বৃহস্পতিবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২০

আকাশবাণী ও মহিষাসুরমর্দিনী ~ সোহম চন্দ্র

"Mr. Mullick, Your Mahishasura-mardini will be on the air again from the next Mahalaya!"

দিনটা ছিল ১৯৭৭ সালের ২৬শে অগাস্ট। এই রাজ্যে বামফ্রন্ট সরকার গঠন করেছে সবে মাত্র দু'মাস হয়েছে। অল ইন্ডিয়া রেডিও বা আকাশবাণীর কলকাতা বেতারকেন্দ্রের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে সেইদিন রবীন্দ্র সদনের প্রেক্ষাগৃহ কানায় কানায় পূর্ণ। মঞ্চে আসীন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু; তাঁরই পাশে উপস্থিত, তৎকালীন কেন্দ্রীয় তথ্য ও বেতারমন্ত্রী লালকৃষ্ণ আডবাণীর মুখে হঠাৎই শোনা গেল এই ঘোষণা। লক্ষ্য ছিলেন একই মঞ্চে সেই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে থাকা ভারতীয় সঙ্গীত, সিনেমা ও বেতারজগতের কিংবদন্তী পঙ্কজ কুমার মল্লিক। পরক্ষণেই হাততালি ও উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়লো গোটা রবীন্দ্র সদন!...

কিন্তু প্রতি বছর মহালয়ার ভোরে মহিষাসুরমর্দিনী শোনা তো বঙ্গজীবনের অঙ্গ, তাহলে কেনই বা এই ঘোষণা আর কিসেরই বা এত উত্তেজনা? সম্পূর্ণটা বুঝতে গেলে আমাদের শুরু করতে হবে আরো পঞ্চাশ বছর পিছিয়ে গিয়ে, কলকাতা বেতারের জন্মলগ্ন থেকে...

১৯২২য়ে ইন্ডিয়ান স্টেটস অ্যান্ড ইস্টার্ন এজেন্সি লিমিটেড নামক একটি বেসরকারী সংস্থা প্রথম ঔপনিবেশিক ভারতের ব্রিটিশ সরকারকে প্রস্তাব দেয় দেশজুড়ে বেতার সম্প্রচার ব্যবস্থা চালু করার জন্য। কয়েক মাস বাদে দিল্লীতে বৈঠকের পর মেলে অনুমতি। ১৯২৩য়ের নভেম্বর মাসে বেঙ্গল রেডিও ক্লাব ও মার্কনি কোম্পানির যৌথ উদ্যোগে কলকাতা থেকে শুরু হয় বেতার সম্প্রচার যদিও ট্রান্সমিশন ছিল অত্যন্ত দুর্বল, রেডিও তরঙ্গের বিস্তার সীমাবদ্ধ থাকতো অনধিক পাঁচ মাইল ব্যাসার্ধের মধ্যেই। মার্কনি কোম্পানির বেতার অফিস ছিল হাইকোর্টের উল্টোদিকে টেম্পল চেম্বারে, মুখ্য অধিকর্তা ছিলেন জন রাউজ স্টেপলটন। তবে সাহেব একা নন, ওনার সাথে ছিলেন আরো দুই বাঙালী; হীরেন্দ্রকুমার বসু ও বীরেন রায়। প্রথম জন সেই যুগের বিখ্যাত সুরকার ও গীতিকার এবং দ্বিতীয় জন হলেন প্রথম বাঙালী পাইলট! ১৯২৭য়ে এই কলকাতা বেতারকেন্দ্রটি অধিগ্রহণ করে বেসরকারী সংস্থা ইন্ডিয়ান ব্রডকাস্টিং কোম্পানি এবং সেই বছরেরই ২৬শে অগাস্ট থেকে ১ নং গার্স্টিন প্লেসের বিখ্যাত বাড়িতে যাত্রা শুরু করে ক্যালকাটা রেডিও স্টেশন। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত টিকে থাকতে পারেনি সংস্থাটি। উপযুক্ত মূলধনের অভাবে চরম আর্থিক সংকটে পড়ে ইন্ডিয়ান ব্রডকাস্টিং কোম্পানি বা আইবিসি। ব্রিটিশ সরকার অবধি নাকচ করে দেয় আর্থিক সহায়তার অনুরোধ। অবশেষে প্রায় দু'লক্ষ টাকার ক্ষতি স্বীকার করে তিন বছরের মধ্যেই ব্যবসা গোটাতে বাধ্য হয় এই ব্রডকাস্টার। এরপর বেতার শিল্পের সাথে যুক্ত বিভিন্ন ব্যবসায়ী ও সমাজের বিভিন্ন স্তরের বেতার উৎসাহী মানুষের দাবী মেনে সরকার অধিগ্রহণ করে সংস্থাটি; ১লা এপ্রিল, ১৯৩০ থেকে নতুন মালিক হয় ইন্ডিয়ান স্টেট ব্রডকাস্টিং সার্ভিস, কলকাতার স্টেশন ডিরেক্টর হিসেবে বহাল থাকেন স্টেপলটনই। আরো ৬ বছর বাদে ভারতীয় বেতার সংস্থা পরিচিত হয় অল ইন্ডিয়া রেডিও নামে। ততদিনে কলকাতা বেতারের সাথে যুক্ত হয়েছেন বাণীকুমার, পঙ্কজকুমার মল্লিক, বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র ও রাইচাঁদ বড়াল এবং জন্ম হয়েছে ভারতীয় বেতারের ইতিহাসে অন্যতম জনপ্রিয় অনুষ্ঠান 'মহিষাসুরমর্দিনী'র। 

কৃত্তিবাসী রামায়ণের হাত ধরে বঙ্গদেশে শারদীয়া দুর্গাপুজোর পরিচয় অকালবোধন নামেই। অতএব ঠিক সময়ের বোধন হল বসন্তকালের দুর্গাপুজো যেখানে দেবীর অর্চনা হয় বাসন্তী ও অন্নপূর্ণা রূপে, চৈত্র মাসে। মজার ব্যাপার হল, আমাদের মহিষাসুরমর্দিনী গীতি-আলেখ্যর জন্ম কিন্তু চৈত্র মাসেই। ১৯৩২ সালে, কলকাতা বেতার বিভাগের পক্ষ থেকে পরিকল্পনা করা হয় একটি বিশেষ প্রভাতী অনুষ্ঠানের যেটি প্রচারিত হবে সেই বছরের বাসন্তী বা অন্নপূর্ণা পুজো উপলক্ষ্যে। বঙ্গাব্দের হিসেবে সালটা ছিল ১৩৩৮। চৈত্র মাসের শুক্লপক্ষের সপ্তমী তিথিতে হয় বাসন্তী পুজো ও অষ্টমী তিথিতে হয় অন্নপূর্ণা পুজো। ১৩৩৮ বঙ্গাব্দও তার ব্যতিক্রম ছিল না। অষ্টমী তিথির ভোরে বাসন্তী ও অন্নপূর্ণা পুজোর সন্ধিক্ষণে সম্প্রচার করার উদ্দেশ্যে লেখা হয় 'বসন্তেশ্বরী', মার্কণ্ডেয় পুরাণের দেবী চণ্ডীর মাহাত্ম্য অনুসারে। স্তোত্র, গান ও কথাসূত্রের সমন্বয়ে এই অনুষ্ঠানটির মূল ভাবনা ছিল বৈদ্যনাথ ভট্টাচার্যের, যাকে আপামর বাঙালী চেনে বাণীকুমার নামে। বসন্তেশ্বরীর সংগীত পরিচালনা করেন রাইচাঁদ বড়াল। কয়েকটি গানে সুর দেন পন্ডিত হরিশচন্দ্র বালী ও পঙ্কজকুমার মল্লিক। কথাসূত্রের দায়িত্বে ছিলেন বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র এবং শ্লোক আবৃত্তি করেন বাণীকুমার স্বয়ং। অনুষ্ঠানটি যে সফল হয়েছিল, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। সেই বছরেরই (১৯৩২) আশ্বিন মাসে, অর্থাৎ ১৩৩৯ বঙ্গাব্দের শারদীয়া দুর্গাপুজোর ষষ্ঠীর সকালে আবার সম্প্রচারিত হয় বসন্তেশ্বরী। যদিও এটি ছিল মহিষাসুর বধের উপর ভিত্তি করে পরিমার্জিত একটি সংস্করণ। পরের বছর, ১৯৩৩য়ের ১৯ সেপ্টেম্বর, বাংলায় ৩রা আশ্বিন, ১৩৪০, মহালয়ার সকালে প্রচারিত হয় বসন্তেশ্বরী। ১৯৩৪ এবং ১৯৩৫য়েও অপরিবর্তিত ছিল এই অনুষ্ঠানের সম্প্রচারের সময়। ১৯৩৬য়ে নতুনভাবে সাজানো হয় গীতি-আলেখ্যটি। রচনায় ছিলেন বাণীকুমার, গ্রন্থনা ও স্তোত্রপাঠে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র, কয়েকটি গানে সুর দেন হরিশচন্দ্র বালী ও রাইচাঁদ বড়াল এবং সামগ্রিক সঙ্গীত পরিচালনায় ছিলেন পঙ্কজকুমার মল্লিক। যন্ত্রসঙ্গীতের দায়িত্বে ছিলেন সুরেন্দ্রকুমার দাস। রেডিওয় অনুষ্ঠানটি বিজ্ঞাপিত হয় ৪ঠা কার্তিক, ১৩৪৩ বঙ্গাব্দ, ২১শে অক্টোবর, ১৯৩৬, বুধবার, ষষ্ঠীর সকালের 'বিশেষ প্রভাতী অধিবেশন' হিসেবে এবং সেই প্রথম অনুষ্ঠানটি ঘোষণা করা হয় 'মহিষাসুরমর্দিনী' নামে। সেই সময় কলকাতা রেডিওয় সকালে সম্প্রচার আরম্ভ হতো সাড়ে আটটায়। মহিষাসুরমর্দিনীর নির্ধারিত সময় প্রাথমিকভাবে সকাল ৬টা থেকে এক ঘন্টা রাখা হলেও এটি সম্প্রচারিত হয় দেড় ঘন্টা ধরে। এই গীতবীথি শ্রোতাদেরকে এতটাই মুগ্ধ করে দেয় যে পরের বছর থেকে বাণীকুমার এই অনুষ্ঠানের সূচনা নির্দিষ্ট করে দেন মহালয়ার ভোর ৪টেতে, যে সময় মেনে চলা হচ্ছে আজও। এমনকি ভোরের পরিবেশের সাথে মিলিয়ে সুরেও পরিবর্তন আনেন পঙ্কজকুমার। 

মহিষাসুরমর্দিনীর এই অসম্ভব জনপ্রিয়তাকে মাথায় রেখেই পরবর্তী দশকগুলিতে সরাসরি সম্প্রচারিত হতে থাকে এই গীতবীথি। ১৯৫৭ অবধি ১ নং গার্স্টিন প্লেস থেকে এবং ১৯৫৮ ও তারপরে ইডেন গার্ডেন্সের ধারে আকাশবাণী ভবন থেকে। মূল অনুষ্ঠানের আগের দেড়-দু'মাস যাবৎ চলতো রিহার্সাল। অংশ নিতেন তৎকালীন বাংলা সঙ্গীতের অন্যতম শ্রেষ্ঠ শিল্পীরা। মহিষাসুরমর্দিনী রচনায় বাণীকুমারকে এবং স্তোত্র ও সংস্কৃতপাঠে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রকে সহায়তা করেছিলেন অধ্যাপক অশোকনাথ শাস্ত্রী বেদান্ততীর্থ মহাশয়। শুরুতে স্থির হয়েছিল যে বীরেন্দ্রকৃষ্ণের গ্রন্থনাপাঠের মাঝের ব্যবধান পূরণ করা হবে যন্ত্রসঙ্গীতের মাধ্যমে। কিন্তু যন্ত্রীরা অনেকেই ছিলেন উর্দুভাষী মুসলমান। তারা বাংলা গদ্য ও সংস্কৃত শ্লোকের পার্থক্য ধরতে না পেরে বীরেন্দ্রকৃষ্ণের কথার সুরেই বাজিয়ে যেতে থাকেন। এই বিষয়টি শ্রী ভদ্রের কথার সুরের সাথে এমন সুন্দর মিলে যায় যে বাঙালী যন্ত্রীরাও সেই সুরই অনুসরণ করেন। ফলে গদ্য, স্তোত্রপাঠ, গান, যন্ত্রসঙ্গীত সব মিলে এমন আবহ সৃষ্টি হয় যে মহিষাসুরমর্দিনী হয়ে ওঠে কালজয়ী। যদিও সমালোচনা পিছু ছাড়েনি। গোঁড়া হিন্দুসমাজ প্রতিবাদ করে কায়স্থ বীরেন্দ্রকৃষ্ণের চণ্ডীপাঠের অধিকার নিয়ে কিন্তু আপত্তি ধোপে টেকেনি। বাণীকুমার বলেন বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ব্রাহ্মণের চেয়েও বড় ব্রাহ্মণ!

অনুষ্ঠানটি সম্পর্কে ভীষণ খুঁতখুঁতে ছিলেন বাণীকুমার, পঙ্কজ মল্লিক ও বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র, তিনজনেই। সম্প্রচারের দিন রাত তিনটেরও আগে বেতারকেন্দ্রে পৌঁছতেন বাণীকুমার; স্নান সেরে গরদের কাপড় পরে অনুষ্ঠান শুরু করতেন বীরেন্দ্রকৃষ্ণ আর হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের স্বর্ণযুগে তাকে বাদ দিয়ে দ্বিজেন মুখোপাধ্যায়কে দিয়ে 'জাগো দুর্গা' গাইয়েছিলেন পঙ্কজকুমার কারণ রিহার্সাল না করে বোম্বে থেকে এসে সরাসরি অনুষ্ঠান করা না-পসন্দ ছিল তাঁর। কলকাতার কুখ্যাত দাঙ্গার বছর ১৯৪৬কে বাদ দিলে ১৯৬২ অবধি অবিচ্ছেদ্য ভাবে লাইভ ব্রডকাস্ট হয়েছে মহিষাসুরমর্দিনীর; দাঙ্গা পরবর্তী মহালয়ায় চালানো হয় রেকর্ডিং। ১৯৬২র শেষের দিকে ভারত-চীন সংঘর্ষের সময় ঘাটতি হয় সরকারী অর্থবরাদ্দে, তাই ১৯৬৩,'৬৪ ও '৬৫তে বাজানো হয় রেকর্ডেড সংস্করণ। সেই সময় ভারতের ৩৫টি বেতারকেন্দ্র থেকে একযোগে বাজানো হত এই গীতি-আলেখ্য। রেকর্ডিংয়ের যুগে বাণীকুমার বা পঙ্কজ মল্লিক না আসলেও নিয়ম করে মহালয়ার দিন সম্প্রচারের আগে আসতেন বীরেন্দ্রকৃষ্ণ, যাঁর নাম বাঙালী মানসে মহিষাসুরমর্দিনীর সাথে সমার্থক হয়ে গিয়েছে।

১৯৬২র পর '৭৫য়ে জরুরী অবস্থা জারির আগে অবধি অনুষ্ঠানটির নতুন রেকর্ডিং হয়েছে বার চারেক। কিন্তু গোল বাধলো ১৯৭৬য়ে। দিল্লী থেকে নির্দেশ এল মহিষাসুরমর্দিনী বাতিল করে নতুন অনুষ্ঠান প্রচারের জন্য। অতএব, ধ্যানেশ নারায়ণ চক্রবর্তী রচনা করলেন 'দেবিং দুর্গতিহারিণীম', গান লিখলেন শ্যামল গুপ্ত। সঙ্গীত পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, কলকাতার বিখ্যাত শিল্পীরা ছাড়াও তিনি গাওয়ালেন লতা মঙ্গেশকর ও আশা ভোঁসলেকে দিয়ে। বাংলায় গদ্যপাঠের জন্য প্রস্তাব গেল উত্তমকুমারের কাছে। শুরুতে নিমরাজী হলেও বসন্ত চৌধুরীর সাথে গ্রন্থনা করলেন মহানায়ক! মহালয়ার দিন সম্প্রচারের জন্য রেকর্ডিংও হয়ে গেল কিন্তু সম্পূর্ণ উদ্যোগে একটিবারের জন্যও করা হয়নি রিহার্সাল। কলকাতা বেতারকেন্দ্রের উচ্চপদস্থ কর্তারা এর পরিণতি কতটা ভেবেছিলেন তা বলা কঠিন কিন্তু মারাত্মকভাবে প্রত্যাখ্যাত হল এই পরিকল্পনা। অনুষ্ঠানটিকে সফল করতে ঘুরপথেও চেষ্টা করেছিলেন বেতারকর্তারা। ১৯৭৬য়ের ২৩শে সেপ্টেম্বর, মহালয়ার সকালে, সাড়ে পাঁচটায় সম্প্রচার শেষ হওয়ার আগেই একটি বহুল প্রচারিত বাংলা দৈনিক ছেপে ফেললো ভূয়সী প্রশংসা! কিন্তু আসল প্রতিক্রিয়া আসতে থাকে দেবিং দুর্গতিহারিণীম শেষ হওয়ার আধঘন্টা পর থেকে। টেলিফোনে গালাগালি, আকাশবাণী ভবনের সামনে ক্ষুব্ধ জনতার ভিড়, পরবর্তী দিনগুলিতে হতাশাব্যঞ্জক চিঠিপত্রের স্তূপ, বাদ যায়নি কিছুই। সেই সময় উত্তমকুমার কলকাতার বাইরে থাকলেও পরে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রর কাছে ক্ষমা চেয়ে প্রতিক্রিয়া দেন তিনি, বলেন "ঠাকুরঘরকে রেনোভেট করে ড্রইংরুম বানালে যা হয়, তা-ই হয়েছে"।

ফলত, দিল্লী আর ঝুঁকি নেয়নি, দশ মাস বাদে রবীন্দ্র সদনে কলকাতা বেতারের সুবর্ণজয়ন্তীর মঞ্চ থেকেই ঐ ঘোষণা করেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী আডবাণী। সেই বছরেরই পুজো থেকে আবার স্বমহিমায় ফেরে মহিষাসুরমর্দিনী। ততদিনে বাণীকুমার প্রয়াত। বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র ছেড়ে দিয়েছেন স্টুডিওয় আসা। কয়েক মাস বাদে '৭৮য়ের ফেব্রুয়ারিতে মারা যান পঙ্কজকুমার মল্লিকও। 

কিন্তু কেন এই প্রতিক্রিয়া? কেনই বা আজ ৮৮ বছর পেরিয়েও এত জনপ্রিয় কিংবদন্তির পর্যায়ে চলে যাওয়া এই অনুষ্ঠান? উত্তরটা বোধহয় লুকিয়ে আছে আমাদেরই মননে। মহিষাসুরমর্দিনী আমাদের সংস্কৃতির এমন একটা অঙ্গ যা সম্পৃক্ত হয়ে গেছে আমাদের বেড়ে ওঠার সাথে। মহিষাসুরমর্দিনী আমাদের কয়েক প্রজন্ম একসাথে বসে কোনোকিছু উপভোগ করার সাক্ষী থেকেছে বছরের পর বছর। কোনো এক জাদুকাঠির ছোঁয়ায় আমাদের পুজো আরম্ভ হয় ঠিক সেই সকালটাতেই যখন আকাশ বাতাস গমগমিয়ে, ফজরের আজানের সাথে মিশে আমাদের কানে আসে সেই বিখ্যাত ব্যারিটোন...

আশ্বিনের শারদপ্রাতে
বেজে উঠেছে আলোকমঞ্জীর
ধরণীর বহিরাকাশে
অন্তর্হিত মেঘমালা
প্রকৃতির অন্তরাকাশে জাগরিত
জ্যোতির্ময়ী জগন্মাতার আগমনবার্তা...

আর তো মাত্র কয়েক ঘন্টার অপেক্ষা, এলার্মটা দিয়ে রেখেছেন তো?
______________________________

পুনশ্চ: প্রতিবছর কলকাতা 'ক'য়ে জলদগম্ভীর যে কণ্ঠে আপনি মহিষাসুরমর্দিনীর ঘোষণাটি শোনেন, সেই কণ্ঠটি হল দিলীপ ঘোষের এবং সেটিও রেকর্ডেড। আকাশবাণীর আর্কাইভে থাকা মহিষাসুরমর্দিনীর বেশ কয়েকটি রেকর্ডিংয়ের মধ্যেই প্রতি বছর বাজানো হয় ঘুরিয়ে ফিরিয়ে। আকাশবাণীর সঙ্গে যুক্ত আমার এক বন্ধু দু'দিন আগেই জানালো যে আগামীকাল সকালে আমরা যেটা শুনবো সেটা খুব সম্ভবত ১৯৬৬ এর রেকর্ডিং!
_______________________________

তথ্যসূত্র:
১) আকাশবাণীর প্রাক্তন কর্মী শ্রী মিহির বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্মৃতিচারণা, রবিবাসরীয় সংবাদ প্রতিদিন, ২০০৯

২) Indian Broadcasting in the Regional Context: A survey of the history of Radio Broadcasting Station at Calcutta, a thesis hosted at shodhganga.inflibnet.ac.in

বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের ছবি: The Wire

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন