রবিবার, ১০ নভেম্বর, ২০১৯

অসাম্য ~ মধুশ্রী বন্দোপাধ্যায়

পুরানো দিনে ফিরে যেতে ইচ্ছে করে? সত্যি করে? 

ষাট সত্তর দশকে কলকাতা শহরে কটা বাড়িতে ফ্রিজ ছিল? ল্যান্ড লাইন ফোন ছিল? ছিল পাম্পের জল? ক'জনা গিয়েছেন বেসরকারি নার্সিং হোমে চিকিৎসার প্রয়োজনে? কজন বাড়িতে এসি মেশিন চালিয়ে নিদ্রাসুখ উপভোগ করতেন? আর গাড়ি চালিয়ে উইকেন্ড ট্যুরে যেতেন? কজনের বাড়িতে আলাদা একটা ঘর ছিল শুধুমাত্র বসবার প্রয়োজনে? তার সাথে চিন্তা করুন বছরে, দু-বছরে দেশ-বিদেশ ভ্রমণ। 

এগুলো এখন ভারতীয় মধ্যবিত্তর জীবন ধারণের অপরিহার্য অংশ। 

এখন দেশে মধ্যবিত্ত, উচ্চ-মধ্যবিত্ত ফুরফুর করে হাওয়ায় উড়ছে। আছে কিছু অবসর, বাড়িতে আছে ফাঁকা জায়গা, আছে পার্সোনাল স্পেস। এসব কিছু ছিল না তখন। তবু আমরা এত ক্ষুব্ধ কেন? সত্যি কথা বলতে আমাদের ক্ষুব্ধ হবার কোন কারণ নেই। 

আমাদের দেশের মধ্যবিত্তর অবস্থার উন্নতি হয়েছে অত্যন্ত দ্রুত গতিতে, প্রায় উন্নত দেশগুলোর কাছাকাছি। আবার আমরা পিছিয়ে পড়া দেশগুলোর সব সুবিধাও পাই। এই যেমন প্রায় সবার বাড়িতে গড়পড়তা দুজন সাহায্যকারি আছেন। বাড়ির কাজ প্রায় কিছু করতে হয় না।

নয় দশকে যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতাম তখন কোন এক কনফারেন্সে যোগদান করতে গিয়েছিলাম বার্সেলোনাতে। গিয়ে দেখি, ওমা, এ যে শুধু ছেলেদের রাজত্ব। পরে বুঝলাম, পরিবার সন্তান রেখে কনফারেন্স করা তথাকথিত উন্নয়নশীল দেশের নারীর পক্ষে যতটা সুবিধাজনক ততটা নয় উন্নত দেশের মেয়েদের পক্ষে। এতে অবশ্য নেচে উঠবার কিছু নেই। এটা আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় ওদের দেশে তবু আয়ের কিছুটা সমতা আছে, আমাদের নেই। আমরা প্রয়োজনে দু চারটে কাজের লোক রেখে যেতে পারি এদিক-ওদিক।

পৃথিবীতে দারিদ্র্য মোটে কমছে না। আর দুস্তর ব্যবধান হয়ে যাচ্ছে দরিদ্র ও ধনীর মধ্যে। প্রথম ১০% এর ধন বৃদ্ধি পাচ্ছে অতি দ্রুত। আমি আপনি আছি ওই ১০% এ। নিচের ছবিটা দেখুন।  আমাদের দেশের মত অসাম্য আর কোন দেশে এত দ্রুত বাড়ছে না। 

দক্ষিণ এশিয়াতে পৃথিবীর অধিকাংশ দরিদ্র, অশিক্ষিত, অর্ধ শিক্ষিত, রুগ্ন, স্বাস্থ্যহীন, মৃত শিশু, বালিকা বধূ আর যা যা খারাপ ব্যাপার হয়  - সব আছে সবচাইতে বেশি। 

তবে এদের আমরা দেখি না, এরা থাকে অদৃশ্য। এরা অদৃশ্য হতে হতে আমাদের চোখে মিলিয়ে গেছে। এক সময়ে কিন্তু ছিল। দেওয়ালে দেওয়ালে ছিল।

আমাদের গল্প, কথা, মেসেজ ফরওয়ার্ডে, কোথাও এরা নেই। সেখানে আছে রাম মন্দির, হিন্দু মুসলমান, এই সব। 

ওরা যেভাবে চলাতে চান আমরা ঠিক সেই ভাবেই চলি যে। আমাদের নিজেদের নেই কোন কথা, নেই চিন্তা। তাই আমাদেরও ওভাবেই চলতে ভাল লাগে। 

ওই বিশাল দরিদ্র, মূর্খ মানুষের কোন দায় কেউ নেয় না, কেউ নেবে না। 

এই বেশ ভাল আছি। এই বেশ ভাল আছি।

Madhusree Bandyopadhyay
10/11/2019

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন