বৃহস্পতিবার, ২৫ জুলাই, ২০১৯

শিক্ষামন্ত্রীর কুভাষা ~ শতাব্দী দাস

আজ মিউচুয়াল ট্রান্সফারের প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে  নজরুল মঞ্চে এক সভায় মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন, 'শিক্ষিকাদের এত স্ত্রী রোগ কেন হয়, তা ভেবে আমি অবাক।' 

তা মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী মহাশয়কে জানানো হোক, নারী-শরীর নিয়ে জন্মালে কিছু নারী-অঙ্গ থাকে। তাদের ঘিরে কিছু ঝঞ্ঝাট থাকে। তাদের মধ্যে প্রধানগুলি হল-

1.Dysmenorrhea ( painful menstruation)
2.Amenorrhea ( absence of period)
3.Polycystic ovarian syndrome (PCOS)
4.Fibroids
5.Endometriosis
6.Pelvic inflammatory disease
7.Vaginitis
8.Menopause
9.Cervical infection
10.Pain during sex
11.Leucorrhea (excess white vaginal discharge)

শখানেক রোগের মধ্যে কয়েকটির মাত্র নাম বললাম। এছাড়া সন্তানধারণ তো আছেই, যাকে একটি স্বাভাবিক প্রাকৃতিক ঘটনা বলা হয়, কিন্তু প্রাকৃতিক হলেও যা আসলে কম ঝক্কির নয়। বরং সিজারিয়ান সেকশন ও প্রাকৃতিক উপায়ে সন্তানের জন্ম, দুটোই আলাদা আলাদা ভাবে ঝুঁকিপূর্ণ। প্রতিমাসের মাসিক সংক্রান্ত হ্যাপাও আছে। 

তাঁকে আরও অবগত করা হোক, অস্টিওপরোসিস,  অস্টিও আর্থারাইটিস, এনিমিয়া  মহিলাদের মধ্যে মহামারীসম। পরবর্তী কথাটা তিনি আরোই বুঝবেন না, তাও তাঁকে বলা হোক, শহুরে, চাকুরীজীবী, তথাকথিত ঘর-বার সামলানো মেয়েদের মধ্যে ডিপ্রেশনও এক কালব্যাধি।

এখনও নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছি না, কিন্তু দ্য ওয়াল-এ প্রকাশিত খবর যদি সত্যি হয় তবে তিনি একথা বলেছেন। এবং সভায় উপস্থিত কিছু মানুষ তাতে হাততালিও দিয়েছেন।  এতটাই  অসংবেদী পিতৃতান্ত্রিক আমাদের মহিলা মুখ্যমন্ত্রীর মন্ত্রক ও মন্ত্রীর তাঁবেদাররা!

মহিলা পাঠকদের কাছে  অনুরোধ, তথাকথিত 'স্ত্রী-রোগ' বিষয়ে আরও মুখর হোন বরং৷ 'স্ত্রী-রোগ' বলে কোনো রোগ হয় না৷ ওটা একটা জেনেরিক নাম।  প্রকাশ্যে একদম খোলাখুলি বলুন, বলতে থাকুন,  আপনি কখন ঠিক কীরকম শারীরিক কষ্টে ভোগেন।  গোপনীয় কিছু তো  নয়!  এই যেমন, মহিলা সহকর্মীর দিকে চোখ না মটকে, সবার সামনে বলুন, 'পিরিয়ডের ব্যথা উঠেছে, কাল মনে হয় আসতে পারব না৷' এইরকম আর কী! আসলে আপনার যে এসব রোগভোগ থাকতে পারে, তা আপনি রেখে দিচ্ছেন এঁদের পঞ্চেন্দ্রিয়-গ্রাহ্যতার বাইরে। আপনাকে শেখানো হয়েছে, এগুলো 'মেয়েলি ব্যাপার', এ নিয়ে শুধু মেয়েদের মধ্যেই আলোচনা চলে। আর দেখুন, এঁরা 'মেয়েলি' রোগ দেখা-শোনায় অভ্যস্ত না হওয়ার ফলে  তাকে প্রায় 'নেই' বানিয়ে দিয়েছেন। 

এর পরেও তাঁকে আমি 'মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী' বলেই সম্বোধন করলাম লেখায়, শুধুমাত্র  নিজের পেশার মান রাখতে৷ শিক্ষক তো আর মন্ত্রীটন্ত্রী নন, যাঁদের দেখে সৎ বাবামা সন্তানকে শেখান, 'অমনটা হোয়ো না।' শিক্ষক কুভাষা প্রয়োগ করলে ছাত্র-ছাত্রী শিখবে কী?

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন