শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০১৯

শওকত আজমী ~ অরিজিৎ গুহ

শওকত আর কাইফির যখন বিয়ে হয়, তখন শওকতের বয়স খুবই অল্প। সাংসারিক কোনোরকম অভিজ্ঞতাই নেই প্রায় বললেই চলে। স্বামী কাইফি কমিউনিস্ট পার্টির হোল টাইমার। পার্টির দেয় ভাতাতেই চালাতে হত সংসার। পার্টি থেকেই ওদের জন্য একটা কমিউন দেওয়া হয়েছিল যেখানে আরো তিনটে পরিবারের সাথে বোম্বেতে মাথা গোঁজার ঠাই হয়েছিল। 
   কাইফি কমিউনিস্ট পার্টির সদস্যের সাথে সাথেই ছিল প্রোগ্রেসিভ রাইটার্স অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য। আর যুক্ত ছিল আইপিটিএ র সাথে। বাকি যে তিনটে পরিবার ছিল তারাও ছিল আইপিটিএর সদস্য। কাজে কাজেই অরঙ্গাবাদ থেকে আসা কিশোরী শওকতের থিয়েটার আর স্টেজ শো'র প্রতি আগ্রহ বেড়ে ওঠে। নিজেও যুক্ত হতে চায় থিয়েটারের সাথে। আর্থিক অনটনও একটা কারণ ছিল অবশ্য। থিয়েটার করলে কিছু অতিরিক্ত আয় করা যেত। 
   থিয়েটার করতে করতেই জড়িয়ে পড়লেন বোম্বে ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে। আইপিটিএ'র সদস্যপদও ততদিনে নেওয়া হয়ে গেছে শওকতের। সন্তান হওয়ার পর সন্তানের পরিচর্যার সাথে সাথে অভিনয়ও চলতে থাকল। স্বামী কাইফি আজমি ততদিনে কবি হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছেন সাহিত্য সমাজে। সিনেমার গানের লিরিক লিখে রোজগার বাড়তে শুরু করেছে। 
   আস্তে আস্তে একার হাতে সংসার আর ছেলে মেয়ে সামলে অভিনয় জগতে নিজের একটা স্বীকৃতি জোটাতে সক্ষম হলেন শওকত কাইফি বা শওকত আজমি। বোম্বে ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে স্বামীর পরিচয়ও কাজে দিয়েছিল অবশ্য এক্ষেত্রে। আস্তে আস্তে স্বছলতা এলো সংসারে। সেই সময়েই তাঁরা উঠে এলেন জুহুতে।
     
     মেয়ে শাবানাকে অভিনয় জগতে নিয়ে আসার ক্ষেত্রেও বড় ভূমিকা ছিল মায়ের। চারের দশকের শেষদিক থেকে ২০০২ এ কাইফি আজমির মারা যাওয়া অব্দি দুজনের সম্পর্ক শুধুমাত্র দাম্পত্য সম্পর্কই ছিল না। দুজনেই ছিলেন দুজনের কমরেড। 
   সব থেকে কাছের কমরেড ২০০২ এ মারা যাওয়ার ১৭ বছর পর শেষ হল আরেক কমরেডের জার্নি। কিছুক্ষণ আগে মারা গেলেন শওকত কইফি বা শওকত আজমি। আজকের বলিউডের অনেকেই হয়ত এসেছেন ইতিমধ্যে শ্রদ্ধা জানাতে বা আসবেন, কিন্তু তাঁদের অনেকেই সেই আইপিটিএ'র লড়াইয়ের দিনগুলোর কথা জানবেন না।

   কমরেড শওকত আজমি লাল সেলাম।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন