বৃহস্পতিবার, ২৬ জানুয়ারী, ২০২৩

ডাঃ দিলীপ মহলানবীশ ~ ডাঃ কৌশিক লাহিড়ী

-আপনার কাছে প্রশান্ত মহলানবীশের ফোন নাম্বার আছে?

রাত ন'টার একটু পর একটি চ্যানেল থেকে ফোন এলো।

একটা সামাজিক অনুষ্ঠানে ছিলাম । 
আচমকা এই প্রশ্নে বিলকুল ভেবড়ে গেলাম !
কি উত্তর দেব ভেবে পেলাম না !
চেনা নাম্বার !

ভিড় ঠেলে একটু ফাঁকায় এসে জিজ্ঞেস করলাম,

-প্রশান্ত মহলানবীশ?

-হ্যাঁ স্যার !

-মানে স্ট্যাটিস্টিশিয়ান প্রশান্ত চন্দ্র মহলানবীশ!

-হ্যাঁ স্যার ! উনি পদ্মবিভূষণ পাচ্ছেন তো !

-কিন্তু উনি তো বছর পঞ্চাশ আগে মারা গেছেন ! আর খুব যদি ভুল না করি বেঁচে থাকতেই পদ্মবিভূষণ পেয়েই l কিন্তু ওঁর নাম্বার তো...

-মারা গেছেন ! ওঃ হো !
ও প্রান্তে একরাশ হতাশা।

-তাহলে ওঁর কোনো আত্মীয়র নাম্বার...

আমি সত্যিই এক দম্পতিকে চিনি যাঁরা প্রশান্ত মহলানবীশের দূর সম্পর্কের আত্মীয়, কিন্তু সেটা তো এই চ্যানেলের জানবার কথা নয় !

-না আমি ওঁদের কাউকে চিনি না !
শুকনো গলায় বললাম।

-কিন্তু কিছুদিন আগে ওনাকে নিয়ে আপনি লিখলেন যে ফেসবুকে !

এই বার পরিষ্কার হলো ব্যাপারটা !

-ডাঃ দিলীপ মহলানবীশের কথা বলছো ? যিনি ও আর এস এর আবিষ্কর্তা ?

-হ্যাঁ, হ্যাঁ ! উনিই, উনিই ! ওঁর কোনো ফোন নাম্বার!

-কিন্তু উনিও তো নেই ! গতবছর চলে গেছেন পুজোর পরে ! ফোন নাম্বার জোগাড় করাই যায়, কিন্তু সে নাম্বার নিয়েই বা আর কি করবে ? 
ওঁর স্ত্রীও তো মারা গেছেন !

-না মানে, আসলে, এই মাত্র অফিসে লিস্টটা এলো তো ! 
উনি এবার পদ্মবিভূষণ পাচ্ছেন !

মসিয়েঁ ভের্দু তে অঁরি ভের্দুর মুখ দিয়ে চ্যাপলিন বলেছিলেন "One murder makes a villain, millions a hero. Numbers sanctify"
অর্থাৎ "একটি মানুষকে মারলে খলনায়ক, লক্ষ মানুষকে মারলে নায়ক ! সংখ্যাই পবিত্র করে !"
সংখ্যাই পাপ ধুয়ে তাকে মহান করে !

আর কেউ যদি মানুষ না মেরে, মানুষকে বাঁচান  !
আর সংখ্যাতত্ত্বের হিসেবে সেই বাঁচানোর পরিমাপটা যদি এক জন-দুজন বা শত-সহস্র মানুষ  না হয়ে কোটি তে পৌঁছয় ?
তাহলেও কি তিনি নায়ক হয়ে যান না !

উত্তরটা হল "না" !

ডাঃ  দিলীপ মহলানবীশ ।

এই মানুষটাকে প্রায় কেউই চিনতেন না !
চেনা তো দূরের কথা, বেঁচে থাকতে নাম ও শোনেন নি প্রায় কেউই !

অথচ তাঁর আবিষ্কারের ফলে গত পঞ্চাশ বছরে প্রাণ বেঁচেছে বিশ্বজুড়ে কোটি কোটি মানুষের !
হ্যাঁ !
কোটি কোটি মানুষের !

ওরাল রিহাইড্রেশন সল্ট বা ORS তাঁরই আবিষ্কার যে !

তাঁকে নিয়েও হাসাহাসি হয়েছে! গালিভারদের নিয়ে লিলিপুটরা যে হাসি হেসে থাকে ! 

না বুঝে, অবিশ্বাসের হাসি ! 
অথবা বুঝেও ঈর্ষার হাসি !

আমাদের শহরেই থাকতেন !
আমাদের রাজ্যেই !
আমাদের দেশেই !

আমরা চিনতাম না !

অন্তত দুটো  নোবেল পাওয়া উচিৎ ছিল !
চিকিৎসাশাস্ত্রে আর শান্তির জন্য !

বেঁচে থাকতে আমরা তাঁকে চিনতাম না !
কোনো শ্রী বা ভূষণের যোগ্য মনে করি নি !

কারণ পুরস্কার পেতে হলে সুপারিশ লাগে ! মনোনয়ন লাগে !

মানুষটি সেসব জোগাড় করতে উৎসাহী ছিলেন না।

ডাঃ দিলীপ মহলানবীশ কাল পদ্মবিভূষণ হবেন।

লিখেছেন Koushik Lahiri

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন