বসন্ত বা বসন্ত পঞ্চমী, যা দেশের নানা জায়গায় পালন করা হয় নানা ভাবে, নিজামুদ্দিন আউলিয়ার দরগাতেও এক বিশেষ উৎসব হিসেবে পালন করা হয়। বেশ মজার ব্যাপার, তাই না? আর এরও মূলে সেই খুসরো বুড়ো! গল্পটা বলি?
নিজামুদ্দিন নিজে বিয়ে করেন নি কিন্তু তাঁর বোনের ছেলে তাকীউদ্দীন নূহ কে তিনি বিশেষ স্নেহ করতেন। এটাও মজার কথা! সুফী সন্তদেরও আমাদের মতো ভালোবাসা? তা ছিল বই কি ! নিজামুদ্দিন বলতেন, ইশ্ক (প্রেম), অকল (বুদ্ধি), আর ইল্ম (জ্ঞান) এই তিনটের মিশ্রণই সুফী হবার মূল কথা। আর এর মধ্যে প্রথমটার মাত্রা অনেকটা বেশি ছিল বলেই তাঁর নাম, "মেহবুব এ ইলাহী" (প্রেমের ঈশ্বর)! যাই হোক দুর্ভাগ্যক্রমে এই তাকীউদ্দীন কয়েকদিনের অসুখে হঠাৎ মারা যান এবং নিজামুদ্দিন এতে খুবই ব্যথিত হন। দীর্ঘদিন তাঁর মুখে হাসি ফোটে না। তিনি তাঁর চিল্লায় (ধ্যান করার জায়গা) বসে থাকতেন এবং তাঁর শিষ্যরা বিশেষত খুসরো তাঁকে নিয়ে খুবই চিন্তিত হয়ে পড়েন।
এমন সময় এক দিন খুসরো দেখেন মহিলারা হলুদ শাড়ি পরে, হলুদ ফুল নিয়ে গান গাইতে গাইতে, হাসতে হাসতে কোথাও যাচ্ছে। তিনি তাদের জিজ্ঞাসা করে জানতে পারেন যে বসন্ত এসে গেছে, শীত শেষ। তাই তারা নিজেদের আরাধ্য দেবতাকে পুজো দিতে যাচ্ছে। খুসরো জিজ্ঞাসা করেন, এই বেশ ভূষা ও ফুল দেখলে কি তাদের দেবতা খুশি হবেন? তারা হ্যাঁ বলাতে, খুসরো তাড়াতাড়ি হলুদ শাড়ি পরে আর হলুদ সর্ষের ফুল নিয়ে নিজামুদ্দিনের কাছে গান গাইতে গাইতে পৌঁছান
"সকল বন্ ফুল রহি সরসো/ অম্বুয়া বোরে, তেসু ফুলে / কোয়েল কুকে দর দর/ অউর গোরি করত শৃঙ্গার "
নিজামুদ্দিন নিজের প্রিয় শিষ্যর এই বেশ ভূষা আর চেষ্টাতে হেসে ফেলেন। সেই থেকে বসন্ত বিশেষ দিন নিজামুদ্দিন এর খানকা এবং দরগাতে।
নিজামুদ্দিন মারা যাবার পর ৭০০ বছর পেরিয়ে গেছে। আর আজও চলছে সেই পরম্পরা। গান এর লিংকটা দিলাম:
আর এবারকার বসন্ত এর আমন্ত্রণও (ছবিতে দেখো)। যে যে যেতে চাও দেখে এস। ওই দিন সবাই হলুদ জামা কাপড় পড়বে। আর হলুদ ফুল দেবে। আর ওই একদিনই নিজামুদ্দিন এর দরগার ভেতরে কাওয়ালি হবে। মানে জালিরও ভেতরে। উঠোনে নয়। কাওয়ালরা হারমোনিয়াম গলায় ঝুলিয়ে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে গাইবেন সেদিন... আহা কি আনন্দ!
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন