জন্তুটার রকম-সকম দেখে আমার ভারি অদ্ভুত লাগল। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, "তুমি কী? তোমার নাম কী?"
সে খানিকক্ষণ ভেবে বলল, "আমার নাম ভক্ত। আমার নাম ভক্ত, আমার ভায়ের নাম ভক্ত, আমার বাবার নাম ভক্ত, আমার পিসের নাম ভক্ত—"
আমি বললাম, "তার চেয়ে সোজা বললেই হয় তোমার গুষ্টিসুদ্ধ সবাই ভক্ত।"
সে আবার খানিক ভেবে বলল, "তা তো নয়, আমার নাম বিদ্যাসাগর কলেজের ছাত্র! আমার মামার নাম বিদ্যাসাগর কলেজের ছাত্র, আমার খুড়োর নাম বিদ্যাসাগর কলেজের ছাত্র, আমার মেসোর নাম বিদ্যাসাগর কলেজের ছাত্র, আমার শ্বশুরের নাম বিদ্যাসাগর কলেজের ছাত্র—"
আমি ধমক দিয়ে বললাম, "সত্যি বলছ? না, বানিয়ে?"
জন্তুটা কেমন থতমত খেয়ে বলল, "না, না, আমার শ্বশুরের নাম ক্ষুদ্র কৃষক পরিবারের ছেলে।"
কাট টু
শেয়াল বলল, "হাসছ কেন?"
হিজিবিজবিজ বলল, "একজনকে শিখিয়ে দিয়েছিল, তুই সাক্ষী দিবি যে, দেশদ্রোহীর বড় বড় দাড়ি, দেশদ্রোহী ঠিক বানানে লেখে, দেশদ্রোহীর গায়ে বেগুনি রঙ থাকে না। উকিল যেই তাকে জিজ্ঞাসা করেছে, তুমি লালকেল্লা চেনো? অমনি সে বলে উঠেছে, আজ্ঞে হ্যাঁ, লালকেল্লার বড় বড় দাড়ি, লালকেল্লা ঠিক বানানে লেখে, লালকেল্লা লাল হয়, বেগুনি রঙের নয়—হোঃ হোঃ হোঃ হো—"
শেয়াল জিজ্ঞাসা করল, "তুমি মোকদ্দমার বিষয়ে কিছু জানো? কৃষকদের চেনো?"
হিজিবিজবিজ বলল, "তা আর জানি নে? আমি নিজেই ক্ষুদ্র কৃষক পরিবারের ছেলে। আমরা এতটাই গরিব, ট্র্যাক্টর তো দূর, বলদ ছিল না বলে আমাকে দিয়েই চাষ করানো হত। তারপর থেকেই আমার মাথায় বলদের মত বুদ্ধি। আমি একাধারে ক্ষুদ্র কৃষক পরিবারের ছাত্র, বিদ্যাসাগর কলেজের ছেলে, লালকেল্লার অতিথি এবং ভিক্টোরিয়ার প্রত্যক্ষদর্শী। আমি নিজে চোখে দেখেছি কৃষক পরিবারে মূর্তি ভাঙার ঘটনা। এও জানি, বিদ্যাসাগর কলেজে কোনওরকম শ্লোগান ওঠেনি।"
শেয়াল বলল, বটে? তোমার নাম কী শুনি?"
সে বলল, "এখন আমার নাম হিজিবিজবিজ।"
শেয়াল বলল, "নামের আবার এখন আর তখন কী? হিজি বিজ্ বিজ্ বলল, "তাও জানো না? এখন আমার নাম ভক্ত, ভোটের পরেই আমার নাম হয়ে যাবে কর্মহীন, অথবা অ-নাগরিক, অথবা দেশদ্রোহী।" বলে জন্তুটা ভয়ানক ফ্যাকফ্যাক করে হাসতে লাগল।
[সুকুমার রায়ের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিয়ে...]
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন