দ্বারকানাথ ঠাকুর বৌবাজারের ৪৩টি বেশ্যালয়ের মালিক ছিলেন বলে একজন ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছিলেন।
তার প্রতি উত্তরে আমার সংগ্রহে থাকা এই লেখাটি ছিল l
আমি পোস্ট করতে চাইনি কারণ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিরুদ্ধে সেই প্রাইমারীস্কুল জীবন থেকে আজও শুনে আসছি।



নাজির ভাইয়ের সাথে আমার প্রত্যক্ষ যোগাযোগ নেই।
ফেসবুকেই যোগাযোগ।
এই যোগাযোগের মাধ্যমে ওনাকে যতটুকু জেনেছি তাতেই আমার মনে হল তাঁর পরামর্শ আমার মেনে নেওয়া উচিট।

রোহিত সেনঃ মলাটগ্রুপ :-




শ্রদ্ধেয় লেখক : কৃষাণু নস্কর l




কোনো তথ্যের পরে reference রূপে দুটো সংখ্যা থাকবে যার প্রথমটি নীচের তালিকায় থাকা বই বা পত্রিকার ক্রমিক আর দ্বিতীয়টি সেই বইয়ের পৃষ্ঠা সংখ্যা।
যেমন (৩, ১২৩) হলে তৃতীয় সূত্রে উল্লিখিত বইয়ের ১২৩ পৃষ্ঠা দেখতে হবে।
১) ডার্লিং ডোয়ার্কি – রঞ্জন বন্দোপ্যাধায় (প্রকাশক - শংকর মণ্ডল ২০১৮)
২) তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা - ১৮৪৮ শক (1926)
৩) UNDER THE RAJ : PROSTITUTION IN COLONIAL BENGAL by SUMANTA BANERJEE (Monthly review press, 1988)
৪) Calcutta: Myths and History -
S.N. Mukherjee ( Subarnarekha 1977)
৫) Essays in Urban History - S.N. Mukherjee ( Subarnarekha 1993)
৬) সমকালীন ষষ্ঠ বর্ষ (১৩৬৫)
৭) রবিজীবনী ১ম খণ্ড - প্রশান্তকুমার পাল (ভুর্জপত্র)
৮) Modern History Of The Indian Chiefs Raja and Zamindar Part 2 - Loke Nath Ghosh (Calcutta 1881)

বিভিন্ন রকমের ব্যবসা ছিল তাঁর।








" বা এভাবে " রবীন্দ্রনাথের দাদা দ্বারকানাথের কলকাতা নগরীতে ৪৩টা বেশ্যালয় ছিলো।"












৩৫৮-৬০ পৃষ্ঠায় আছে "ঋণশোধ বিষয়ে দেবেন্দ্রনাথের সাধুতা" নামক অধ্যায়টি এবং সেখানে এমন কোনো তথ্যের সন্ধান আমি পেলাম না।
এবং হ্যাঁ আমি ঐ ১৯৬২ সালের সংস্করণটিই দেখেছি।
ঐ বইটির ৩৫৬ পৃষ্ঠায় "১৮৪০ সালে দ্বারকানাথের জমিদারী ও কারবার " নামে একটি ক্ষুদ্র অধ্যায় আছে কিন্তু সেখানেও এ সংক্রান্ত কোনো তথ্যনেই।







এ প্রবন্ধটি 1993 সালে উপরোক্ত বইটি তে সংকলিত হয় যদিও তার আগেই 1977 সালে "Calcutta: Myths and History " নামক একটিবইতে সংকলিত হয়ে ছিল।
দুটি বইয়েরই প্রকাশক সুবর্ণরেখা।



We analysed HABS withthe aid of non quantitative sources and applied the Computer to read, to identify, to count to classify and co-relate our variables.
The Computer is asked to do the tedious job of counting, but decisions about the data are made by the researcher.
His power is however limited by the very nature of the Computer program.
Many individual characteristics of our variables cannot be quantified and are lost in the IBM Punch Cards.
To save some of this interesting information we have used a system of comment cards. --------
For instance we have been able to retain some information about a prostitute called Moynah Tackooraney who owned two lots in Moonshy Suderuddy's Lane in which there were 14 straw huts, one upper roomed house and a mosque.
We do not know who were her clients and whether they prayed in her mosque.
The comment cards also preserved such information as that of a brothel in 235 and 236 Bow Bazar St., owned by a member of Dwarkanath Tagore's family.
It had 43 rooms for prostitutes and its rental value was 140." (৪, ১০০-১), (৫, ১২-৩)
এখানে লক্ষণীয় ঐ শেষ বাক্যটি "....a brothel in 235 and 236 Bow Bazar St., owned by a member of Dwarkanath Tagore's family.
It had 43 rooms for prostitutes and its rental value was140."
এটিই তাহলে ঐ তথ্যের উৎস যে দ্বারকানাথ ৪৩ (তেতাল্লিশ) টি বেশ্যালয়ের মালিক ছিলেন ?

বলা হয়েছে দ্বারকানাথের পরিবারের কোনো সদস্য"।


দ্বারকানাথ তখন ১১-১২ বছরের বালক মাত্র।

দ্বারকানাথ উপার্জন করতে আরম্ভ করেন ষোলো বছর বয়সে অর্থাৎ আরও চারপাঁচ বছর পরে।






"আপন জ্ঞানপূর্ব্বক ও সেই উইল করিতেছি আমার পৈতৃক দৌলত নাই।
শ্রীশ্রী ঠাকুর ও জায়গা ও বাটী ও এলবাস পোষাক তাঁরা পিতল কাঁসার ও রূপা সোণার বাসনদিগর সেওয়ায় গহনা পৈত্রিক যা কিছু আছে ইহার তিন অংশের এক অংশ আমি পাইব দুই অংশ ভায়ারা পাইবেন পৈত্রিক ও আমার দত্ত সোনা রূপার গহনার অংশ হইবেক না, জাহির থাকে যে চিহ্ণিত আছে সে তাহারই থাকিবে।
আর সংসারের খরচ ও ধর্মতলার বাটীদিগর বানাতে মবল গহায় আমার নিজ ঢাকা বিং খাতা রোকড় ভায়াদিগের স্থানে আমার পাওনা আছে এবং অন্য অন্য লোকের স্থানেও যে পাওনা আছে আমার দেনা নাই এই সকল পাওনা ও পৈত্রিক হিস্যা ও আমার স্বোপার্জ্জিত দৌলত, সোনা রূপার বাসন ও এলবাস পোষাক ও জেলা যশোহরের মোতালক পরগণে বিরাহিমপুর জমিদারী ও সহর কলিকাতার মধ্যের খরিদা জায়গা ওগায়রহ সেওয়ায় রতন রাড়ের দরুন বাটী আমার সোপার্জ্জিত ও পৈত্রিক হিস্যা যাহা কিছু, সব তোমাকে দিলাম রতন রাড়ের দরুন বাটী খরিদ করিয়া তৎকালীন তোমার মাতাকে দিয়াছি এবং সন ১২১৩ সালে তোমার মাতার পূণ্যক্রিয়া অর্থে আমি তুষ্ট হইইয়া সিক্কা ১০,০০০ দশ হাজার টাকা দিয়াছি এ টাকা এবং রতন রাড়ের দরূণ বাটী ইহার সহিত তোমার এলাকা নাই ইহার দান বিতরণ এক্তার তোমার মাতার।
এখনও তুমি নাবালক একারণ এই জমিদারি ও গায়রহ জে কিছু বিষয় তোমাকে দিলাম ইহার কর্ম্মকার্য যাবৎ আমি বর্ত্তমান থাকিব তাবৎ আমিই করিব আমার অবর্তমানে যাবৎ তুমি বয়সপ্রাপ্ত না হও তাবৎ পরগণাদিগর এ সকল বিষয়ের কৰ্ম্মকাৰ্য্য ও সহী দস্তখত ও বন্দবস্ত ও হুকুম হাকাম সকলি তোমার মাতা করিবেন তুমি প্রাপ্ত বয়স হইলে জমিদারিদিগর আপন নামে হজর লেখাইয়া এবং আপন এক্তারে আনিয়া জমিদারির ও সংসারের কর্ম্ম কার্য ও জমিদারির বন্দবস্ত ও খরচপত্র ও গায়রহ মাতার অনুমতি পরামর্শে তুমি করিবা এবং জাবত তোমার মাতা বর্ত্তমান থাকিবেন ভাবত পরগণার মুনাফা ও গায়রাহ যাহা কিছু, আমদানির তহবিল তোমার মাতার নিকট যেমন আমি রাখিতাম তুমিও সেই মতো রাখিবা।
আমি ও তোমার মাতা যাবৎ বর্ত্তমান ও বর্ত্তমানা থাকিবেন ও থাকিব তাবত আমারদিগর পণ্য ক্রিয়া আদি যে কিছু, খরচপত্র এই দৌলাত হইতে পাইব।
আমার সোপার্জিত জায়গার কবালা ও বরনামা ও গায়রহ আমার স্থানে ছিল!
নিস্তীমতো তোমাকে দিলাম পৈত্রিক জায়গা ও বাটীদিগরের কবালা ও পাট্টা ও গায়রহ কাগজ রামমণি বাবুর স্থানে আছে জায়গা হিস্যা চিহ্ণিত মতো বুঝিয়া লইবা এতদৰ্থে উইলপত্র লিখিয়া দিলাম।" (৬, ৫৪৯) l
ঐ ইচ্ছাপত্রের সঙ্গে উল্লিখিত সম্পত্তির একটি তালিকাও ছিল যেটি এই প্রকার l --------
"জায় জায়গা সোপার্জ্জিত জমিদারি পরগণে বিরাহিম- -পুর মোতালকে , জেলা জসোহর - ১
সহর কলিকাতার মধ্যে ডোম পিদুরু সাহেবের দরুন জায়গা – ১ l
বামদেব বাইতির দঃ জায়গা – ১
কৃষ্ণচন্দ্র রায় কবিরাজের দঃ জায়গা-
তিলক বসাকের দঃ জায়গা – ১
শঙ্কর মুখোপাধ্যায় দঃ বাটী-১
রামকিশোর মিস্ত্রীর দঃ জায়গা – ১
রামনিধি সাহার দঃ বাটী – ১
রতনরাড়ের দঃবাটী- এবাটী তোমারমাতাকে দিয়াছি–১
পৈত্রিক --- নিজবাটী- ১, ধর্ম্মতলার বাটী - ১,
বড়বাজারের বটতলার বাটী - ১
জানবাজারের হাড়িটোলার জায়গা – ১
ডোমটোলার জায়গা - ১ , মাহুতের দঃ জায়গা- ১,
কলিঙ্গা ব্রহ্মচারীর দঃ জায়গা - ১
পরগণে মাগুরা মৌজে ফতেপুর ব্রহ্মত্তর জমি - ১
মৌজে কপিলেশ্বর ব্রহ্মত্তর জমি - ১ "
(৭, ৮)এখানে কি বৌবাজারের২৩৫ ও২৩৬ নং premises অর্থাৎ জাগা বা বাড়ির কোনো উল্লেখ পেলেন ?






কারণটা জানা যায় ঐ গবেষণাপত্রটি খুঁটিয়ে পড়লে যেখানে বলা হচ্ছে....... ,
"A list of 'famous families' was made on the basis of our studies of the lists found in the Foreign Miscellanous Series, National Archives of India, in L. N. Ghose's work and in the proceedings and reports of public meetings and associations as reported in the newspapers. When we made our list we took into account the political and social allegiance of a particular kinsgroup, hence we have two Tagore families and two Deb families. On the other hand there were leading men like Rev. KrishnaMohun Banerjee whohad no families With the aid of L. N. Ghose, Sambandha Nirnay'- and N. N. Basu's Banger Jatiya Itihas, genealogies of most of these 'famous families' were made. Each 'family' was given a number ; all 'family' members whose names appear in the family genealogy and who lived between c. 1800 and 1870, received a family number. For instance no. 3 refers to all members of Gopimohun Deb's family. " (৪, ৯৯-১০০)
অর্থাৎ কিনা, বিখ্যাত পরিবারগুলির তালিকা তৈরি করা হয়েছে বিভিন্ন সূত্র থেকে যাদের মধ্যে অন্যতম হলো L. N. Ghosh বা লোকনাথ ঘোষ রচিত Modern History Of The Indian Chiefs Raja &Zamindar Part 2. পূর্বোক্ত সূত্রে উল্লিখিত পৃষ্ঠার পাদটীকা দ্রষ্টব্য l
এবার ঐ বইটির পাতা ওল্টালেই দেখা যাবে ঠাকুর বংশের বড় তরফ অর্থাৎ দর্পনারায়ণের পরিবারের প্রধান রূপে প্রথম (দর্পনারায়ণ বিষয়ে সংক্ষিপ্তাকারে বলার পর) বলা হয়েছে গোপীমোহন ঠাকুরের বিষয়ে।
(৮, ১৬৩) আর ছোট তরফ অর্থাৎ নীলমণির পরিবারের প্রধান পুরুষ রূপে বর্ণনা (নীলমণি ঠাকুরের সন্তানদের নামোল্লেখের পর) করা হয়েছে দ্বারকানাথকে (৮,২১৫)।






সে কারণে পরিবারের সর্বাপেক্ষা নামজাদা ব্যক্তিটির নামোল্লেখ করা হয়েছে পরিবার টিকে চিহ্নিত করার জন্য। এবং সর্বাপেক্ষা নামজাদা ব্যক্তিটিকে কেমন করে নির্বাচন করা হয়েছে তা আগেই বলা হয়েছে।
তাহলে দেখা যাচ্ছে, দ্বারকানাথ পতিতাপল্লী চালাতেন এই অভিযোগের আদৌ কোনো প্রামাণ্য সূত্র বা reference নেই। প্রত্যক্ষ প্রমাণ তো নেই-ই এমনকি পরোক্ষ কোনো প্রমাণও নেই। তবুও এই অপপ্রচার চলছে এবং বিভিন্ন অপ্রামাণ্য সূত্র, secondary এমনকি tertiary সূত্র উল্লেখ করে তথাকথিত গবেষণাগ্রন্থ পর্যন্ত লেখাও ছাপানোহচ্ছে। কিছু স্বঘোষিত গবেষক নিজেদের কপোলকল্পনাকে সত্য বলে দাবী করে শুধু দ্বারকানাথ নন এমনকি রবীন্দ্রনাথের নামও টেনে আনছেন এমন একটি ঘৃণ্য ব্যবসায় যার সঙ্গে তাঁদের কোনো সম্পর্কই ছিল না।
প্রকৃত গবেষণা যাঁরা করতে চান তাঁদের উচিত ঐ ১৮০৬ সালের House Assessment Book থেকে প্রকৃত নামটা উদ্ধার করে এই বিভ্রান্তি ও অপপ্রচারের অবসান ঘটানো।
যথেষ্ট সময় সুযোগ পেলে এ প্রবন্ধের লেখকও সে কাজে আত্মনিয়োগ করবে।
যদি ঐ বিশেষ তথ্য টি উদ্ধার করতে পারি তাহলে অবশ্যই সকলকে জানাব।
সকল রেফারেন্স মিলিয়ে দেখার অনুরোধ রইল।আশা করি যারা কনফিউ- -শনে ছিলেন তারা উত্তর পেয়েছেন।


অগ্নিবীর নামক গ্রুপ থেকে প্রাপ্ত।
Courtesy. Abdul Latif.
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন