বৃহস্পতিবার, ২৮ ফেব্রুয়ারী, ২০১৯

নেশান ওয়ান্টস টু নো ~ অভিজিৎ মজুমদার

সন্মুখে সম্ভাব্য মৃত্যুসমুদ্র দেখিয়া অর্জুন কম্পিতকন্ঠে কহিলেন, "হে কেশব। আমার হস্ত শিথিল হচ্ছে, আমি গান্ডীব ধরে রাখতে পারছি না। আমার শরীরে কম্পন অনুভব হচ্ছে, সর্বাঙ্গে স্বেদনি:সরণ হচ্ছে। এ যুদ্ধ আমার পক্ষে সম্ভব নয়, মধুসূদন। তুমি আমায় পথ দেখাও।" 

অর্জুনের বিচলিত অবস্থা দেখিয়া বাসুদেব স্থিরকন্ঠে কহিলেন, "হে সখা, শান্ত হও। তোমার মত স্থিতধী পুরুষের এমন নার্ভাস ব্রেকডাউন সাজে না। যদি তুমি এই যুদ্ধে জয়লাভ কর তবে সসাগরা ধরিত্রীর অধীশ্বর হবে। আর যদি বীরগতি লাভ কর, তবে লোকে তোমার ছবি নিয়ে ভোট চাইবে। অতএব আত্মসংবরণ কর।"

অর্জুন কৃষ্ণর কথায় বিশেষ আশ্বস্ত হইলেন না। সংশয়াচ্ছন্ন কন্ঠে বলিলেন, "নিজের মৃত্যু নিয়ে শঙ্কিত নই গিরিধর। কিন্তু দুরাত্মা দুর্যোধনকে শাস্তি দিতে গিয়ে এই অসংখ্য নিরপরাধ মানুষের প্রাণ নেওয়া কি জাস্টিফায়েড? শান্তি কি যুদ্ধ অপেক্ষা অধিক কাঙ্খিত নয়?"

কৃষ্ণ কহিলেন, "চুপ, চুপ। মিত্র, এমন বাক্য মুখেও এনো না। লোকে শুনলে তোমায় তো দেশদ্রোহী বলবেই, তোমার সাথে সাথে আমাকেও আরবান নক্সাল বলে দাগিয়ে দেবে। নাও, মুখ খোলো, দু-দাগ রাস টক্স খেয়ে নাও। নার্ভ চাঙ্গা হবে। এবার ভালো করে শোনো। আমি তোমায় যুদ্ধের অবশ্যম্ভাব্যতা নিয়ে কিছু উপদেশ দেব। এই উপদেশ মানুষ যুগ যুগ ধরে বিভিন্ন যুদ্ধকে জাস্টিফাই করতে ব্যবহার করবে। ইয়দা ইয়দা ভোট উপস্থিত হবে, তখন তখন এর প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হবে।"

এতৎ বলিয়া শ্রীকৃষ্ণ তাঁহার দুইহাত প্রসার করিয়া এক অপূর্ব মায়াজাল সৃষ্টি করিলেন। চতুর্দিক এক সুগন্ধী ধূম্রে আচ্ছন্ন হইল। সেই ধূম্রজালের ভিতর হইতে শোনা গেল এক জলদগম্ভীর স্বর, "ইফ ইউ আর নট ইন ফেভার অফ ওয়ার, ইউ আর উইথ দেম। ইফ ইউ আর ইভেন্ থিংকিং অফ পীস, ইউ আর উইদ দেম। নাও টেল মি, আর ইউ উইদ দেম? টেল মি,টেল মি। নেশন ওয়ান্টস টু নো.."

অর্জুন সেই মোহক কন্ঠের জাদুকরীতে অভিভূত হইয়া পুনর্বার গান্ডীব ধারণ করিলেন। ভীমসেন কৃষ্ণের দিকে তাকাইয়া চক্ষু মারিলেন। বাসুদেব স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গীতে স্মিত হাসিয়া আপনার সারথিকার্যে মনোনিবেশ করিলেন। 

বাকি গল্পটা তো আপনারা জানেনই।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন