স্কুল থেকে ছেলে
ফিরতেই বুকের
ভিতরটা কেমন
যেন কেঁপে
উঠল।
স্কুলের সাদা
জামাটায় লাল
ছোপ ছোপ
দাগ, চুলগুলো
সব এলোমেলো। কাঞ্চন
দৌড়ে গিয়ে
জড়িয়ে ধরে
ছেলেকে।
- কি হয়েছে বাবা
? জামায় এত
রক্ত এলো
কোথা থেকে
!
ছেলে চুপ করে
থাকে।
কাঞ্চন কি বলবে
ভেবে পায়
না।
তার ছেলেতো
এমন নয়। শান্ত
স্বভাবের ছেলের
আজ হঠাত্ কি হলো ! ভেবে পায়
না কাঞ্চন।
- কি হয়েছে বাবা
বল আমায়,
কেউ কি
তোকে মেরেছে
? রাস্তায় কোন দুর্ঘটনা হয়েছে ? চুপ
করে থাকিস
না বল
আমায়।
না কিছু হয়
নি, কেউ
আমাকে মারেনি
, আমিই ওদেরকে
মেরেছি।
- কাকে মেরেছিস বাবা
? কেন ?
- ওই ওদেরকে যারা
তোমার নামে
বাজে কথা
বলে, তাদেরকে
মেরেছি।কেন ওরা
তোমাকে নিয়ে
বাজে কথা
বলবে, মজা
করবে, তাই
মেরেছি।
- না বাবা ওরকম
মারামারি করতে
নেই।
ওরা যদি
আমার নামে
কিছু বলে
মজা পায়
তো পাক। তুমিতো
আমার সোনা
ছেলে।
অমন করে
না বাবা।
- বেশ করব, আবার
বললে আবার
মারব।
কোন রকমে ছেলেকে
শান্ত করে
খাইয়ে ঘুম
পাড়িয়ে দেয়।
এখন অসহ্য গরমের
জন্য স্কুলের
সময় সকালে
করে দিয়েছে। স্কুল
ফেরত ছেলেকে
নিয়ে তেমন
সমস্যায় পড়তে
হয় না। কিন্তু
আজ যেন
সবকিছু এলোমেলো
হয়ে যাচ্ছে।
যে কথাটা সবসময়
ছেলের কাছ
থেকে আড়াল
করতে চেয়েছ
তা যেন
হঠাৎ করে
সামনে চলে
আসার উপক্রম
হয়েছে।
কার কাছে অভিযোগ
জানাবে কাঞ্চন
! ভগবান ! সে তো তাকে আগেই
মেরে রেখে
দিয়েছে।
কি করবে
সে ! নিজের
ভাগ্যকেই অভিসম্পাত
দিতে ইচ্ছা
হয় তার।
গরমের এই অলস
দুপুরে ক্লান্তি
নেমে আসে
তার চোখে।
নিজের মনে মনেই
বলে যে
- জানিনা আর কত
দিন এভাবে
লুকিয়ে বেড়াবো।
বাড়ি থেকে বেশ
কিছুটা দূরে
স্টেশন সংলগ্ন
বাজারে তার
নিজস্ব দোকান। দোকান
মানে ছোট
বিউটি পার্লার। প্রধানত
মেয়েদের জন্যেই
এই পার্লার
তবে মাঝে
মধ্যে বেলার
দিকে পাড়ার
কিছু উঠতি
দাদাদেরও চুল
দাড়ি সাফ
করার ব্যবস্থা
করে দিতে
হয়।
যা আয়
হয় তাতে
ছেলেকে নিয়ে
মোটামুটি চলে
যায় তার।
প্রথম যখন এ
তল্লাটে আসে
তখন এই
গ্রামের কিছু
ছেলেরাই তাকে
সাহায্য করেছিল। সাথে
দুধের শিশুকে
দেখে অনেকে
ভেবেছিল কাঞ্চন
হয়তো বাচ্চা
চুরি করে
পালিয়ে এসেছে। তাদের
মধ্যে কেউ
হয়তো পুলিশে
খবর দিয়েছিল। পুলিশ
এসে খোঁজ
খবরও করে
কিন্তু সন্দেহজনক
কিছু না
পেয়ে আর
বিরক্ত করেনি।
শত চেষ্টাতেও সে
তার পরিচয়
পুরোপুরি আড়াল
করতে পারে
না।
গ্রামের গুটিকয়েক
ছেলে তার
অতীতের কথা
শুনে তার
দিকে সাহায্যের
হাত বাড়িয়ে
দিয়েছিল।
কাঞ্চন একটু অবাকই
হয়েছিল, কারণ
তার মতো
মানুষদের কেউ
মানুস বলে
গণ্য করেনা। হয়
সবাই একটু
এড়িয়ে যায়,
না হয়
কটুক্তি করে
জীবন দুর্বিসহ
করে তোলে।
আজ প্রায় দশ
বছর হয়েগেল
তার এই
তল্লাটে আসা। ফেলে
আসা দিনগুলো
সে মুছে
ফেলতে চায়
তার জীবন
থেকে কিন্তু
তবুও মাঝে
মধ্যে কিছু
ঘটনা তার
মনকে খুঁচিয়ে
রক্তাত্ত করে
তোলে এই
আজ যেমন
হলো।
- নাঃ এবার থেকে
আরো সাবধানে
পা ফেলতে
হবে, ছেলেটাকে
মানুষ না
করা পর্যন্ত
শান্তি নেই,
মনেমনে ভাবে
সে।
স্কুলের এই ঘটনার
পর পেরিয়ে
গেছে আরো
কিছু বছর।
মাথার চুলে পাক
ধরেছে।
ছেলেও স্কুলের
গন্ডি পেরিয়ে
কলেজ জীবনে
প্রবেশ করেছে। আর
মাত্র একটি
বছর তারপর
কলেজ জীবনেরও
সমাপ্তি।
তারপর ছেলের
ভাগ্য যেখানে
নিয়ে যাবে। কাঞ্চন
মনেমনে ভেবে
রেখেছে ছেলে
কিছু কাজ
পেলেই একটা
ভালো মেয়ে
দেখে ছেলের
বিয়ে দিয়ে
যে চলে
যাবে বহু
দূরে,তাদের
জীবন থেকে
সরে যাবে
সে।
তার অভিশপ্ত
জীবনের ছায়া
যেন ছেলের
বাকী জীবনের
উপর না
পরে।
চলে যাবে
সে, অনেক
অনেক দূরে।
ছেলের কলেজ সকালে,
তাই দুজনেই
একসাথে বাড়ি
থেকে বেড়োয়। আবার
দুপুরে কলেজ
শেষ করে
ছেলে এলে
দুজনে একসাথে
বাড়ি ফেরে। স্টেশন
থেকে তাদের
গ্রাম ময়নাদীঘির
দূরত্ব দুই
কিলোমিটার মতো হবে। দুজনে
গল্প করতে
করতে এই
পথটুকু চলে
আসে।
সকাল থেকে
কি কি
করেছে, কলেজে
কি কি
হয়েছে, সব
কথা তার
আমু কে
বলা চাই।
ও হ্যাঁ ছোটবেলায়
কথা বলতে
শেখা থেকেই
সে কাঞ্চনকে
আমু বলেই
ডাকে।
কাঞ্চন ছেলেকে
যখন যে
নামে পারে
ডাকে, কখনও
বলে সোনা
বাবা কখনও
মিষ্টু আবার
কখনও শুধু
জয়।ছেলের নাম
একটা দিয়েছে। বাইরের
সবাই ওকে
জয়জীৎ নামেই
চেনে।
বাবার নাম হিসাবে
খাতায় কলমে
মনি বসু
নামটাই আছে। যদিও
জয়জীত্
বাবাকে বা
বাবার কোন
ছবি কখনও
দেখেনি।
আমু বলে
ওর ছোট
বয়েসেই নাকি
উনি আমুকে
ছেড়ে চলে
যান।
আমুই ওকে
একা এত
বড় করে
তুলেছে।
দুপুরে খেতে বসে
আমুর সাথে
গল্প করতে
করতে এক
একদিন অনেক
বেলা হয়ে
যায়।
সব কাজ
গুছিয়ে আমু
ছোটে দোকানে। ফিরতে
ফিরতে সেই
ন'টা
বেজে যায়।
জয়জীৎ এটুকু সময়
একাই থাকে
নিজের পড়াশুনা
নিয়ে।
এই একটা
কাজে কখনও
সে ফাঁকি
দেয়নি।
সে ভাবে
কলেজ শেষ
করে একটা
চাকরী পেলে
সে আর
আমুকে কাজ
করতে দেবে
না।
এভাবেই চলতে থাকে
তাদের দৈনন্দিন
জীবন।
কাঞ্চন বেশ কিছুদিন
ধরে তার
মিষ্টুর হাবভাবে
কিছু পরিবর্তন
লক্ষ্য করছে। মিষ্টু
কিছু যেন
বলতে গিয়েও
বলতে পারছেনা
একটু চিন্তায়
পড়ে যায়
সে।
কি হলো
ছেলের ! আগের
মতো তো
আর সেভাবে
তার সাথে
গল্প করে
না, একটু
যেন আনমনা
থাকে।
ছেলে কি
তার সম্বন্ধে
কিছু জানতে
পারল ! কিন্তু
সেরকমও তো
কিছু আভাস
পাওয়া যাচ্ছে
না, তাহলে
! কাঞ্চন ভাবল
দেখি কিছুদিন
তারপর না
হয় ছেলেকে
জিঞ্জাসা করব।
কয়েকদিন পর কলেজ
থেকে ফিরে
খাওয়ার সময়
জয়জীত্
বলল
- আমু, খাওয়ার পর
আমি একটু
বেড়বো, সন্ধ্যার
মধ্যে ফিরে
আসব খুব
বেশী হলে
সাতটা বাজবে।
কাঞ্চন ছেলেকে আড়চোখে
দেখে বলে
- কোথায় যাবি
রে ?
- সেরকম কোথাও না,
কলেজের এক
বন্ধু কিছু
মার্কেটিং করবে তাই তার সাথে
আমাকে যেতে
বলেছে।
- তাড়াতাড়ি ফিরিস দেরী
করিস না
যেন।
- না না দেরী
হবে না।
খাওয়ার পর জামা
প্যান্ট পড়ে
তৈরী হয়ে
জয়জীত্
বলল
- আমু আমি আসছি।
কাঞ্চন হেসে বলল
- তা হ্যাঁ রে
মিষ্টু মেয়েটার
সাথ আমাকে
আলাপ করাবি
না ?
জয়জীত্ তার আমুর এই অতর্কিত
আক্রমণে হতবম্ভ
হয় গেল। আমতা
আমতা করে
বলল
- না মানে মেয়ে
কোথায় পেলে
! আমিতো যাচ্ছি
এক বন্ধুর
সাথে।
- মেয়ে পেলাম তোর
পকেটে।
- মানে ?
- আজ সকালে প্যান্ট
কাচার সময়
প্যান্টের পকেটে একটা চিরকুট পেলাম,
লেখাছিল যে
" বড় ঘড়ির নিচে আমি অপেক্ষা
করব ঠিক
চারটের সময়
দেরী করোনা"-
এবার মানেটা
তুই বল।
না মানে আমু
আমি তোমাকে
বলতাম বিশ্বাস
করো।
- দেখ বাবা তুই
এত লজ্জা
পাচ্ছিস কেন
? যদি কাউকে
ভালোবেসে থাকিস
তো ক্ষতি
কি ? একদিন
নিয়ে আয়
তাকে।
- আমু তুমি রাগ
করনি তো
আমার উপর
?
- দূর পাগল, রাগ
করব কেন
? আর এই
নে এই
টাকাটা রাখ,কিছু কিনে
দিস ওকে,
যা হোক
কিছু বলবি
আমু দিয়েছে।
ছেলে হাসিমুখে চলে
যায়।
কাঞ্চন ভাবে না
আর বেশী
দেরী নয়
এবার ছেলেকে
নিজের আসল
রূপ,আসল
পরিচয় জানানোর
সময় এসেছে।
ঠিক সন্ধ্যার মুখে
ছেলে ফিরে
এসে পার্লারে
উঁকি মেরে
বলে আমু
আমি চলে
এসেছি।তোমার হয়েগেলে
তুমি তাড়াতাড়ি
বাড়ি চলে
এসো, আমি
বাড়ি চললাম।
কাঞ্চন ছেলের হাসিমুখটার
দিকে তাকিয়ে
থাকে।
ছেলে চলে যেতেই
ভাবতে থাকে
কি বলব ছেলেকে
? সে যদি
সবকিছু জেনে
ঘেন্না করে
আমাকে, কি
করব আমি
? নাঃ ছেলের
কলেজ শেষ
হোক তারপর
না হয়
সব জানিয়ে
আমি দূরে
সরে যাব।
রাতে বাড়ি ফিরে
ছেলের হাসিমুখ
দেখে মন
ভরে গেল
কাঞ্চনের।
খেতে বসে ছেলে
বলল
- জানো আমু তোমার
দেওয়া টাকা
দিয়ে ওকে
কিছুই কিনে
দিতে পারলাম
না।
- সে কি রে
আমি যে
বললাম কিছু
কিনে দিস
! সত্যি তুই
না একটা
যাচ্ছেতাই।
- তুমিও বলছ আমি
যাচ্ছেতাই !
মৌ কে দুপুরের
কথা বলে
বললাম আমু
এই টাকাটা
দিয়েছে বলেছে
তোমায় কিছু
কিনে দিতে। মৌ
টাকাটা আমার
হাত থেকে
কেড়ে নিয়ে
বলল, তুমি
একটা যাচ্ছেতাই। আমুর
দেওয়া এই
টাকাটা কেউ
খরচ করে
! ওটা আমার
কাছে রাখা
থাক, ওতে
আমুর আর্শীবাদ
আছে যে।
- মৌ ! ওর নাম
বুঝি মৌ
?
- হ্যাঁ, ওর ভালো
নাম মৌমিতা। খুব
ভালো মেয়ে। আমাদের
কলেজেই ভর্তি
হয়েছে।
আমাদের স্টেশনের
দুটো স্টেশন
আগে যে
গ্রাম সেখানেই
থাকে।
- তাই না কি
?
- হ্যাঁ আমু, জানো
ওরও বাবা
নেই, ওর
মাও অনেক
কষ্ট করে
ওকে বড়
করে তুলেছে।
- তা হ্যাঁ রে
ওদের চলে
কি করে
?
- ওর বাবা মারা
যাওয়ার পর
ওদের ভাগে
কিছু জমি
পড়েছিল,ওই
জমি থেকে
যেটুকু আয়
হয় তাতেই
মা মেয়ের
চলে যায়
কোন রকমে।
- মৌ-এর সাথে
আমার আলাপ
করাবি না
? নিয়ে আয়
না একদিন
ওকে।
- নিয়ে আসব আমু,
একদিন ঠিক
নিয়ে আসব।
ভাবেই ছেলেকে নিয়ে
কাঞ্চনের কেটে
যায় আরো
কিছুদিন।
তার মন
কিন্তু দোলচালে
থাকে, কিভাবে
ছেলেকে জানাবে
তার জীবনের
ইতিকথা ! মনের
মধ্যে টানাপোড়েন
চলতেই থাকে।
আজ সকাল থেকেই
গুমোট গরম,
চারিদিকে দমবন্ধ
করা পরিবেশ। আগের
দিন রাতে
কয়েক ফোঁটা
বৃষ্টি হওয়ার
জন্য সকাল
থেকেই বাতাস
ভারী হয়ে
আছে।ছেলে কলেজ
যাওয়ার পর
আজ পার্লারে
এসেছে সে। শরীরটা
ঠিক ভালোলাগছে
না কাঞ্চনের। দোকান
খুলে বাইরে
বসেই কাটিয়ে
দিয়েছে কিছুটা
সময়।
প্রকৃতির এই
মুখভার করা
আবহাওয়ায় বাজার
তেমন জমে
ওঠেনি।
লোকজনের আনাগোনা
আজ কম।দোকানের
বাইরে বসে
কাঞ্চন স্টেশনের
দিকে আলগা
চোখে তাকিয়েছিল। আর
কিছুক্ষণ পরই
ছেলে ফিরবে
কলেজ থেকে। হঠাৎ
যেন ভুত
দেখার মতো
চমকে ওঠে। তার
মনে ছেলের
সেই স্কুলের
দিনের ঘটনা
ভেসে ওঠে। চমকে
তাকিয়ে দেখে
ছেলে স্টেশনের
সিঁড়ি ভেঙে
নেমে আসছে,
গায়ের জামাটায়
রক্তের দাগ,
পা একটু
টলমল করছে। কাঞ্চন
ছুটে যায়
ছেলের কাছে
-
- কি হয়েছে মিষ্টু,
এত রক্ত
কেন ?
- কিছু হয়নি, সরে
যাও তুমি।
- কিছু হয়নি! বললেই
হবে !
তাড়াতাড়ি পার্লার বন্ধ
করে ছেলেকে
নিয়ে রিক্সায়
উঠেবসে, সোজা
চলে আসে
হারাণ ডাক্তারের
বাড়ি।
হারাণ নামেই
ডাক্তার, ডাক্তারি
পাশ করার
কোন প্রমাণ
নেই মানে
হাতুড়ে আর
কি, তবে
অসময়ে হারাণ
ডাক্তারই এখানকার
মানুষের কাছে
ভাঙা কুলো। ডাক্তার
ছেলের মাথায়
ওষুধ লাগিয়ে
ব্যাণ্ডেজ বেঁধে দিতেই কাঞ্চন ছেলেকে
নিয়ে বাড়ি
চলে আসে।
ছেলের গায়ে মাথায়
হাত বুলিয়ে
বলে
- বলনা বাবা কি
হয়েছে ? কি
করে এমন
হলো ? তুই
কি আবার
কারও সাথে
মারামারি করেছিস
? কেন বাবা
?
- বেশ করেছি, দরকার
পড়লে আবার
করব।
- ছিঃ মিষ্টু, অমন
বলেনা বাবা।কেন
শুধু শুধু
এসব করিস
!
- শুধু শুধু !
- কি হয়েছে আমায়
বল বাবা।
- কি হয়েছে ! যা
হয়েছে সব
তোমার জন্য
আমু।
- আমার জন্য !
- হ্যাঁ তোমার জন্য,
ওপাড়ার পিন্টুর
সাথে আজ
ট্রেনে বসার
জায়গা নিয়ে
কথা কাটাকাটি
হতেই তোমার
নামে বাজে
কথা বলতে
লাগল।
আমি সহ্য
করতে পারিনি
আমু।
- যে যা বলে
বলুক না,
তুই কেন
মারামারি করতে
যাস বাবা।
- যা হয়েছে সব
তোমার জন্য
আমু, সব
তোমার জন্য। কেন
তুমি এইরকম
আমু ? কেন
তোমার কথাবার্তা,
চালচলন সাধারণ
লোকের মতো
নয় ? কেন
কেন ? কেন
তুমি আমাকে
আমায় আমার
বাবার কথা
বল না
? কেন তুমি
সব সময়
এড়িয়ে যাও
?
- একটু শান্ত হ
বাবা।
- শান্ত হব ! সব
অশান্তির মূলে
তো তুমি
আমু।
সেই ছোট
থেকে স্কুলে
কলেজে সবার
কাছে হাসির
পাত্র হয়েগেছি
আমি।
আর কত
শান্ত হয়ে
থাকব আমু
!
হতবাক হয়ে যায়
কাঞ্চন, কিন্তু
আশ্চর্য হয়
না।
সে জানত
এমন দিন
একদিন না
একদিন আসবেই।
- মিষ্টু আমার কথা
একটু শোন
বাবা।
না আমু আর
না, এখানে
থাকলে আমি
পাগল হয়ে
যাব।
তোমার সাথে
আর একমুহুর্ত
থাকা সম্ভব
নয়।
- না বাবা এভাবে
বলিস না,
তুই ছাড়া
আমার আর
কে আছে
বল ! যাস
না সোনা
আমার ।
দু-হাতে
জড়িয়ে ধরে
ছেলেকে।
- হঠাৎ কাঞ্চনের মাথাটা
দুলে ওঠে। কোন
রকমে দরজাটা
আঁকড়ে ধরে
বলে যাস
না বাবা,
ধীরে ধীরে
অন্ধকারের অতল গহ্বরে তলিয়ে যেতে
থাকে।
কপালে নরম ঠান্ডা
হাতের পরশ
পেয়ে ধীরে
ধীরে চোখ
মেলে কাঞ্চন। চোখের
সামনে দুটি
মায়াবী চোখ
দেখে সে। মিষ্টি
মুখের মেয়েটি
তার মুখের
উপর ঝুঁকে
পরে কপালে
হাত বুলিয়ে
দিচ্ছে।
কাঞ্চন উঠে
বসতে চায়।
হালকা শাসনের সুরে
মেয়েটি বলে
ওঠে
- না এখন একদম
উঠবে না
আমু, চুপটি
করে শুয়ে
থাক।
- তুই কে মা
? মৌ ?
- হ্যাঁ আমু আমি
মৌ ?
- আমার মিষ্টু কোথায়
?
দুটি চোখ এদিক
ওদিক খুঁজে
ফেরে, দেখে
দরজার পাশে
মাথা নিচু
করে বসে
আছে সে। দু-চোখে জলের
রেখা।
- ওখানে কেন বসে
আছিস ? আয়
বাবা আমার
কাছে আয়।
- না ও ওখানেই
বসে থাকুক,
যে আমুকে
কষ্ট দেয়
তার এখানে
আসার দরকার
নেই।
- দূর পাগলী মেয়ে,
ছেলের কথায়
আমুর কোন
কষ্ট হয়
না রে
মা।
তাছাড়া তুইতো
আছিস, আমার
সব কষ্ট
ভুলিয়ে দিবি।
- এই যে শুনতে
পাচ্ছ ? আমু
ডাকছে।
সত্যি তুমি
পারও বটে
,যাচ্ছেতাই ছেলে একটা।
হেসে ফেলে কাঞ্চন।
- আয় বাবা কাছে
আয়।
ছেলে ধীরে ধীরে
এগিয়ে এসে
তার আমুর
পা দুটি
জড়িয়ে ধরে,
দু ফোঁটা
চোখের জল
পায়ে ঝরে
পড়ে।
ছেলের হাত
ধরে কাঞ্চন
তাকে কাছে
টেনে নেয়
।
- আয় এখানে বোস
বাবা।
তোরা দুজনেই
আমার কাছে
বস।
তোদের কিছু
কথা বলার
আছে আমার। তোদের
আজ আমি
একটা গল্প
শোনাব।
সেদিন সকাল থেকে
অঝোর ধারায়
বৃষ্টি পড়ছে। বোস
বাড়ির একমাত্র
বৌমা প্রসব
যন্ত্রনায় কাতর। বাড়ির একমাত্র
ছেলে সুধীর
বোস, তার
বউ সবিতার
সন্তান প্রসব
হওয়ার সময়
হয়ে এসেছে। তখনকার
সময়ে ডাক্তারের
এত চল
ছিল না।আঁতুর
ঘরে দাইমারাই
সব সামলে
নিত।
বোস বাড়ির
আঁতুর ঘরে
দাইমা উপস্থিত। একটু
বারবেলার দিকে
সবিতার সন্তান
প্রসব হলো। দাইমা
এসে খবর
দিল ছেলে
হয়েছে।
বোস বাড়িতে
খুশির আমেজ
বয়ে গেল। বড়কত্তার
আনন্দ দেখেকে,তার ছেলে
সুধীর আর
বৌমা সবিতার
ছেলে হয়েছে
যে, ঘরে
নাতি এসেছে। বড়কত্তা
আদর করে
নাম দিল
মণিকাঞ্চন, তার আদরের মণি।
ছেলে ধীরে ধীরে
বড় হতে
থাকে, যতক্ষণ
জেগে থাকে
সারা বাড়ি
মাতিয়ে রাখে।
প্রথম প্রথম কেউ
কিছু বুঝতে
পারে নি,
একটু বড়
হতেই মা-এর চোখে
প্রথম ধরা
পড়ে।
ছোট থেকেই
মণি একটু
মেয়ে ঘেঁসা। বাড়ির
মেয়েদের সাথে
সময় কাটাতে
ভালোবাসতো।
একদিন দুপুরবেলা
বাড়ির সব
কাজ গুছিয়ে
মা যখন
শোয়ার ঘরে
এল তখন
দেখে মণি
তার এক
কাপড় পড়েছে,
আয়নার সামনে
দাঁড়িয়ে সাজতে
ব্যাস্ত।
তখন তার
কত আর
বয়স হবে
এই নয়
কি দশ
বছর।
মাকে দেখে একটু
থতমত খেয়ে
যায় মণি। মা
জিঞ্জাসা করে
- মণি আয়নার সামনে
দাঁড়িয়ে কি
করছিস ? আর
শাড়ি পরেছিস
কেন?
- না মা কিছু
না, আমার
না তোমার
কাপড় পরতে
তোমার মতো
সাজতে খুব
ইচ্ছা করে।
- না বাবা ছেলেদের
এসব করতে
নেই, লোকে
নিন্দা করবে।
- কিন্তু আমার যে
ভালেলাগে।
- না বাবা আর
কোনদিন এরকম
করো না,
আমি যেন
আর কোনদিন
এরকম সাজে
তোমায় না
দেখি।
সেদিন হয়তো ভগবান
অলক্ষ্যে হেসেছিলেন।
এরপর মণির বয়স
যত বাড়তে
থাকে তার
কথাবার্তা, চালচলনে মেয়েলী ভাব তত
প্রকট হতে
থাকে।
স্কুলের বন্ধুরা, পাড়ার
ছেলেরা তাকে
দেখলেই নানা
কটুক্তি করতে
থাকে।
কিন্তু তাতে
মণির কিছু
যায় আসে
না, সে
নিজেকে নিয়েই
বিভোর হয়ে
থাকে।
এভাবেই স্কুলের গন্ডী
পার করে
সে।
বিপত্তি বাঁধে
তারপর।
ধীরে ধীরে
সে নিজেকে
চার দেওয়ালের
মধ্যে আবদ্ধ
করে ফেলে। মা-এর গোপন
বাক্স থেকে
টাকা চুরি
করে কিছু
মেয়েদের পোশাক
কিনে এনেছিল। সেই
পোশাক পড়ে
ঘরের মধ্যেই
ঘুরে বেড়ায়।
যে বড়কত্তা একদিন
আদর করে
তার নাম
রেখে ছিলেন
, তিনি এখন
মণিকে দু
চোখে দেখতে
পাড়েন না। বাবার
কাছে যাওয়ার
সাহস পায়না
মণি।
এই পোশাকে
বাবা একদিন
দেখে ফেলেছিল,
তারপর মারের
চোটে দুদিন
বিছানা ছেড়ে
উঠতে পারেনি
সে।
মা বোঝেন, সবকিছু
ধীরে ধীরে
হাতের বাইরে
চলে যাচ্ছে।তার
একমাত্র সন্তান
কে ডাক্তরের
কাছেও নিয়ে
গিয়েছিল কিন্তু
লাভ কিছু
হয়নি।
মা সবার অলক্ষ্যে
চোখের জল
ফেলেন।
চেষ্টা করেন
সবার থেকে
ছেলেকে আগলে
রাখতে।
মা ভেবে পান
না ছেলেকে
কি বলে
ডাকবেন , ছেলে
বলবেন ? মেয়ে
বলবেন ? কি
বলবেন ওকে
?
সমাজ যে নামে
ওদের মতো
মানুষদের কে
ডাকে সেই
নাম মুখে
আনতেও কষ্ট
হয় তার।
আর মণি ! ধীরেধীরে
সেও বুঝতে
পারে প্রতিনিয়ত
বদলে যাচ্ছে
সে।
বদলে যাচ্ছে তার
দেহের বিশেষ
অঙ্গ, বদলে
যাচ্ছে তার
মন।
অসহনীয় কষ্টে
বন্ধ ঘরের
দেওয়ালে মাথা
ঠোকে সে।অসহ্য
লাগে তার
চারপাশের মানুষজন
কে, শুধু
মা-এর
জন্য কষ্ট
হয় কিন্তু
কি করবে
সে ! মায়ের
জন্য তার
তো কিছুই
করার নেই।
অবশেষে একদিন সবার
অলক্ষ্যে ঘর
ছাড়ে সে। ভিড়ে
যায় বৃহন্নলাদের
দলে।
তার তাকে
সানন্দে বুকে
টেনে নেয়। গুরুজী
মানে ওদের
দলপতির আর্শীবাদ
নিয়ে শুরু
হয় তার
নতুন জীবন। মনের
কষ্ট কিছুটা
লাঘব হলেও
পুরোপুরি সহজ
হতে পারেনা
সে।
রাস্তাঘাটে মানুষের কটুক্তি পীড়া দেয়
তাকে।
এই বৃহন্নলা বস্তিতে
আসার পর,
দিনের কাজের
শেষে গুরুজী
যেটুকু টাকা
হাতে তুলে
দেয় তাতে
কিছুটা সে
নিজের সখ
আহ্লাদ মিটিয়ে
নেয়, কিছুটা
সঞ্চয় করে
রাখে।
প্রথম দিন তাকে
দেখে গুরুজী
বলেছিল - তুই
যদি একটু
সেজেগুজে বাইরে
যাস তো
তোকে চেনা
মুশকিল, অনেক
ছেলেই তোর
পিছনে লাইন
লাগাবে।
মনির বাড়ির কথা
মনে পরে। বাড়িতে
সবাই বলত
ছেলে মায়ের
মুখ পেয়েছে,
মাতৃমুখী ছেলেরা
নাকি সুখি
হয়।
এই কি
সুখ ! মনে
ভাবে সে। চোখের
কোনে একটু
জল জমে।
সেদিন বিকেলে বস্তির
কাছের বাজারে
গিয়েছিল মণি। কিছু
কেনাকাটি করার
ছিল।
দোকান থেকে
ফেরার সময়
হঠাৎ একটা
জোড়ালো শিটির
আওয়াজ কানে
এল।
কে যেন
বলে উঠল
- ওই শ্রীদেবী চললি
কোথায় ? কি
মাঞ্জা দিয়েছিস
মাইরি, কোন
নাগরের কাছে
গিয়েছিলি ?
মণির কান মাথা
গরম হয়েগেল,
সে ফিরে
তাকিয়ে বলল
- ছিঃ তোমরা এত
খারাপ কথা
কেন বল
গো ! আমরা
কি মানুষ
নই ! আমাদের
কি মন
বলে কিছু
নেই !
- হা হা হা
হা ছক্কাটা
কি বলে
দেখ, ও
নাকি মানুষ,
আবার ওর
নাকি মনও
আছে ! হা
হা হা
হা , তা
মন কাকে
দিলি সুন্দরী
! হা হা
হা হা
।
মণি চুপ করে
যায়।
ওর দলের
অন্য কেউ
হলে এখনি
গালাগালি আরম্ভ
করে দিত
কিন্তু মণির
মুখ দিয়ে
ওসব কথা
বেড়োয় না।
ওদের হাসির শব্দ
তার কান
কে বিদ্ধ
করে।
হায়নার আওয়াজের
সাথে ওদের
হাসির কোন
তফাৎ খুঁজে
পায় না
সে।
এভাবেই কেটে যায়
আরো কয়েক
বছর।
না বাড়ির
কেউ আর
খোঁজ করেনি
তার।
তবুও মায়ের
জন্য মন
কাঁদে তার।
সেদিন এক দুঃস্বপ্ন
দেখে শেষ
রাতে।
মা শ্বশানে
চিতার উপর
শুয়ে আছে,
আগুনের শিখা
ধীরে ধীরে
গ্রাস করছে
মাকে।
ঘুম ভেঙে
যায় তার।
দরজা খুলে বস্তির
ঘরের বাইরে
আসে।
ভাবে একবার
গিয়ে খবর
নেবে কেমন
আছে মা। ঘড়িতে
দেখে তিনটে
বাজে, এখন
বস্তির সবাই
গভীর ঘুমে। ভাবতে
ভাবতে বড়
রাস্তা ধরে
হাঁটতে আরম্ভ
করে।
কিছুটা যাওয়ার পর
হঠাৎ তার
কানে বাচ্চার
কান্নার আওয়াজ
আসে।
কিছুটা এগিয়ে
গিয়ে দেখে
রাস্তার ধারে
ঝোপের ভিতর
থেকে কান্নার
আওয়াজ আসছে। চারিদিকে
তাকিয়ে দেখে
কিন্তু কোন
লোকজন চোখে
পড়ল না। সে
ঝোপের দিকে
এগিয়ে যায়
দেখে একটা
বাচ্চা কেউ
কাপড়ে জরিয়ে
ফেলে দিয়ে
গেছে।
লাল পিঁপড়েতে
ছেঁকে ধরেছে,
যন্ত্রনায় চিৎকার করছে বাচ্চাটা।
মণির আর
মায়ের কাছে
যাওয়া হয়
না।
বাচ্চাটাকে তুলে নিয়ে বস্তিতে ফিরে
আসে।
বাচ্চাটার সারা শরীর পিঁপড়ের কামড়ে
লাল হয়ে
ফুলে আছে। ধীরে
ধীরে পিঁপড়ে
গুলো পরিষ্কার
করে নিজের
জন্য আনা
ক্রিম লাগিয়ে
দেয়।
বাচ্চাটা আরাম
পেয়ে একটু
চুপ করে
যায়।
মণি ভাবে
কে এভাবে
এই সদ্য
জন্মানো এই
ফুলের মতো
ছেলেটাকে ফেলে
দিয়ে গেল!
ধীরে ধীরে বস্তির
ঘুম ভাঙে। ভোরের
আলো ফুটে
ওঠে।
বাচ্চাটা একটু
আরাম পেয়ে
মণির কোলেই
ঘুমিয়ে পড়েছে। বাচ্চাটার
মুখের দিকে
তাকিয়ে থাকে
মণি ভাবে
কেন মানুষ
এত নিষ্ঠুর
হয় ! যারা
এই জঘন্য
কাজ করতে
পারে তারা
মানুষ ! আর
আমরা বৃহন্নলারা
মানুষের শরীর
নিয়েও ‘না-মানুষ’ হয়ে
রয়ে গেলাম
!
হঠাৎ বাচ্চাটা কেঁদে
ওঠে,হয়তো
খিদের জ্বালায়
কেঁদে উঠেছে
সে, কিন্তু
মণি কি
করবে ভেবে
পায় না। এদিকে
বাচ্চার কান্নার
আওয়াজ শুনে
তার ঘরে
ভীড় জমায়
সবাই।
নানা প্রশ্ন
করতে থাকে
সবাই।
মণি বলে
সে বাচ্চাটা
কুড়িয়ে পেয়েছে,
কিন্তু বিশ্বাস
করতে চায়
না কেউ। শেষে
গুরুজী আসতে
সবাই চুপ
করে যায়। মণি
সব কথা
খুলে বলে। গুরুজী
বলল - ঠিক
আছে তোর
কাছেই এখন
রাখ আর
বাচ্চাটার জন্য একটু দুধের ব্যবস্থা
কর, পরে
চিন্তা করা
যাবে বাচ্চাটাকে
নিয়ে।
এভাবে দিন
দশেক পার
হয়ে যায়। মণির
বাইরে বেড়োনো
বন্ধ হয়ে
যায়।
বাচ্চাটাকে নিয়েই কেটে যায় সারাদিন।
এদিক ওদিক থেকে
কিছু টুকরো
কথা ভেসে
আসে কানে। কানাঘুষোয়
মণি শুনতে
পায় যে
এই বাচ্চাটাকে
এই সমাজের
উপযুক্ত করার
তোড়জোড় চলছে। এই
কদিনেই নিজের
ছেলের মতো
ভালোবেসে ফেলেছে
মণি।
তার মন
অশান্ত হয়ে
ওঠে।
নিজের মনেই
বলে ওঠে
সে
- না কিছুতেই আমি
এ হতে
দেব না। একে
বাঁচাতেই হবে
কিছুতেই একে
ন-মানুষ
হতে দেব
না, ওকে
সম্পূর্ন মানুষ
করে তুলব।
https://jdelivery.rediff.com/ajaxprism/pix/grayblock.gifআমার ছেলের
পরিচয়েই বড়
হয়ে উঠবে
সে।
হয়তো তাতে
নিজের
পরিচয় লুকিয়ে রাখতে হবে,হয়তো
সমাজের সাথে
লড়াই করতে
হবে, কিন্তু
তাকে কিছুতেই
এই বৃহন্নলা
সমাজের একজন
হতে দেবনা।
সেই সেদিনের মতো
শেষরাতে ছেলেকে
নিয়ে বস্তি
ছাড়ে।
সম্বল বলতে
নিজের জমানো
কয়েক হাজার
টাকা,কিছু
জামাকাপড় ব্যাস
আর কিছুনা। তারপর
এশহর ওশহর
ঘুরতে ঘুরতে
শেষে হাজির
হয় এই
ময়নাদীঘি গ্রামে। কেন
জানিনা এই
গ্রামটা ভালোলেগে
যায় তার।
কয়েকদিন গ্রামের থেকে
দূরে স্টেশন
চত্বরে কাটিয়ে
দেয়।
লুকিয়ে ফেলে
তার না-মানুষের পরিচয়। তবুও
গ্রামের দু-একজনের কাছে
ধরা পড়ে
যায়।
সবকিছু লুকিয়ে
ফেললেও নিজের
কণ্ঠস্বর লুকোতে
পারেনা সে। কিছুটা
ছেলের জন্য
বাধ্য হয়েই
তাদেরকে নিজের
সব কথা
খুলে বলে। তার
সব কথা
শুনে কেন
জানি না
তারা সাহায্যের
হাত বাড়িয়ে
দেয়।
তার একসময়ের মণিকাঞ্চন
নামের থেকে
মণিকে বাদ
দিয়ে তাকে
নিরুদ্দেশে পাঠিয়ে দেয়।
গ্রামের সবাই জানল
যে মণি
বসু তার
স্ত্রী কাঞ্চন
বসুকে পরিত্যাগ
করে নিরুদ্দেশ
হয়ে গেছেন।
কাঞ্চন বসু তার
ছেলে জয়জীৎ
বসুকে নিয়ে
জীবনের লড়াই
শুরু করে।
এইটুকু বলে চুপ
করে যায়
কাঞ্চন।
সারা ঘর
নিস্তব্দ্ধ। মিষ্টু মৌ কারও
দিকেই চোখ
তুলে তাকাতে
পারেনা কাঞ্চন। বুকের
ভিতরটা কেমন
যেন হালকা
লাগে তার।
নরম হাতের স্পর্শ
পেয়ে চোখ
তুলে তাকায়,
দেখে মৌ-
এর চোখে
জল টলটল
করছে, মিষ্টু
মাথা নিচু
করে বসে
আছে।
ধীরে ধীরে
উঠে দাঁড়ায়
কাঞ্চন।
মিষ্টুর মাথায়
হাত রেখে
বলে - এই
আমার ‘না-মানুষের’ জীবন
কথা।
তবে তুই
চিন্তা করিসনা
বাবা, তোর
বাকী জীবনের
উপর আমি
আমার ছায়া
পড়তে দেব
না।
তুই তোর
মনের সাথি
খুঁজে পেয়েছিস,
মৌ খুব
ভালো মেয়ে
আমি এবার
নিশ্চিন্তে যেতে পারব। তোরা
সুখি হোস
বাবা আর
আমার এজীবনে
কিছু চাওয়ার
নেই।
এতক্ষণে মৌ চিৎকার
করে বলে
ওঠে
- কোথায় যাবে তুমি
? কেন যাবে
?
- কোথায় যাবো জানিনা
রে মা,
আর কেন
যাবো ! কারণ
আমি চাই
না আমার
এই অভিশপ্ত
জীবনের অশুভ
ছায়া তোদের
বাকী জীবনের
উপর পরুক। বাকী
জীবনটাতে যেন
তোদের কোন
কটুক্তি শুনতে
না হয়।
- অভিশপ্ত জীবন ! অশুভ
ছায়া ! আমু,
মা বাবার
দুটো সত্ত্বাই
যে তোমার
মধ্যে এক
হয়ে আছে।পুরাণে
আছে অর্ধনারীশ্বর। পুরুষ
নারী ছাড়া
অসম্পূর্ন, নারী পুরুষ ছাড়া অসম্পূর্ন। কিন্তু
তোমার মধ্যে
যে দুজনেরই
অধিষ্ঠান, আমু তুমিই যে অর্ধনারীশ্বর। তোমাকে
বাদ দিলে
যে মিষ্টু
আমি আমরা
দুজনেই অসম্পূর্ন
হয়ে যাব।
মিষ্টুর চোখের জল
বাঁধ মানে
না, কাঞ্চনকে
এসে জড়িয়ে
ধরে।
- আমু তুমি আমার
জন্মদাত্রী নও, তুমি যে আমার
প্রাণদায়িনী। তোমার এই অশুভ
ছায়াই যে
আমার প্রাণশক্তি। তোমার
মতো সম্পূর্ন
মানুষকে আমি
হারাতে চাইনা
আমু।
কাঞ্চন দুহাতে দুজনকে
জড়িয়ে ধরে।
গ্রামের এই ছোট্টঘরে
অর্ধনারীশ্বরের অদ্ভুত এক আলোছায়া জেগে
ওঠে।
******* সমাপ্ত ********
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন