রবিবার, ১০ জুলাই, ২০২২

বুক রিভিউ ~ ডাঃ সমুদ্র সেনগুপ্ত

বুক রিভিউ
বই এর নাম: লুই নেপোলিয়নের অষ্টাদশ ব্রুমেয়ার
লেখক: কার্ল মার্ক্স 

এই বই এর রিভিউটা উল্টো ভাবে শুরু করা যাক, প্রথমে টীকা তারপরে টিপ্পনী, তারও পরে সময় থাকলে রিভিউ। 

টীকা নম্বর এক: ফরাসি বিপ্লবের সময় একটা ক্যালেন্ডার তৈরি করা হয়েছিল যেটা ফ্রেঞ্চ রিপাবলিকান ক্যালেন্ডার নামে পরিচিত। ১৭৯৩ থেকে ১৮০৫ সাল অবধি এই বারো বছর আর পরের দিকে ১৮৭১ সালের পারি কমিউনের সময় ১৮ দিন ধরে এই ক্যালেন্ডার টি ব্যবহার করা হয়েছিল।সব রকমের ধর্মীয় ও রাজতান্ত্রিক প্রভাব মুক্ত একটা ক্যালেন্ডার তৈরির তাগিদ থেকে এর আবির্ভাব। এছাড়াও দশমিক পদ্ধতির প্রচলনও ছিল আরেকটা উদ্দেশ্য। এই ক্যালেন্ডার এর দ্বিতীয় মাসটি "ব্রুমেয়ার" নামে পরিচিত, শব্দটি এসেছে ব্রুমে বা কুয়াশা থেকে (বছরের ওই সময়টা ফ্রান্সে প্রচুর কুয়াশা হয় বলে); মোটামুটি ২২/২৪সে অক্টোবর থেকে একমাস। 

টীকা নম্বর দুই: ১৭৯৯ সালের ৯ নভেম্বর যে প্রাসাদ ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে জেনারেল নেপোলিয়ন বোনাপার্ট ক্ষমতায় আসেন গভর্নমেন্ট অফ ডিরেকটরী কে সরিয়ে কনস্যুলেট স্থাপন করেন সেই তারিখটি ছিল ওই ক্যালেন্ডার অনুযায়ী অষ্টম বছরের ব্রূমেয়ার মাসের ১৮ তারিখ। এর অনেক পরে ১৮৫১ সালে আরেকটি প্রাসাদ ষড়যন্ত্র এর মাধ্যমে ওই নেপোলিয়ন এর ভাইপো ল্লুই নেপোলিয়ন এর ক্ষমতা দখলকে বর্ণনা করতে গিয়ে কার্ল মার্ক্স সেই আঠেরই ব্রূমেয়ারের প্রসঙ্গ টেনে আনেন এবং একটি পুস্তিকা রচনা করেন ওই নামে যেটি ১৮৫২ সালে প্রকাশিত হয়। 

টিপ্পনী নম্বর এক: পুস্তিকাটির এক্কেবারে গোড়াতেই মার্ক্স বলছেন যে, " হেগেল কোথাও একটা মন্তব্য করেছিলেন যে পৃথিবীর সব মহান ঐতিহাসিক ঘটনা আর চরিত্রগুলি বলতে গেলে দু'বার করে আমাদের সামনে হাজির হয়। উনি এটা যোগ করতে ভুলে গেছিলেন যে প্রথম বার ওটা হয় বিয়োগান্তক নাটক হিসেবে আর দ্বিতীয় বার ওটা আসে প্রহসন হিসেবে।" এই লাইনটি পরবর্তীকালে একটি জগৎ বিখ্যাত কোটেশন হিসেবে পরিচিত হয়ে যায়। 

এই অবধি লিখতে গিয়েই লেখাটা অনেক দীর্ঘ হয়ে গেল তাই বইটার রিভিউ আরেক দিন হবে খন। আজ কেবল দ্বিতীয় টিপ্পনীটা দিয়েই শেষ করা যাক।

টিপ্পনী নম্বর দুই: ইতিহাসের পাতায় ব্যক্তিমানুষের কি ভূমিকা সেটা বিশ্লেষণ করতে গিয়ে এই বইতে মার্ক্স যা বলেছিলেন সেটি পরবর্তীকালে একটি জগৎ বিখ্যাত কোটেশন হিসেবে পরিচিত হয়। ইংরেজি অনুবাদ দে কথা গুলো এই রকম: "Men make their own history, but they do not make it as they please; they do not make it under self-selected circumstances, but under circumstances existing already, given and transmitted from the past."

প্রথম লাইনটার কেবল বাংলা অনুবাদ করলে দাঁড়ায়, "জনগনই তাদের ইতিহাস রচনা করে।" চেনা চেনা লাগছে ? লাগবার কথা। লাল ঝান্ডা দিয়ে সাজানো ব্রিগেডের মাঠে জড়ো হওয়া বারুইপুরের পেয়ারা চাষী, বলাগড়ের মাঝি, ব্যারাকপুরের মজুর, সবাই শুনছে এই কথাগুলো সেই উঁচু মাচায় বসে থাকা ধুতি পাঞ্জাবি পাম্প শু পরা রোগা পাতলা চেহারার একজন বক্তা'র মুখ থেকে। সেই বক্তা কোনোদিন ঘাড়ে ধরে বুঝিয়ে দেন নি যে তিনি মার্ক্স এর এই আঠেরো ব্রুমেয়ার থেকে অনায়াসে কোট করে যাচ্ছেন, অথচ কি অদ্ভুত সাবলীল ভাবে জনগণের মধ্যে নিমেষে ছড়িয়ে দিয়ে যাচ্ছেন সেই মহান জার্মান দার্শনিক বিপ্লবীর বাণী। এর নাম নেতা, শিক্ষক, গুরু। তত্বকথাটি পড়ে, শিখে, আত্মস্থ করে জনগণের মধ্যে নিয়ে যাওয়া যার কাজ। সেই বক্তা'র পরিচয় দিতে হলে বৃথাই আপনি আমার দেয়ালে এসেছেন। 

(তথ্যঋণ: অজয় দাশগুপ্ত দা)

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন