চিত্রশিল্পী ও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী তার নিজস্ব ফেসবুক পেজে আজ লিখেছেন - Tomorrow, on the 20th of May, our Government would complete two years in office.
সংবিধান বিধানসভা নির্বাচনে জয়ী দলকে পাঁচ বছর শাসন চালানোর ছাড়পত্র দিয়েছে। তবুও পশ্চিমবঙ্গের মত রাজ্যে শাসনে অনভিজ্ঞ এই সরকারকে প্রথম দু বছর অতিবাহিত করার জন্য অভিনন্দন জানাতেই হবে। পরাজিত বামফ্রন্ট দীর্ঘ চৌত্রিশ বছর গদিতে থেকে সরকারী অফিসকে প্রায় দলের পার্টি অফিস মতোই বানিয়ে বসেছিল বলে অনেকের অভিযোগ। সেই পার্টিকে বিপুল ভোটে হারিয়ে বর্তমান সরকার গদিতে বসার সময় অনেকেই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছিলেন – যাক বাবা, বাঁচা গেল। এবার শান্তিতে বাঁচা যাবে।
গত দু'বছর তাদের কতজন শান্তিতে বেঁচেছেন, তাদের সংখ্যা বেড়েছে না কমেছে, তার চিত্র আর কিছুদিন পরে পঞ্চায়েত ভোটে জানা যাবে ভোটের মার্জিন থেকে।
পোস্টটির বাকি অংশে ফিরে আসি। আগাগোড়া ইংরাজীতে লেখা পোস্টটিতে মাত্র দুবার মা-মাটি-মানুষের উল্লেখ আছে, আর বাংলায় দুটো রবীন্দ্রনাথের কোটেশন। তার প্রথমটা হচ্ছে "আমার মাথা নত করে দাও হে তোমার চরণধূলার তলে..."। মা-মাটি-মানুষের উদ্দেশেই নিবেদিত রবি ঠাকুরের এই গানের বাণী খুব প্রাসঙ্গিক ও অর্থবহ এখানে। রবিবাবু এই গান ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে সমর্পণ করেছিলেন। ঈশ্বরের প্রতি নিবেদিত প্রার্থনা সর্বসাধারণের প্রতি ব্যবহার করলে একটা অতিভক্তির ব্যাপার (কিসের লক্ষণ যেন এটা?) সহজেই চোখে পড়ে। বিশেষ করে যখন একের পর এক ধর্ষণের মত ঘৃণ্য অভিযোগের উত্তরে কেউ 'চক্রান্ত', 'ষড়যন্ত্র' বা 'সাজানো ঘটনা' বলে উড়িয়ে দেয়। তবে কি এটা সেই মানহারা মানবীদের উদ্দেশ্যে সমর্পিত? খোলসা করে বললে পুলিশ ও বিচারব্যবস্থার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকলের সুবিধে হয়।
দ্বিতীয় কোটেশনটি হচ্ছে "বাংলার মাটি, বাংলার জল, বাংলার বায়ু, বাংলার ফল / পুণ্য হউক, পুণ্য হউক, পুণ্য হউক…"। রবীন্দ্রনাথের এই দুটো লাইন বোঝাই যাচ্ছে অসম্পূর্ণতা দোষে দুষ্ট। বিস্ময়করভাবে এতে বাংলার মা এবং বাংলার মানুষের উল্লেখ নেই। দূরদর্শী কবি বোধহয় জানতেন এমন এক সময় আসবে যখন দৌরাত্ম-নির্ভর বাংলার গদিতে মা আর মানুষের প্রকৃতই অভাব ঘটবে। ওদের পুণ্য হওয়ার বাসনা থেকে তাই তিনি নিজেকে গুটিয়ে রেখেছিলেন।
দু'বার উল্লেখ আছে বিগত চৌত্রিশ বছরের অপশাসনেরও। হতাশ পরিস্থিতি থেকে পরিবর্তনের হাহাকার বর্তমান সরকারকে গদিতে বসিয়েছে। কিন্তু মাথার ওপর করের বোঝা (দু লক্ষ কোটি টাকার), সরকারী শাসনযন্ত্র সকলই বিকল। এই পরিস্থিতি থেকে মাত্র দু বছরে এই সরকার কী দুর্দান্ত ফল ফলিয়েছে তার খতিয়ান দেওয়া আছে এই পোস্টে।
বলা হচ্ছে কৃষি ও কৃষিসংক্রান্ত সেক্টরে, শিল্পে ও সার্ভিসে পশ্চিমবঙ্গের অগ্রগতি ভারতবর্ষের গড় অগ্রগতির দেড়গুণ। এই চার সেক্টরে ভারতের গড় বৃদ্ধি যেখানে ৫%, ১.৮%, ৩.১% ও ৬.৬%, রাজ্য এগিয়েছে সেখানে যথাক্রমে ৭.৬%, ২.৬%, ৬.২% ও ৯.৫% হারে। ফ্যান্টাস্টিক। শিল্পে রাজ্য এগিয়েছে, খুব খুশির কথা। কোন শিল্পে এগিয়েছে, সে প্রশ্ন এখন থাক। অমিত মিত্রের মত গুণী মানুষ যেখানে বসে আছেন, সেখানে ভাল কিছু আশা করা মোটেও অসঙ্গত নয়। গত দু বছরে অমিতবাবুর মুখ দিয়ে কোন কথাই শোনা যায় না, বস্তুত বর্তমান সরকারে তিনি কতখানি গুরুত্ব পান, সে নিয়েই বরং অনেক কথা এদিক ওদিক শুনতে পাওয়া যায়। আগের সরকার কথায় কথায় বলত, বিহারকে দেখুন, আমরা সে তুলনায় কত এগিয়ে। এখন অবশ্য এরা তা আর বলছেন না। বিহার বোধ হয় সব ব্যাপারেই নাক কেটে নিচ্ছে বাঙালীদের।
এ বছরের রাজস্ব আদায় ৩২০০০ কোটি টাকার, গত বছরের তুলনায় যা ৩০% বেশী। এটা নাকি একটা রেকর্ড। তবে এর মধ্যে ২৬০০০ কোটি টাকা কেন্দ্রকে সুদ দিতেই বেরিয়ে গেছে (কেননা আগের সরকার ধার করেছিল), তাই উন্নয়ন খাতে পড়ে আছে তলানিটুকু।
বলা হয়েছে, বছরে ১০০ দিনের আবশ্যিক কর্মসংস্থান প্রকল্পে পশ্চিমবঙ্গ এখন ভারতের এক নম্বর রাজ্য। এই খাতে যা ব্যয় করা হবে ধরা হয়েছিল, সেই বাজেটেরও ৭% অতিরিক্ত (অর্থাৎ বাজেটের ১০৭%) খরচ করা হয়েছে। আগের সরকার খরচ করত বাজেটের মাত্র ১৭-২৩%। সকলেই জানেন, এই খরচ পুরোপুরি সরকারি যন্ত্র দিয়েই খরচ করা হয়। এই বিপুল অর্থরাশি কার পকেটস্থ হয়েছে, কতটা পেয়েছে দুঃস্থ মানুষ, তা খতিয়ে দেখলে অনেক চিত্তাকর্ষক জিনিস জানা যাবে।
রাজ্য এখন বোরো চাষে, যাতে কম জলসেচে চাষ হয়, দেশের এক নম্বরে। চাষীদের ধন্যবাদ দেওয়া হয়েছে। চাষীভাই, অভিনন্দন তোমাকে।
রাজ্যে নাকি কর্মসংস্কৃতির তীব্র উন্নয়ন হয়েছে। বাংলা বন্ধ উঠে গেছে। সারা বছরে কর্মহানির পরিমাণ ৭৮ লক্ষ মানব-দিবস থেকে কমে হয়েছে মাত্র ৫ হাজারে। আপনি আমি সকলেই জানি – এটা একটা ডাহা মিথ্যে। চিত্রশিল্পী নিজে কাজের ফাঁকে ছবি এঁকে যে কর্মহানির উদাহরণ রেখেছেন, তা এই খতিয়ানে উঠে আসেনি। বাংলা বন্ধে অংশগ্রহণকারী স্কুল টীচারদের ওপর মাতব্বরির পরিসংখ্যানও এতে নেই। আগের সরকারের শাসনকালে মুহুর্মুহু বাংলা বন্ধের ডাক কারা দিত, সে সম্বন্ধেও মুখে কুলুপ। মিথ্যে কথা বলা একটা অভ্যাস। যে কোন বিষয়ে একটা মিথ্যে প্রমাণ হলেই অন্যগুলো নিয়ে চর্চা করার খুব প্রয়োজন হয় না। দুধওলা সোমবারে দুধে জল মেশালে মঙ্গলবারেও যে মেশাবে, তাতে আর সন্দেহ কী?
পরিশেষে সমাজের সর্বস্তরে – নারী, শিশু, ছাত্র, কর্মী, চাষী, শ্রমিক, মাইনরিটি সম্প্রদায়, মৎস্যচাষী, শিল্পী, স্বাস্থ্যকর্মী – সকলের উন্নয়নসাধনে রাজ্যসরকার নাকি ব্রতী হয়েছেন। হলেই ভাল।
এই কথাগুলোই লেখা আছে। যা লেখা নেই, তা হল, টাটাকে ঘাড়ধাক্কা দিয়ে বের করে দেওয়ার পর কোন শিল্পসংস্থা পশ্চিমবঙ্গে বিনিয়োগে রাজী নয়। যারা আছে, সুযোগ পেলেই কেটে পড়ার উপক্রম করছে। ভারতের ও বিভিন্ন দেশের শিল্পপ্রতিনিধিদের নিয়ে বেঙ্গল লীড্স্ নামে প্রহসন যে সামগ্রিক রাজ্যবাসীর প্রবল লজ্জার কারণ হয়েছে, তা কহতব্য নয়। ভাষা, প্রাথমিক ভুগোল, ব্যবহারবিধি ইত্যাদি বিষয়ে চূড়ান্ত অজ্ঞ একজনের শীর্ষাসনে বসে থাকা কতটা যুক্তিসঙ্গত, তা নিয়ে ব্যপক সংশয়ের সৃষ্টি হয়েছে শিক্ষিত মহলে। সাম্প্রতিক দুই সুদীপ্ত কাণ্ডে মানবাধিকার লঙ্ঘন ও নেতৃবৃন্দের সামগ্রিক কোরাপশনের চিত্র জনসমক্ষে চলে এসেছে।
স্বাধীনতার সময় থেকেই বাঙালী সর্বভারতীয় স্তরে উচ্চশিক্ষায় সদাসর্বদাই এক অগ্রণী জাতি। সে গরিমা দিন দিন স্থিমিত হয়ে আসছে। তবু আত্মাভিমানী বাঙালী কতদিন তাদের শাসনের গদিতে এমন মানুষকে (মা-মাটির প্রসঙ্গ থাক) রাখবেন, যিনি কার সাথে কেমনভাবে কথা বলতে হয় তাই জানেন না, সেটাই এখন দেখার।
সংবিধান বিধানসভা নির্বাচনে জয়ী দলকে পাঁচ বছর শাসন চালানোর ছাড়পত্র দিয়েছে। তবুও পশ্চিমবঙ্গের মত রাজ্যে শাসনে অনভিজ্ঞ এই সরকারকে প্রথম দু বছর অতিবাহিত করার জন্য অভিনন্দন জানাতেই হবে। পরাজিত বামফ্রন্ট দীর্ঘ চৌত্রিশ বছর গদিতে থেকে সরকারী অফিসকে প্রায় দলের পার্টি অফিস মতোই বানিয়ে বসেছিল বলে অনেকের অভিযোগ। সেই পার্টিকে বিপুল ভোটে হারিয়ে বর্তমান সরকার গদিতে বসার সময় অনেকেই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছিলেন – যাক বাবা, বাঁচা গেল। এবার শান্তিতে বাঁচা যাবে।
গত দু'বছর তাদের কতজন শান্তিতে বেঁচেছেন, তাদের সংখ্যা বেড়েছে না কমেছে, তার চিত্র আর কিছুদিন পরে পঞ্চায়েত ভোটে জানা যাবে ভোটের মার্জিন থেকে।
পোস্টটির বাকি অংশে ফিরে আসি। আগাগোড়া ইংরাজীতে লেখা পোস্টটিতে মাত্র দুবার মা-মাটি-মানুষের উল্লেখ আছে, আর বাংলায় দুটো রবীন্দ্রনাথের কোটেশন। তার প্রথমটা হচ্ছে "আমার মাথা নত করে দাও হে তোমার চরণধূলার তলে..."। মা-মাটি-মানুষের উদ্দেশেই নিবেদিত রবি ঠাকুরের এই গানের বাণী খুব প্রাসঙ্গিক ও অর্থবহ এখানে। রবিবাবু এই গান ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে সমর্পণ করেছিলেন। ঈশ্বরের প্রতি নিবেদিত প্রার্থনা সর্বসাধারণের প্রতি ব্যবহার করলে একটা অতিভক্তির ব্যাপার (কিসের লক্ষণ যেন এটা?) সহজেই চোখে পড়ে। বিশেষ করে যখন একের পর এক ধর্ষণের মত ঘৃণ্য অভিযোগের উত্তরে কেউ 'চক্রান্ত', 'ষড়যন্ত্র' বা 'সাজানো ঘটনা' বলে উড়িয়ে দেয়। তবে কি এটা সেই মানহারা মানবীদের উদ্দেশ্যে সমর্পিত? খোলসা করে বললে পুলিশ ও বিচারব্যবস্থার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকলের সুবিধে হয়।
দ্বিতীয় কোটেশনটি হচ্ছে "বাংলার মাটি, বাংলার জল, বাংলার বায়ু, বাংলার ফল / পুণ্য হউক, পুণ্য হউক, পুণ্য হউক…"। রবীন্দ্রনাথের এই দুটো লাইন বোঝাই যাচ্ছে অসম্পূর্ণতা দোষে দুষ্ট। বিস্ময়করভাবে এতে বাংলার মা এবং বাংলার মানুষের উল্লেখ নেই। দূরদর্শী কবি বোধহয় জানতেন এমন এক সময় আসবে যখন দৌরাত্ম-নির্ভর বাংলার গদিতে মা আর মানুষের প্রকৃতই অভাব ঘটবে। ওদের পুণ্য হওয়ার বাসনা থেকে তাই তিনি নিজেকে গুটিয়ে রেখেছিলেন।
দু'বার উল্লেখ আছে বিগত চৌত্রিশ বছরের অপশাসনেরও। হতাশ পরিস্থিতি থেকে পরিবর্তনের হাহাকার বর্তমান সরকারকে গদিতে বসিয়েছে। কিন্তু মাথার ওপর করের বোঝা (দু লক্ষ কোটি টাকার), সরকারী শাসনযন্ত্র সকলই বিকল। এই পরিস্থিতি থেকে মাত্র দু বছরে এই সরকার কী দুর্দান্ত ফল ফলিয়েছে তার খতিয়ান দেওয়া আছে এই পোস্টে।
বলা হচ্ছে কৃষি ও কৃষিসংক্রান্ত সেক্টরে, শিল্পে ও সার্ভিসে পশ্চিমবঙ্গের অগ্রগতি ভারতবর্ষের গড় অগ্রগতির দেড়গুণ। এই চার সেক্টরে ভারতের গড় বৃদ্ধি যেখানে ৫%, ১.৮%, ৩.১% ও ৬.৬%, রাজ্য এগিয়েছে সেখানে যথাক্রমে ৭.৬%, ২.৬%, ৬.২% ও ৯.৫% হারে। ফ্যান্টাস্টিক। শিল্পে রাজ্য এগিয়েছে, খুব খুশির কথা। কোন শিল্পে এগিয়েছে, সে প্রশ্ন এখন থাক। অমিত মিত্রের মত গুণী মানুষ যেখানে বসে আছেন, সেখানে ভাল কিছু আশা করা মোটেও অসঙ্গত নয়। গত দু বছরে অমিতবাবুর মুখ দিয়ে কোন কথাই শোনা যায় না, বস্তুত বর্তমান সরকারে তিনি কতখানি গুরুত্ব পান, সে নিয়েই বরং অনেক কথা এদিক ওদিক শুনতে পাওয়া যায়। আগের সরকার কথায় কথায় বলত, বিহারকে দেখুন, আমরা সে তুলনায় কত এগিয়ে। এখন অবশ্য এরা তা আর বলছেন না। বিহার বোধ হয় সব ব্যাপারেই নাক কেটে নিচ্ছে বাঙালীদের।
এ বছরের রাজস্ব আদায় ৩২০০০ কোটি টাকার, গত বছরের তুলনায় যা ৩০% বেশী। এটা নাকি একটা রেকর্ড। তবে এর মধ্যে ২৬০০০ কোটি টাকা কেন্দ্রকে সুদ দিতেই বেরিয়ে গেছে (কেননা আগের সরকার ধার করেছিল), তাই উন্নয়ন খাতে পড়ে আছে তলানিটুকু।
বলা হয়েছে, বছরে ১০০ দিনের আবশ্যিক কর্মসংস্থান প্রকল্পে পশ্চিমবঙ্গ এখন ভারতের এক নম্বর রাজ্য। এই খাতে যা ব্যয় করা হবে ধরা হয়েছিল, সেই বাজেটেরও ৭% অতিরিক্ত (অর্থাৎ বাজেটের ১০৭%) খরচ করা হয়েছে। আগের সরকার খরচ করত বাজেটের মাত্র ১৭-২৩%। সকলেই জানেন, এই খরচ পুরোপুরি সরকারি যন্ত্র দিয়েই খরচ করা হয়। এই বিপুল অর্থরাশি কার পকেটস্থ হয়েছে, কতটা পেয়েছে দুঃস্থ মানুষ, তা খতিয়ে দেখলে অনেক চিত্তাকর্ষক জিনিস জানা যাবে।
রাজ্য এখন বোরো চাষে, যাতে কম জলসেচে চাষ হয়, দেশের এক নম্বরে। চাষীদের ধন্যবাদ দেওয়া হয়েছে। চাষীভাই, অভিনন্দন তোমাকে।
রাজ্যে নাকি কর্মসংস্কৃতির তীব্র উন্নয়ন হয়েছে। বাংলা বন্ধ উঠে গেছে। সারা বছরে কর্মহানির পরিমাণ ৭৮ লক্ষ মানব-দিবস থেকে কমে হয়েছে মাত্র ৫ হাজারে। আপনি আমি সকলেই জানি – এটা একটা ডাহা মিথ্যে। চিত্রশিল্পী নিজে কাজের ফাঁকে ছবি এঁকে যে কর্মহানির উদাহরণ রেখেছেন, তা এই খতিয়ানে উঠে আসেনি। বাংলা বন্ধে অংশগ্রহণকারী স্কুল টীচারদের ওপর মাতব্বরির পরিসংখ্যানও এতে নেই। আগের সরকারের শাসনকালে মুহুর্মুহু বাংলা বন্ধের ডাক কারা দিত, সে সম্বন্ধেও মুখে কুলুপ। মিথ্যে কথা বলা একটা অভ্যাস। যে কোন বিষয়ে একটা মিথ্যে প্রমাণ হলেই অন্যগুলো নিয়ে চর্চা করার খুব প্রয়োজন হয় না। দুধওলা সোমবারে দুধে জল মেশালে মঙ্গলবারেও যে মেশাবে, তাতে আর সন্দেহ কী?
পরিশেষে সমাজের সর্বস্তরে – নারী, শিশু, ছাত্র, কর্মী, চাষী, শ্রমিক, মাইনরিটি সম্প্রদায়, মৎস্যচাষী, শিল্পী, স্বাস্থ্যকর্মী – সকলের উন্নয়নসাধনে রাজ্যসরকার নাকি ব্রতী হয়েছেন। হলেই ভাল।
এই কথাগুলোই লেখা আছে। যা লেখা নেই, তা হল, টাটাকে ঘাড়ধাক্কা দিয়ে বের করে দেওয়ার পর কোন শিল্পসংস্থা পশ্চিমবঙ্গে বিনিয়োগে রাজী নয়। যারা আছে, সুযোগ পেলেই কেটে পড়ার উপক্রম করছে। ভারতের ও বিভিন্ন দেশের শিল্পপ্রতিনিধিদের নিয়ে বেঙ্গল লীড্স্ নামে প্রহসন যে সামগ্রিক রাজ্যবাসীর প্রবল লজ্জার কারণ হয়েছে, তা কহতব্য নয়। ভাষা, প্রাথমিক ভুগোল, ব্যবহারবিধি ইত্যাদি বিষয়ে চূড়ান্ত অজ্ঞ একজনের শীর্ষাসনে বসে থাকা কতটা যুক্তিসঙ্গত, তা নিয়ে ব্যপক সংশয়ের সৃষ্টি হয়েছে শিক্ষিত মহলে। সাম্প্রতিক দুই সুদীপ্ত কাণ্ডে মানবাধিকার লঙ্ঘন ও নেতৃবৃন্দের সামগ্রিক কোরাপশনের চিত্র জনসমক্ষে চলে এসেছে।
স্বাধীনতার সময় থেকেই বাঙালী সর্বভারতীয় স্তরে উচ্চশিক্ষায় সদাসর্বদাই এক অগ্রণী জাতি। সে গরিমা দিন দিন স্থিমিত হয়ে আসছে। তবু আত্মাভিমানী বাঙালী কতদিন তাদের শাসনের গদিতে এমন মানুষকে (মা-মাটির প্রসঙ্গ থাক) রাখবেন, যিনি কার সাথে কেমনভাবে কথা বলতে হয় তাই জানেন না, সেটাই এখন দেখার।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন