বৃহস্পতিবার, ১৬ মে, ২০১৯

ইভিএম কারচুপি ~ প্রতিভা সরকার

মোদীমুক্ত ভারতবর্ষের স্বপ্ন দেখছেন বুঝি ? ভেবেছেন জানমাল বাঁচিয়ে সন্তানের লেখাপড়া, কাজকামের পথ সুগম হবে ? চাষীশ্রমিক আত্মহত্যা না করে বিরাট মিছিলে নিজের দাবী বুঝে নেবে, এইরকম ভাবনা আপনার ? বেসরকারি করণ রুখে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থায় মসৃণ কাজ হবে,কর্পোরেটকে জলজঙ্গলজমি বেচা কমবে আর গরীবকে জাতধর্মখাদ্যের কারণে পিটিয়ে মারা হবে না, এইরকম খোয়াব দেখেন বুঝি, সাহেব ? দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে লাটে তোলা আর ঘোটালার বিরুদ্ধে লড়াকু মানুষগুলোকে গুলি করে মারা এই গডসের ভজনাকারী সরকার নিপাত যাক, এইরকম আপনার চাওয়া ?

সে গুড়ে কড়কড়ে বালি পড়ার সম্ভাবনাই বেশি।

শুনুন দাদাদিদি, ভাইবহেনরা, নির্বাচনের শেষ ভাগে দাঁড়িয়ে এখনো যদি জোট না বাঁধেন, যদি নোটায় ভোট দেবার কথা ভাবেন, শুধু খিল্লি ওড়ান বালনরেন্দ্রের ত্রেতাযুগে ইন্টারনেট আর ডিজিটাল ক্যামেরা ব্যবহার নিয়ে,সন্দেহভাজন অর্থলোভী, গদিলোভী দলত্যাগীদের বিরুদ্ধে হাতে হাত না মেলান, যদি প্রতিরোধ গড়ে না তোলেন, তবে আপনার জন্য থাকবে শুধু স্বপ্নের বুজকুড়ি আর ঘুম ভাঙার পর মুখে তেতো স্বাদ। 

আপনার মনে পড়ে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর উড়োজাহাজ থেকে নামানো বিরাট বাক্স হাতে হাতে ভ্যানিশ হয়ে যাবার কথা ?  কী ছিল তাতে কেউ জানেনা এখনো, কিন্তু যে সৎ প্রশাসক হুজুরের হেলিকপ্টারে নিয়ম মাফিক তল্লাশি চালিয়েছিলেন ইতোমধ্যে তিনি ছাঁটাই হয়েছেন। 
পুরো রহস্য উপন্যাসের ধাঁচে নির্বাচনের এক একটি চ্যাপ্টার লেখা হচ্ছে বহুদিন ধরে। ফ্রন্টলাইনের মতো ইনভেস্টিগেটিভ জার্ণাল তথ্যপ্রমাণ দিয়ে ইভিএম লোপাট হবার কথা লিখেছে। একটা আধটা নয়, ২০ লাখ ইভিএম ভোটের আগেই উধাও হয়ে গেছে, আপনি জানেন ? মুম্বাই হাইকোর্টে পি আই এল করে এই তথ্য সামনে এসেছে, কিন্তু আমাদের কাছে তা হয়তো পৌঁছবে ভোটের পর। 

ইভিএমের কাজে নানা গড়বড়ির অভিযোগ বহু পুরনো। বিরোধী দলের এইসব অভিযোগে কান দেয়নি সব-দেখেও-কিছু-না-দেখা নির্বাচন কমিশন। এমনকি বিরোধীদের ন্যায্যতম দাবী, প্রত্যেক এসেম্বলি সেগমেন্টে ৫০% ভিভিপ্যাটের সঙ্গে ইভিএমের ফলাফল মিলিয়ে দেখার দাবীও কমিশন হাওয়ায় উড়িয়ে দিয়েছে। 

কিন্তু মুম্বাই হাইকোর্টে পি আই এল করে ঝুলি থেকে বেড়াল বার করে এনেছেন আর টি আই এক্টিভিস্ট বঙ্গসন্তান মনোরঞ্জন রায়। ইভিএম এবং ভিভিপ্যাট সংরক্ষণের দায়িত্ব যাদের সেই কেন্দ্রীয় এবং রাজ্য ইলেকশন কমিশনের হাঁড়ি হাটে ভেঙে দিয়েছেন। দেখা গেছে  ইভিএমের অর্ডার, সাপ্লাই, ডেলিভারি, তিনটে ধাপেই বিস্তর গোলযোগ। শুধু তাই নয়, এতে করে বিস্তর টাকা নয়ছয় করা হয়েছে, যার পরিমাণ ১১৬.৫৫ কোটি। পিএলআইতে পরিষ্কার দেখানো হয়েছে যতো ইভিএম, ভিভিপ্যাটের অর্ডার গেছে এসেছে তার থেকে বহুগুণ কম। ইলেকশন কমিশনের কাছে অর্ডারমাফিক যতো ইভিএম থাকার কথা, আছে তার থেকে ২০ লক্ষ কম। ম্যানুফ্যাকচারিং কম্পানি কিন্তু জানিয়েছে তারা ঠিকঠাক ডেলিভারি দিয়েছে। সে সংক্রান্ত কাগজপত্রও তৈরি আছে তাদের কাছে। 

তাহলে এই ইভিএমগুলি গেল কই ? গোটা নির্বাচনী সময় ধরে সেগুলোতে কারসাজি করা হচ্ছে নাকি ? জেতা নিয়ে সন্দেহ আছে এইরকম নির্বাচনী ক্ষেত্রে কোন বিশেষ দলকে জিতিয়ে দেবার জন্য ? 

আর কি বিপুল টাকাকড়ির নয়ছয় ! গত দশ বছরে, নির্বাচন কমিশন জানিয়েছিল, ইভিএম বাবদ খরচ হয়েছে ৫৩৬,০১,৭৫,৪৮৫ টাকা। যেই না আর টি আই করার পর চুলচেরা বিচার হলো, অমনি সেটা দাঁড়িয়ে গেল ৬৫২,৫৬,৪৪,০০০ টাকায়। কাকেশ্বর কুচকুচকে ডাকতে হবে নাকি ? 

ইলেকশন কমিশন আদালতে হলফনামা দিয়ে জানিয়ে দিয়েছে কোনো ইভিএম সে স্ক্র‍্যাপ হিসেবেও বিক্রি করেনি কখনো। এই বাড়তি মেশিন কোথায়, বাড়তি টাকা কোন নেপোর পকেটে সে রহস্যের মীমাংসা কোনদিন হবে কিনা জানা নেই, ভোট ফুরোবার আগে তো নয়ই। মামলাটাই চলছিল এক বছরের বেশি সময় ধরে। 

স্বৈরাচারীর ভেক অনেক। 
গ্রাম নগর হাট বাজার বন্দরে তৈরি হও।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন