বুধবার, ২২ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩

মাতৃভাষা দিবস ~ ডঃ সমুদ্র সেনগুপ্ত

যার অক্লান্ত প্রয়াসে বাংলা ভাষার শহীদ প্রয়াণ দিবস ২১শে ফেব্রুয়ারি কে ইউনাইটেড নেশন্স বা সম্মিলিত জাতিপুঞ্জকে সারা পৃথিবী জুড়ে "মাতৃভাষা দিবস" হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছিল তিনি হলেন কানাডা নিবাসী তরুণ বাংলাদেশি রফিকুল ইসলাম।
রফিকুল, যিনি একজন প্রাক্তন মুক্তিযোদ্ধাও বটে, ৯ই জানুয়ারি, ১৯৯৮ তে কানাডায় বসে তৎকালীন ইউএন মহাসচিব কোফি আন্নান কে ভাষা দিবস ঘোষণা করার অনুরোধ জানিয়ে একটি চিঠি লেখেন। যাইহোক, তার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যাত হয় কারণ ওই ধরণের প্রস্তাব কোনো সদস্য দেশের বদলে, ব্যক্তিমানুষের বা সংগঠনের কাছ থেকে আসলে গৃহীত হয় না।
এটি শোনার পরে হতাশ না হয়ে বন্ধু আব্দুস সালামকে সঙ্গে নিয়ে রফিকুল একটি সংগঠন গড়ে তোলেন। তার সেই সংগঠন, Mother Language Lovers of the World" এর আদি সহযোদ্ধা ছিলেন যে ন'জন, তারা হলেন:
◆আব্দুস সালাম ( বাংলা)
◆এলবার্ট ভিনজন ও কারমেন ক্রিস্টোবল (ফিলিপিনো)
◆জ্যাসন মনির ও সুসান হজিন্স (ইংরেজি ভাষা)
◆কেলভিন চাও (ক্যান্টোনিজ)
◆রিনাতে মারটেন্স (জার্মান)
◆নাজনীন ইসলাম (কাছি) এবং
◆করুণা জোশি (হিন্দি)
৭০ এর দশকে নিউ ইয়র্ক শহরে কালচারাল
এসোসিয়েশন অফ্ বেংগল প্রতিষ্ঠিত হয়। তার প্রাণপুরুষ তথা প্রতিষ্ঠাতা রণজিত্ রায়।রফিকুল এবং আব্দুস নিউ ইয়র্ক এ গিয়ে ওঁর সংগে বিস্তারিত আলোচনার পর এই পুরো অপারেশন এর মানচিত্র তৈরি করেন যে কিভাবে এগোলে জাতিপুঞ্জ এর কাছ থেকে এই দাবি আদায় করা যাবে।
এসব সংক্রান্ত মিটিং এ কোনও সদস্য-দেশ কে আনুষ্ঠানিক ভাবে প্রস্তাব পেশ করতে হয়।
ওই মিটিং এ বাংলাদেশ সরকার এই প্রস্তাবটি পেশ করে। সেই হিসাবে বাংলাদেশ সরকারও তার ভূমিকা যথাযথ ভাবে পালন করেছে ।
বাংলাদেশ সরকারের এই প্রস্তাবটি একটি খসড়া সিদ্ধান্ত আকারে ২৬শে অক্টোবর, ১৯৯৯ সালে প্রকাশিত হয়। ২৮ টি সদস্য দেশ সমর্থন করে। এর পরে ১২ই নভেম্বর, ১৯৯৯ ইউএন জেনারেল এসেম্বলিতে ওই খসড়া আরেকটু বড় আকারে পেশ করে ইউনেস্কো এর টেকনিক্যাল কমিটি, কমিশন দুই।
এর পাঁচদিন পরে ১৭ই নভেম্বর, ১৯৯৯ ইউএন ঘোষণা করে যে একুশে ফেব্রুয়ারি কে "আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস", হিসেবে পালন করা হবে। ইউনেস্কো প্রস্তাব স্বীকৃতি দেয় ১৯৫২ সালের ২১শে এর ভাষা শহীদদের। ১৮৮ দেশের ৬৫২৮ টি মাতৃভাষার গৌরবের দিন।
অবশ্যই রফিকুল ও রণজিৎ, ঘটনাচক্রে, একজন মুসলিম আর অন্যজন হিন্দু, এই দুই বাঙালির এই অবিস্মরণীয় অবদান কে মনে রাখবো কিন্তু কি করে ভুলে যেতে পারি ওপরের তালিকায় তার সহযোদ্ধাদের? তালিকার শেষ নামটি ছিল এক হিন্দিভাষী যুবকের, করুণা জোশি।
যারা ভাষাকে ভালোবাসতে জানে তাদের কোনও ধর্ম হয় না, জাত হয় না, জাতিও হয় না। ভাষা সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে লড়তে হলেই অন্য ভাষাকে বা সেই ভাষায় কথা বলা মানুষজনকে অপমান করতে হয় না। যে নিজের মাকে সম্মান করতে জানে, সে অন্যের মা কেও সম্মান করতে শিখে যায়।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন