্যান্সতো যেকোনও ইউটিলিটির পেরেনিয়াল নেচারের কাজ। সেই নেচারের কাজ যুগ যুগ ধরে ঠিকা শ্রমিকদের দিয়ে করানোটাইতো 'কন্ট্রাক্ট লেবার (রেগুলেশন এন্ড এ্যাবোলিশন) আইনে নিষিদ্ধ। বাকি রইল, এই কাজে যুক্ত স্থায়ী কর্মীবাহিনী যাদের লকডাউন ইত্যাদির কারনেও  যাদের বেতনে এখনও হাত পড়ে নি। তাহলে, যথেষ্ঠ পূর্বাভাস থাকা সত্বেও আগাম সতর্কতামূলক ম্যানপাওয়ার মোবিলাইজেসন করা যায় নি। শ্রমিকরা সব দেশে চলে গেছে বলে যুক্তিটা খুবই নড়বড়ে। সারা দেশে পরিযায়ী শ্রমিকরা যে সমস্যায় ঘরমুখি হতে উদগ্রীব হয়েছে, তা হল কর্মহীনতার সঙ্গে যুক্ত উপার্জনহীনতা এবং অনাহার। সিইএসসির একজন শ্রমিকেরওতো সেই সমস্যা নেই। তবে কেন তারা দলে দলে নিজের দেশে চলে যাবে ? একদম বাজে কথা। এছাড়া, আমরা জানি রাজ্য বন্টন সংস্থার প্রায় সব বন্টন সংযোগ ওভারহেড তারের মাধ্যমে হওয়ায়, ট্রাডিশনালি তারা খারাপ আবহাওয়ার পূর্বাভাস থাকলেই নাগরিক সুরক্ষার জন্য নিজেরাই সংশ্লিষ্ট এলাকায় সব ট্রান্সফরমার বন্ধ করে গ্রাহককে সরবরাহ স্থগিত রাখে। আবার, আবহাওয়া ঠিক হলেই সেগুলি সচল করে দেয়। অথচ, সিইএসসি তে বন্টন ব্যাবস্থা ঠিক উল্টো। প্রায় সর্বত্র (এটা ৯৫% ক্ষেত্রে বলা যায়) আন্ডারগ্রাউন্ড তারের মাধ্যমে বন্টন। এখানেই তাদের যত ব্যর্থতার কারন লুকিয়ে আছে যা পেশাদারীত্বের বিলোপের জন্য তারা বুঝতে পারে নি। আন্ডারগ্রাউন্ড ডিসট্রিবিউসন নেটওয়ার্কেরও যে নিয়মিত পরীক্ষা, পরিচর্যা দরকার তা তারা কোনো দিনই ভাবে নি, করে নি। তাদের হয়ত একটা ধারনা তাড়া করে যে, মাটির ওপরে রাস্তা ইত্যাদি যতই ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যাক, ভূগর্ভস্থ নেটওয়ার্কের কোনও ক্ষতি সম্ভব নয়। আমরা রোজ দেখছি, একজন একসময়ের গামোছা বিক্রেতা বা চা ওয়ালাও পৌরসভাগুলি থেকে এখন রোড রিপেয়ারিং এর বরাত পাচ্ছে। সোসাল মিডিয়ায় দেখেছি সেই রাস্তার হাল কি। আজ প্রমানিত হল যে, সিইএসসি গ্রাহকের বাড়ীর মিটার যেমন নিয়ম করে বদলে ফেলে, তেমনিভাবে ভূগর্ভস্থ নেটওয়ার্কটাও শতবর্ষ প্রাচীন হয়েছে। তাকে ধাপে ধাপে বদলানোর সময় পার হয়েছে। হ্যাঁ, গাছ কাটা সিইএস সির কাজ নয় বলেই, তেমন পরিকাঠামো তাদের নেই। কিন্তু, সেনা বাহিনী আগাম জানিয়ে জরুরী ভিত্তিতে সেই কাজ করতে এসে, আমরা জেনেছি, সিইএসসির লোকজনের অভাবে দু'ঘন্টা হাত গুটিয়ে বসে থাকতে বাধ্য হয়েছে। তারাতো আগে ঐ সমস্ত ভেঙ্গে পড়া গাছে জড়িয়ে থাকা জীবন্ত তারগুলো বিচ্ছিন্ন করবে। তবে তো বাহিনী মহিরুহ কাটবে, সরাবে। ভেঙ্গে পড়া গাছে জড়িয়ে থাকা তারগুলো বিচ্ছিন্ন না করে, অন্য কাজ শুরু করাটাই প্রাণঘাতি। অতএব, আমরা যতক্ষন না সময় পাই, বাহিনী ততক্ষন হাত গুটিয়ে অপেক্ষা করুক। একেই কি বলে সবাই হাতে হাত মিলিয়ে বিপর্যয়ের মোকাবিলা করা ?ঠিক এই খানেই ভুল হচ্ছে ম্যাডাম।তাই প্রশ্ন উঠছে, আপনার আমলে বঙ্গ বিভূষণ সঞ্জীব গোয়েঙ্কার কোম্পানি বলেই কি আপনি ছাড় দিচ্ছন! সামলান, ম্যাডাম সামলান।বিজেপি ইতিমধ্যেই মনোপলি ভাঙার কথা বলছে। সাধারণত তা ভাঙার দল তারা নয়। তাই, আশঙ্কা করছি মনোপলি ভাঙার নামে আম্বানীদের দালালি হয়ে যাবে না তো ? ভারতের বিদ্যুৎ শক্তি ক্ষেত্রে তারা কিন্তু বিগ প্লেয়ার। তখন সামলাতে পারবেন না।

ও আর একটা কথা ম্যাডাম। সাধারণত পাবলিক ইউটিলিটি সার্ভিস দেওয়া কোম্পানীগুলি মূল কোম্পানীর টাকা অন্য কোনো কোম্পানীতে ব্যবহার করতে পারে না... এও জানি এই নিয়মটা করা হয়েছে রেগুলেটারি কমিশনের তত্বাবধানে মূল্য নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে। তবে কানা ঘুষো যা শুনছি মানে কোয়েস্ট মল, স্পেনসর্স, সিইএসসি প্রপার্টিজ ইত্যাদি ইত্যাদি আর কি ! তাতে আপনার আরো সচেতন থাকা উচিৎ এদের ব্যাপারে। আফটার অল 'বেওসায়ী' তো!!মুনাফা ছাড়া কিচ্ছু করে না। মূলত, 'জনস্বার্থ' দেখাটা কোনও বেনিয়ার কাজ নয়।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন