সোমবার, ৯ আগস্ট, ২০২১

বিজয় রাঙ্খলের জোটসঙ্গী তৃণমূল এখন বিপ্লব দেবদের অক্সিজেন ~ সুদীপ্ত বসু

আগরতলায় চিলড্রেন্স পার্কের কাছে অফিস খুলেছিল তৃণমূল।

২০১৭ সালের ১০ জুলাই সেই অফিসের সাইনবোর্ড নামিয়ে ফেলা হয়, খুলে ফেলা হয় মমতা ব্যানার্জির ছবিও।খুলে ফেলে তৃণমূলীরাই...

সাইনবোর্ডটুকুও নামিয়ে ফেলার আগে অন্য দল থেকে ভাঙিয়ে আনা ছয় তৃনমূল বিধায়কই বেমালুম যোগ দেয় বিজেপিতে। সুদীপ রায়বর্মণের নেতৃত্বে ছয় বিধায়কই ফের একবার প্রদুনোভা ভোল্টে ডিগবাজি খেয়ে বি জে পি-তে ঢুকে পড়েছিল, তখন ২০১৭..

২০১৬সালে এ'রাজ্যে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়েই সরকার গড়ে তৃণমূল। বিধানসভা ভোটে জেতার পরেই প্রথম কয়েকমাস 'সর্বভারতীয় দল'এর হ্যাংওভার থাকে...

তখন ত্রিপুরায় বামফ্রন্ট সরকার..ফলে টার্গেট ত্রিপুরা...যদিও গোটা ছয় বিধায়কই ততক্ষনে বিজেপিতে ঢুকে গেছে...কংগ্রেস থেকে বি জে পি-তে যাওয়ার জন্য ত্রিপুরায় তৃণমূল কংগ্রেস হয়ে উঠেছিল ওয়েটিং লাউঞ্জ!

যাই হোক, এরপর ২০১৭ থেকে ফের সলতে পাকানো শুরু। লক্ষ্য ছিল ১৮ সালের ভোটে বামফ্রন্ট সরকারকে হটানো। ভালো কথা!

তো এদিক ওদিক থেকে কয়েকজনকে জড়ো করে, টাকা দিয়ে ভাড়া করে শুরু হলো অভিযান। দায়িত্ব পেলেন তৎকালীন তৃণমূল বিধায়ক সব্যসাচী দত্ত, এখন পশ্চিমবঙ্গের বিজেপির রাজ্য নেতা।

সেই ভোটে বিজেপি জোট বাঁধে 'তুইপ্রাল্যান্ড'-র দাবি তোলা আই পি এফ টির সঙ্গে।

আর মমতা ব্যানার্জির তৃণমূল জোট সঙ্গী হয় আই এন পি টি!

 আই এন পি টি-র নেতার নাম বিজয় রাঙ্খল...

কে বিজয় রাঙ্খল? ত্রিপুরার তো বটেই, স্বাধীনোত্তর ভারতে হিংসার কোনও ইতিবৃত্ত লেখা হলে বিজয় রাঙ্খলের নাম থাকবে প্রথম দিকেই । রক্তের বন্যায় 'বাঙালী খেদাও', 'স্বাধীন ত্রিপুরার' অভিযান তারই হাত ধরে শুরু হয়েছিল। বিজয় রাঙ্খলের উগ্র নেতৃত্বে সেই ত্রাসের দিনগুলিতে শুধু মান্দাইয়ে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের হামলায় ১৯৭৮ সাল থেকে  প্রায় ১৬৪জন খুন হয়েছেন। সিপিআই(এম)র বিধায়ক কালিদাস দেববর্মা, এ ডি সি সদস্য শচীন্দ্র দেববর্মাও রয়েছেন সেই তালিকায়। রক্তাক্ত সেই ইতিহাস।

স্বাভাবিক ভাবেই তাই তখন তৃণমূলের মসৃনতম জোটসঙ্গী আইএনপিটি!পৃথক রাজ্যের আশা আইএনপিটি'র ও  ছিল।

যারা এখন ত্রিপুরা 'বিট' করছেন সেই সাংবাদিকদেরও জেনে রাখা ভালো। ইতিহাস খুবই গুরুত্বপূর্ণ সাংবাদিকতায়।

ত্রিপুরায় গত তিন বছরে বামপন্থী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের হাজার হাজার  নেতা, কর্মী, সমর্থকের ওপর শারীরিক আক্রমণ ছাড়াও, বাড়িঘর-দোকানপাট লুট, ভাঙচুর, আগুন দেওয়া, অর্থনৈতিকভাবে পঙ্গু করতে রাবার বাগান, সবজি বাগান ধ্বংস করা, পুকুর থেকে মাছ লুটপাট এবং বিষ মেশানো, গৃহপালিত পশু-পাখি লুট করা, গাড়ি ভাঙচুর, তোলবাজি, জরিমানা আদায়, হুলিয়া জারি করে গৃহবন্দি করে রাখা, গ্রামে একঘর করে রাখা, বিভিন্ন স্কিমে নিযুক্ত কর্মীদের জবরদস্তি ছাঁটাই, রেগা, টুয়েপ ইত্যাদি কাজ থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। সশস্ত্র দুর্বৃত্তবাহিনী রাজ্যের প্রতিটি মহকুমায় সি পি আই (এম) এবং বামফ্রন্ট শরিকদল ও গণতান্ত্রিক সংগঠনগুলোর প্রচুর অফিস ভেঙে আগুনে পুড়িয়েছে, দখল করেছে। ৩০-৪০ বছর আগে খাস জমিতে গড়ে ওঠা সি পি আই (এম) এবং বিভিন্ন গণসংগঠনের অফিস বুলডোজার দিয়ে ভেঙে গুঁ‍‌ড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। প্রাক্তন মুখ্যমন্রীরের ওপরেও হামলা হয়েছে। মিথ্যা মামলা, পার্টি অফিসে অস্ত্র রয়েছে বলে গুজব ছড়িয়ে হামলা চালানো, পার্টি অফিস বন্ধ করে দেওয়া ,স্থানীয় নির্বাচনগুলিতে মনোননয় পেশেও বাধা, প্রার্থীদেরই অপহরণ করা, ভোট লুট কোন কিচ্ছু বাদ রাখেনি বিজেপি...

বিজেপির দুষ্কৃতীবাহিনী ভেঙে চুরমার করেছে কার্ল মার্কস, ভি আই লেনিন, চে গুয়েভারা, দশরথ দেব, বৈদ্যনাথ মজুমদারের প্রতিমূর্তি এবং অসংখ্য শহীদবেদী। মার্কসের জন্মদিন উদ্‌যাপন, মে দিবস উদ্‌যাপন, নভেম্বর বিপ্লব বার্ষিকী উদ্‌যাপনেও বাধা দিয়েছে। মে দিবসকে সরকারি ছুটির তালিকা থেকে বাদ দিয়েছে।নারী নির্যাতন, ধর্ষণ, শ্লীলতাহানির একের পর এক ঘটনা, সরকার অপরাধীদের পাশে...

আচ্ছা বলুন তো ওপরের বর্ণনা করা সিপিআই(এম)র ওপর বিজেপি'র সন্ত্রাসের অভিযানের সঙ্গে এরাজ্যে বামপন্থীদের ওপর তৃণমূলী হামলার কোন ফারাক রয়েছে? সন্ত্রাসের পদ্ধতি, কৌশল সবই প্রায় এক...

এখানেও ২০১১ তে ভোটের জেতার পরেই গড়বেতায়, যাদবপুরে লেননি মুর্তি ভাঙা, হাওড়ায় জ্যোতি বসুর আবক্ষ মূর্তিতে কালি লেপে দেওয়া সব সবই তো হয়েছে..বরং আরো বেশি করে...গত দশ বছরে এরাজ্যে  শহীদের সংখ্যা ২৭০...মিথ্যা,মামলা, ঘরছাড়া করা, ভোট লুট এসব আর নাই বা লিখলাম।

আচ্ছা, আজ পর্যন্ত গত তিনবছরে এ'বাংলার কোন মিডিয়ায় টানা পাঁচ মিনিট এমন কোন খবর কভার করা হয়েছে যে বিজেপির হাতে সিপিআই(এম) আক্রান্ত ত্রিপুরায়..হয়নি...বরং  বিজেপির আক্রমনের পরে লেখা হয়েছে, ত্রিপুরাতেও 'সিপিএমের সংগঠনের দৈন্যদশা'/ ' জনগন থেকে বিচ্ছিন্ন সিপিএম, প্রতিরোধের আহ্বান দিলেও সাড়া মিলছে না' ইত্যাদি...

খবরের ভাষা আবার বদলে গেলো গত কয়েক সপ্তাহে...

যাই হোক....

এবার গোটা দল সহ বিজেপিতে ভিড়ে যাওয়া নয়, কৌশল বদলানো হয়েছে...

লাফালাফি করে বিজেপি বিরোধী ভোট ভাঙো, বামপন্থীদের দূর্বল করার চেষ্টা চালাও...প্রতিষ্ঠান বিরোধী ভোট ভাগে সুযোগে সরকারের থাকবে বিজেপি, বিরোধী দলে ভাইপোর বাহিনী..এদিকে পশ্চিমবঙ্গে আবার বিরোধী দলে শুভেন্দু...

আহা!

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন