রবিবার, ৯ জুলাই, ২০২৩

পঞ্চায়েত নির্বাচনের হিসেব ~ ডাঃ বিষাণ বসু

হিসেব খুব সহজ নয়, আবার অত জটিলও নয়।

পঞ্চায়েতে এরকম জালিবাজি হবে। হতে থাকবে। কেন্দ্রীয় সরকার সে নিয়ে উচ্চবাচ্য করবে না (করাটা খুব অভিপ্রেত, এমনও নয়, কেননা তাঁদের রেকর্ডটিও তো বড় মুখ করে গল্প করার মতো নয়)। কেননা, এই রাজ্যে প্রশাসন তৃণমূলের হাতে থাকলে বিজেপির ক্ষতি নেই। বরং যত বেশি পঞ্চায়েত তৃণমূলের হাতে, তত দুর্নীতি, তত ইডি-সিবিআই, তত বেশি করে তৃণমূল নেতাদের টিকি বিজেপির ঘরে বাঁধা। বিজেপির লক্ষ্য, লোকসভায় এই রাজ্য থেকে গোটা বারো-পনের সিট - বেশি হলে ভালো, নইলে ওটুকু দিয়ে আপাতত কাজ চালানো। আর রাজ্যসভা-লোকসভায় যেকোনও ইস্যুতে তৃণমূলের সমর্থন - সরাসরি না হয়ে অভিনব পদ্ধতিতে হলেও ক্ষতি নেই, যেমন ওয়াক-আউট ইত্যাদি প্রভৃতি। এবং মাঝেমধ্যে কিছু রাজ্যের নির্বাচনে টুকটাক ভোট কাটাকাটি করে সাহায্য, এটুকু।

লোকসভায় তৃণমূল বিজেপিকে সেই কোটার সিট দেবে। বছরভর বাকি সহযোগিতা তো বলাই বাহুল্য। উপায়ও নেই, কেননা চুরিচামারির কারণে টিকি ওপাড়ায় বাঁধা।

তো পঞ্চায়েতের মাসকয়েকের মাথায় লোকসভা নির্বাচনে এমন ফল বিশ্লেষণ করতে গিয়ে মিডিয়া সমস্বরে বলবে, এই ফল হলো পঞ্চায়েত ভোটে অনাচারের প্রতিবাদে মানুষের ক্ষোভের স্বতঃস্ফূর্ত প্রকাশ। তৃণমূলের দু-চারজনও সেই মর্মে কথা বলবেন - মানে, আত্মসমীক্ষা আত্মবিশ্লেষণ জাতীয় কথাবার্তা, তৃণমূলের পক্ষে যতটুকু সম্ভব, ততটুকুই আর কি।

তবে সেই রেজাল্ট দেখে আসল বিচলিত হবেন বুদ্ধিজীবী-বিচক্ষণ-বোদ্ধারা। বলার সুযোগ পেয়ে যাবেন, রাজ্যের পক্ষে বিজেপি বড় বিপদ। প্রাথমিক বিপদ বিজেপিই। অতএব, যেকোনও মূল্যে বিজেপিকে ঠেকাতে, ইত্যাদি প্রভৃতি... 

আর হ্যাঁ, এসবের মাঝে মিডিয়া শোনাতে থাকবে, এই রাজ্যের রাজনৈতিক ঐতিহ্য বলতে খুনোখুনি আর হিংসা। দায়ী বলতে প্রশাসন বা কোনও দল নয় - দায়ী আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতি, অশিক্ষা, দারিদ্র্য ইত্যাদি প্রভৃতি আর কিয়দংশে দুর্ভাগ্য। অনেকে বলবেন, আগে তো ইলেকট্রনিক মিডিয়া ছিল না, থাকলে আরও অনেক খবর জানা যেত। এমনিতে এই রাজ্যের মিডিয়া চট করে তথ্যটথ্যর ধারপাশ মাড়ায় না - নাকি ইচ্ছাকৃতভাবে চেপে যায়, জানি না - নইলে পরিবর্তনের আগের চৌঁত্রিশ বছরে রাজ্যে ঠিক কতগুলো পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি আর জেলা পরিষদ বিরোধীদের হাতে ছিল, এই সহজ তথ্যটুকু কেন যে কেউ খুঁজে দেখে না!! নাকি, উন্নয়নের স্বতঃস্ফূর্ত প্রবাহে বিরোধী শক্তি স্রেফ ভেসে চলে গেছে, একথা তাঁরাও বিশ্বাস করেন, কে জানে!

তো এভাবেই চলতে থাকবে।

পাপচক্র, দুষ্টচক্র, বিষচক্র - যা-ই বলুন - এই চক্র ভাঙা সহজ নয়।

হতাশ লাগে। আবার যাঁরা প্রতিরোধে সামিল হলেন, তাঁদের জন্য গর্বও হয়। ঘরকুনো মধ্যবিত্ত অপোগণ্ড হিসেবে এর বেশি আর কী-ই বা পারি!

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন