সোমবার, ১ জুলাই, ২০১৯

চিকিৎসক দিবস ~ ড: রেজাউল করীম

আজ চিকিৎসক দিবস। চিকিৎসকদের উপর লাগাতর নিগ্রহের বিরুদ্ধে আজকের দিন পালন করা হচ্ছে। গতকাল একজন সাংবাদিকের কাছে শুনলাম, কলকাতার হাসপাতালে নিরাপত্তা বাড়ানো হচ্ছে। শুনে ভালই লাগছে,  তবে আশঙ্কা আছে ষোল আনা। সেই অধুনা বিখ্যাত সভার পর ও প্রায় তিনটি ভাঙচুরের ঘটনা এই এত দূরে থেকেও আমি জানতে পারলাম, জানিনা হয়তো আরো বেশি ঘটেছে। যাক, আশা করি অবস্থার পরিবর্তন হবে। সারা দেশে চিকিৎসকদের সম্প্রদায় হিসেবে আক্রমনের লক্ষ্য হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে। যে পারস্পরিক ঘৃণা সম্প্রদায়ে সম্প্রদায়ে ছড়িয়ে পড়ছে, তা কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। মানুষের অসহায়তা, ক্ষোভ আর হতাশা বাড়ছে প্রতিদিন আর সে তার সব দুর্ভাগ্যের কারণ হিসেবে একটা অদৃশ্য প্রতিপক্ষ খাড়া করে সুখ খোঁজার চেষ্টা করছে। আমার দুর্ভাগ্যের জন্য আমি দায়ী নই, রাম-শ্যাম-হাসিম শেখরা দায়ী।
অনেক দুর্ভাগ্যের ইতিহাস রচিত হয়েছে পৃথিবীতে। আরো হবে কেননা অন্ধ ক্রোধ তার লেলিহান আগুনে সবাইকে জ্বালিয়ে দেওয়ার জন্য তৈরী হয়ে আছে। সেসব কথা কার্পেটের তলায় ঠেলে দিয়ে বরং ভাল ডাক্তার হওয়ার চেষ্টা করা যাক। দেশ, জাতি, পৃথিবী, জল-সঙ্কট, ধর্মীয় উন্মাদনা নিয়ে বাকিরা মাথা ঘামাক, আমরা ডাক্তার, ওগুলো নিয়ে বিশ্ব মাথা খুঁড়লেও আমাদের দরকার নেই!!!!

যাঁর জন্মদিন আজ পালন করছি, তিনি তখন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। ওয়েলিংটন থেকে রাইটার্স যেতেন। সকালে বেলা হাতে গোনা কয়েকটি রোগী দেখতেন। আগে থেকে নাম লেখাতে হতো। একটা লোক রোজ এসে দাঁড়িয়ে থাকে, নাম লেখানো নেই, তাই দেখাতে পারে না। রায়বাবু দু চারদিন লোকটিকে খেয়াল করে শেষে একদিন বিরক্ত হয়ে ডেকে পাঠালেন।"কিহে, রোজ রোজ এসে দাঁড়িয়ে থাকো! ব্যাপার কি?:
-আজ্ঞে, আপনাকে দিয়ে চিকিচ্চে করাতে চাই।
-তা রোগীটি কে হে?
-আজ্ঞে, আমি।
বিধানবাবু, একবার তাকিয়ে ভাল করে দেখলেন তাকে তারপর বললেনঃ না হে, এ রোগ সারার নয়। তাছাড়া, আমার আজ সময় ও নেই। তুমি বরং কাল এসো গিয়ে।
পরদিন লোকটি আসতেই তার হাতে একটা চিঠি দিয়ে বললেনঃ এটা নিয়ে রাইটার্সে যাও, আমার সেক্রেটারির সাথে দেখা করো। দারিদ্র কি আর ওষুধ দিয়ে সারে?
 এই গল্পটি আমি তাঁর একজন রোগীর কাছে আজ থেকে ত্রিশ বছর আগে শুনেছিলাম। তবে, ঘটনাটা মনে হয় বানানো নয়, কারণ বিমল মিত্র  মহাশয় ও প্রায় একই ধরনের একটি ঘটনা লিখেছেন।
এ দেশের বেশির ভাগ মানুষের মূল যে সব মারণ রোগ নিয়ে  চিন্তা করার দরকার, আর সরকার যে সব রোগের জন্য পয়সা খরচা করতে চান, তার মধ্যে দুস্তর ব্যবধান। সরকার অপুষ্ট, নিরক্ত, অভুক্ত মানুষের কাছে চাকচিক্য খচিত নীল সাদা বাড়ি দিয়েছেন, তাতে ঘুঘু চরলেও কিছু যায় আসে না, ভোটের হিসেব আর মানুষের দুর্দশা দূর করা পরস্পরের ব্যস্তানুপাতিক। যে সীমাহীন শৈথিল্য টিকাকরণ কর্মসূচিতে দেখানো হচ্ছে, সব শিশুঘাতী মারণরোগ ফিরে আসলেও অবাক হবো না। 
এক পুরোপুরি নিরাপত্তাহীন জাতির চিকিৎসকের নিরাপত্তার জন্য ঢাল, তলোয়ারহীন কয়েকটা সেপাই আর যারা লুটেপুটে দেশটাকে ছিবড়ে করে মানুষের নিরাপত্তা নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে, তাদের জন্য কমাণ্ডো!!!

তবু, চিকিৎসক দিবস এসেছে। সবাই মিলে তাকে সফল করতে হবে। গুরুদেব বলেছেনঃ
"আছে দুঃখ, আছে মৃত্যু, বিরহদহন লাগে।
 তবুও শান্তি, তবু আনন্দ, তবু অনন্ত জাগে ॥" 
মৃত্যু নিশ্চিত জেনেও কি অট্টালিকা বানাই না!  তাই, কি বলে, আজকের এই পুণ্যলগ্নে যে ভালবাসার রস ফেসবুক আর হোয়াটসাপ বাহিত অমৃতের চাঙড় নিয়ে আসছে, তাকে স্বাগত জানিয়ে শুরু হোক আজকের দিন।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন