দাদা মানে জেঠতুত দাদা,আমার চেয়ে বছর ছয়েকের বড় ৷ আমার বাবারা দুই ভাই, আমরা দুজন তেনাদের বংশের প্রদীপ ৷ আমি জন্মানোর পরে মা ভালো নাম রেখেছিলেন সাগ্নিক, ডাকনাম মুকুল ৷ আমাদের যৌথ পরিবার, জেঠু বড়কর্তা ৷ তার ওপর বাবা একখানি গর্হিত কাজ ততদিনে করে বসেছেন , সবার মতের বিরুদ্ধে গিয়ে মা কে বিয়ে করে ৷ তাই আমার নামকরণ যখন জেঠুর মন:পূত হলো না, বাবা তখন পুরো সিন থেকে হাপিস ৷
" এ কি বৌমা ? দুই ভাইয়ের মিলিয়ে নাম রাখতে হবে তো ৷ এটাই তো এই বংশের নিয়ম ৷ "
অগত্যা মায়ের দেওয়া নাম নাকচ , আমার নাম হলো রিন্টুর সাথে মিলিয়ে টিন্টু আর সৌমিত্রের সাথে সুমন্ত্র ৷
মজার কথা এর পরে আমাদের বংশের প্রায় সবার নাম মা রেখেছিলেন ৷ পিসতুতো ভাই বোনেরা, মামাত ভাই , দাদার বড় মেয়ে এবং সবশেষে আমার ছেলে , সবার নাম মা রেখেছেন ৷ ছেলের ডাকনাম অবশ্য আমি রেখেছি ৷ জিষ্ণু ৷ কলেজে পড়ার সময় এই নামটা প্রথম শুনে মনে হয়েছিল , ছেলে হলে এই নামই রাখব ৷ আরেকটা সাধ ছিল , মেয়ে হলে নাম রাখতাম লাইজু ৷ এ জন্মে আর সে সাধ পূরণ হলো না ৷
যাইহোক, নামকরণের ইতিহাস এবং সার্থকতার আলোচনা থাক ৷ যেটা দিয়ে শুরু করেছিলাম , দাদার তোতলামীর গপ্পো ৷
আমাদের গ্রামের বাড়িতে সম্পত্তির পরিমান বেশ ভালই ৷ বাস্তু ভিটে,পুকুর, ধানি জমি, বাগান বাড়ি , প্রায় খান শয়েক নারকেল গাছ, দেবোত্তর মন্দির ,মন্দিরের পাশেই বিয়েবাড়ি ভাড়া দেওয়ার জন্য ছোটমত রিসেপশন হল -সব যোগ করলে আয় মন্দ নয় ৷ দাদা কলকাতায় পড়াশুনো শেষ করার পর জেঠু আদেশ দিলেন গ্রামে ফিরে আসার ৷ পারিবারিক সম্পত্তির দেখাশুনোর সাথে বাবা এবং জেঠু ঠিক করলেন দাদাকে ব্যবসায় নামাতে হবে ৷ কি ব্যবসা ? চিংড়ি মাছের ভেরির ৷
দাদা তখন নব্য যুবক, কলকাতার আধুনিকতা গায়ে লেগেছে, তার ইচ্ছে কলকাতায় থেকে চাকরির চেষ্টা করবে ৷ কিন্তু দোর্দণ্ডপ্রতাপ বাপের সামনে মুখ খোলার সাহস নেই ৷ তাই অনিচ্ছাসত্বেও ব্যবসায় মনোনিবেশ করলো ৷ গোল বাঁধলো যখন তার কিয়ত্কাল পরে জেঠু নিদান দিলেন বিয়ের পিড়িতে বসার ৷ দাদা পুরোপুরি বেঁকে বসলো ৷ বিয়ে সে কিছুতেই করবে না এত কম বয়সে ৷ এমন নয় যে সে কাউকে কথা দিয়ে এসেছে , তবু সে বিয়ে করবে না ৷ জেঠু অনড়, মেয়ের বাড়িতে তিনি ততদিনে মেয়ে দেখে এসেছেন , প্রাথমিক কথাবার্তা সেরে এসেছেন, এখন দাদা বেঁকে বসলে ঘোর প্রেস্টিজ ইসু ৷ অগত্যা মাঠে নামলেন মা ও জেঠিমা , দাদাকে রাজি করলেন , " অন্তত একবার যা, মেয়ে দেখে আয় ৷ " গোঁজ হয়ে দাদা রাজি হলো ৷
বিজয়া দশমীর পরের দিন মেয়ে দেখতে যাওয়ার দিন ঠিক হলো ৷ দাদা, সাথে আমি আর আমার জেঠতুত দিদির বর ৷ গাড়িতে উঠেই দাদা গজগজ আরম্ভ করেছে, সাথে যোগ হলো তোতলামো ৷ (উত্তেজিত হয়ে পড়লেই দাদা তোতলায় ৷ )
" আমার প-প্রবলেম টা কেউ ব-বুঝছে না ৷ আমি এখন বিয়ে ক-করব না ৷ " এই বলে চলেছে সমানে ৷ মাঝরাস্তায় যখন গাড়ি থামল চা সিগারেটের জন্য, আমি আর জামাইবাবু আলাদা করে ডেকে বললাম , " শোন দাদা , জেঠুর সাথে বাওয়াল নিয়ে লাভ নেই , এঁড়ে পাবলিক ৷ কায়দা করে সামলা ৷ আমরা যাব, মেয়ে দেখব আর ফিরে এসে বলবি মেয়ে পছন্দ হয় নি ৷ ব্যাস , খেল খতম ৷"
বুদ্ধিটা সবার মনে ধরল ৷
আমরা মেয়ের বাড়িতে বেশ খাতির যত্ন পেলাম ৷ কিন্তু আমার মনে সর্বদা একটা খচ খচ করতে লাগলো , তোতলাবে না তো ? তাহলে আর ফিরে গিয়ে নাকচ করার ব্যাপারটা নিয়ে আরেকবার ভাবতে হবে ৷ দাদা কিন্তু না তুতলিয়ে সপ্রতিভ ভাবে কথা বলে চলল ৷
যথাসম্ভব বিনয়ী হয়ে আমরা বিদায় গ্রহণ করলাম ৷ গাড়ি ছুটছে বাড়ির পথে , পেছনের সিটে আমি আর জামাইবাবু, সামনের সিটে দাদা ৷
জামাইবাবু গলাখাঁকারি দিয়ে বলে , "তা হলে বাড়ি গিয়ে ওই কথাটাই হবে ? "
দাদার দৃষ্টি সামনের কাঁচে , খানিক চুপ থেকে বলে , "অপ-পছন্দের তো ক-ক-কোনো কারণ দেখলাম না ৷ "
আগেই বলেছি, উত্তেজিত হলেই দাদা তোতলায় ৷
" এ কি বৌমা ? দুই ভাইয়ের মিলিয়ে নাম রাখতে হবে তো ৷ এটাই তো এই বংশের নিয়ম ৷ "
অগত্যা মায়ের দেওয়া নাম নাকচ , আমার নাম হলো রিন্টুর সাথে মিলিয়ে টিন্টু আর সৌমিত্রের সাথে সুমন্ত্র ৷
মজার কথা এর পরে আমাদের বংশের প্রায় সবার নাম মা রেখেছিলেন ৷ পিসতুতো ভাই বোনেরা, মামাত ভাই , দাদার বড় মেয়ে এবং সবশেষে আমার ছেলে , সবার নাম মা রেখেছেন ৷ ছেলের ডাকনাম অবশ্য আমি রেখেছি ৷ জিষ্ণু ৷ কলেজে পড়ার সময় এই নামটা প্রথম শুনে মনে হয়েছিল , ছেলে হলে এই নামই রাখব ৷ আরেকটা সাধ ছিল , মেয়ে হলে নাম রাখতাম লাইজু ৷ এ জন্মে আর সে সাধ পূরণ হলো না ৷
যাইহোক, নামকরণের ইতিহাস এবং সার্থকতার আলোচনা থাক ৷ যেটা দিয়ে শুরু করেছিলাম , দাদার তোতলামীর গপ্পো ৷
আমাদের গ্রামের বাড়িতে সম্পত্তির পরিমান বেশ ভালই ৷ বাস্তু ভিটে,পুকুর, ধানি জমি, বাগান বাড়ি , প্রায় খান শয়েক নারকেল গাছ, দেবোত্তর মন্দির ,মন্দিরের পাশেই বিয়েবাড়ি ভাড়া দেওয়ার জন্য ছোটমত রিসেপশন হল -সব যোগ করলে আয় মন্দ নয় ৷ দাদা কলকাতায় পড়াশুনো শেষ করার পর জেঠু আদেশ দিলেন গ্রামে ফিরে আসার ৷ পারিবারিক সম্পত্তির দেখাশুনোর সাথে বাবা এবং জেঠু ঠিক করলেন দাদাকে ব্যবসায় নামাতে হবে ৷ কি ব্যবসা ? চিংড়ি মাছের ভেরির ৷
দাদা তখন নব্য যুবক, কলকাতার আধুনিকতা গায়ে লেগেছে, তার ইচ্ছে কলকাতায় থেকে চাকরির চেষ্টা করবে ৷ কিন্তু দোর্দণ্ডপ্রতাপ বাপের সামনে মুখ খোলার সাহস নেই ৷ তাই অনিচ্ছাসত্বেও ব্যবসায় মনোনিবেশ করলো ৷ গোল বাঁধলো যখন তার কিয়ত্কাল পরে জেঠু নিদান দিলেন বিয়ের পিড়িতে বসার ৷ দাদা পুরোপুরি বেঁকে বসলো ৷ বিয়ে সে কিছুতেই করবে না এত কম বয়সে ৷ এমন নয় যে সে কাউকে কথা দিয়ে এসেছে , তবু সে বিয়ে করবে না ৷ জেঠু অনড়, মেয়ের বাড়িতে তিনি ততদিনে মেয়ে দেখে এসেছেন , প্রাথমিক কথাবার্তা সেরে এসেছেন, এখন দাদা বেঁকে বসলে ঘোর প্রেস্টিজ ইসু ৷ অগত্যা মাঠে নামলেন মা ও জেঠিমা , দাদাকে রাজি করলেন , " অন্তত একবার যা, মেয়ে দেখে আয় ৷ " গোঁজ হয়ে দাদা রাজি হলো ৷
বিজয়া দশমীর পরের দিন মেয়ে দেখতে যাওয়ার দিন ঠিক হলো ৷ দাদা, সাথে আমি আর আমার জেঠতুত দিদির বর ৷ গাড়িতে উঠেই দাদা গজগজ আরম্ভ করেছে, সাথে যোগ হলো তোতলামো ৷ (উত্তেজিত হয়ে পড়লেই দাদা তোতলায় ৷ )
" আমার প-প্রবলেম টা কেউ ব-বুঝছে না ৷ আমি এখন বিয়ে ক-করব না ৷ " এই বলে চলেছে সমানে ৷ মাঝরাস্তায় যখন গাড়ি থামল চা সিগারেটের জন্য, আমি আর জামাইবাবু আলাদা করে ডেকে বললাম , " শোন দাদা , জেঠুর সাথে বাওয়াল নিয়ে লাভ নেই , এঁড়ে পাবলিক ৷ কায়দা করে সামলা ৷ আমরা যাব, মেয়ে দেখব আর ফিরে এসে বলবি মেয়ে পছন্দ হয় নি ৷ ব্যাস , খেল খতম ৷"
বুদ্ধিটা সবার মনে ধরল ৷
আমরা মেয়ের বাড়িতে বেশ খাতির যত্ন পেলাম ৷ কিন্তু আমার মনে সর্বদা একটা খচ খচ করতে লাগলো , তোতলাবে না তো ? তাহলে আর ফিরে গিয়ে নাকচ করার ব্যাপারটা নিয়ে আরেকবার ভাবতে হবে ৷ দাদা কিন্তু না তুতলিয়ে সপ্রতিভ ভাবে কথা বলে চলল ৷
যথাসম্ভব বিনয়ী হয়ে আমরা বিদায় গ্রহণ করলাম ৷ গাড়ি ছুটছে বাড়ির পথে , পেছনের সিটে আমি আর জামাইবাবু, সামনের সিটে দাদা ৷
জামাইবাবু গলাখাঁকারি দিয়ে বলে , "তা হলে বাড়ি গিয়ে ওই কথাটাই হবে ? "
দাদার দৃষ্টি সামনের কাঁচে , খানিক চুপ থেকে বলে , "অপ-পছন্দের তো ক-ক-কোনো কারণ দেখলাম না ৷ "
আগেই বলেছি, উত্তেজিত হলেই দাদা তোতলায় ৷
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন