বুড়ো বলল, "তা হলে লিখে নাও—আক্রান্তের সংখ্যা ১৫০০, মৃতের সংখ্যা ১৩।"
আমি বললাম, "দুৎ! আমার জেলাতেই মৃতের সংখ্যা ৯০ ছাড়িয়ে গেছে , বলে কিনা ১৩!"
বুড়ো খানিকক্ষণ কি যেন ভেবে জিজ্ঞাসা করল, "বাড়তি না কমতি?"
আমি বললাম, "সে আবার কি?"
বুড়ো বলল, "বলি ডেঙ্গিতে মৃত্যু এখন বাড়ছে না কমছে?"
আমি বললাম, "মৃত্যু আবার কমবে কি?"
বুড়ো বলল, "তা নয় তো কেবলই বেড়ে চলবে নাকি? তা হলেই তো গেছি। কোনদিন দেখব মৃতের সংখ্যা বাড়তে বাড়তে একেবারে ষাট সত্তর আশি পার হয়ে গেছে। শেষটায় পঞ্চায়েতে হারি আর কি!"
আমি বললাম, "তা তো হারবেই। এত মানুষ মরলে হারতে হবে না!"
বুড়ো বলল, "তোমার যেমন বুদ্ধি! আশি জন ডেঙ্গিতে মরবে কেন? চল্লিশ হলেই আমরা মৃতের সংখ্যা ঘুরিয়ে দিই। তখন আর একচল্লিশ বেয়াল্লিশ হয় না—উনচল্লিশ, আটত্রিশ, সাঁইত্রিশ করে মৃতের সংখ্যা নামতে থাকে। এমনি করে যখন দশ পর্যন্ত নামে তখন আবার মৃতের সংখ্যা বাড়তে দেওয়া হয়। আমার রাজ্যে তো কত উঠল নামল আবার উঠল, এখন হয়েছে তেরো৷" শুনে আমার ভয়ানক হাসি পেয়ে গেল।
কাক বলল, "তোমরা একটু আস্তে-আস্তে কথা কও, আমার হিসেবটা চট্পট্ সেরে নি।"
জন্তটার রকম-সকম দেখে আমার ভারি অদ্ভুত লাগল। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, "তুমি কে? তোমার কি হয়েছে?"
সে খানিকক্ষণ ভেবে বলল, "আমার অজানা জ্বর হয়েছে । আমার অজানা জ্বর হয়েছে, আমার ভাইয়ের অজানা জ্বর হয়েছে, আমার বাবার অজানা জ্বর হয়েছে, আমার পিসের অজানা জ্বর হয়েছে—"
আমি বললাম, "তার চেয়ে সোজা বললেই হয় তোমার গুষ্টিসুদ্ধ সবার অজানা জ্বর হয়েছে।"
সে আবার খানিক ভেবে বলল, "তা তো নয়, আমার সেপ্টিসিমিয়া উইথ্ লো প্লেটলেট কাউন্ট! আমার মামার সেপ্টিসিমিয়া উইথ্ লো প্লেটলেট কাউন্ট, আমার খুড়োর সেপ্টিসিমিয়া উইথ্ লো প্লেটলেট কাউন্ট, আমার মেসোর সেপ্টিসিমিয়া উইথ্ লো প্লেটলেট কাউন্ট, আমার শ্বশুরের সেপ্টিসিমিয়া উইথ্ লো প্লেটলেট কাউন্ট—"
আমি ধমক দিয়ে বললাম, "সত্যি বলছ? না, বানিয়ে?"
জন্তুটা কেমন থতমত খেয়ে বলল, "না, না, আমার শ্বশুরের প্যানিক অ্যাটাক হয়েছে, ব্রেনে অক্সিজেন কম যাচ্ছে।"
আমার ভয়ানক রাগ হল, তেড়ে বললাম, "একটা কথাও বিশ্বাস করি না।"কাকটা আমনি তাড়াতাড়ি বলে উঠল, "সে তোমাদের হিসেব অন্যরকম।"
বৃহস্পতিবার, ২ নভেম্বর, ২০১৭
ডেঙ্গু = অজানা জ্বর
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন