বিধান সরণীর এই বাড়িটা। এইখানে সংঘটিত হয়েছিল মাত্র তিনজন বাঙালি বিপ্লবীর সাথে একদল সশস্ত্র ব্রিটিশ পুলিশের গানফাইট। যা ঐতিহাসিক অলিন্দ যুদ্ধের মতই দুর্ধর্ষ, ভয়াবহ। যে কাহিনী বিদেশীর খুনে গুলি, বন্দুক, বোমার আগুনে আজো রোমাঞ্চকর।
চন্দননগরের পুলিশ কমিশনার কুইন সাহেবকে খতম করার পরে দুঃসাহসী দীনেশ মজুমদার ও নলিনী দাস আশ্রয়ের সন্ধানে ছিলেন। পুলিশ তাদের খ্যাপা কুকুরের মত খুঁজছে। ইতিমধ্যে দীনেশ টেগার্টকে হত্যা করতে গিয়ে অল্পের জন্য ব্যর্থ হয়েছেন। তাঁর যাবজ্জীবন কারাদন্ড হলে তিনি মেদিনীপুর জেল ব্রেক করে পালান ও দু বার স্টেটসম্যানের সম্পাদক ওয়াটসনকে হত্যা চেষ্টার অভিযোগে ফেরার ছিলেন। নলিনীও হিজলী জেল পলাতক আসামী। যার মাথার ওপর ৫ হাজার টাকা পুরষ্কার।
অনেক অনুসন্ধানের পর দঃ ২৪ পরগণার মল্লিকপুরের বাসিন্দা নারায়ণ ব্যানার্জী ও তার স্ত্রী শৈলবালা এই বাড়িটি ভাড়া নিয়ে শেল্টার দেন দীনেশ মজুমদার, সাথী নলিনী ও অনুশীলন সমিতির জগদানন্দ মুখার্জীকে।
পুলিশ কিভাবে সন্ধান পেয়ে যায় এই গোপন আস্তানার। ২২ মে, ১৯৩৩ রাত্রের শেষ প্রহর, গোটা কলকাতা যখন ঘুমন্ত, কাউকে প্রস্তুত না হতে দিয়ে, বিপুল বাহিনী নিয়ে আক্রমন করে বসে তাদের হাইড আউট।
দোতালা থেকে শুরু হয় মরণপন সম্মুখ যুদ্ধ। বিনয়-বাদল-দীনেশের মত ব্যাঘ্রবিক্রমে লড়লেন নলিনী-জগদানন্দ-দীনেশ, অন্তিম বুলেটটি নিঃশেষ না হওয়া অব্দি। আহত হয়ে ভূমিশয্যা নিল ডিএসপি পোলার্ড আর ডিআইবি ইন্সপেক্টর মুকুন্দ ভট্টাচার্য। তিন বিপ্লবীই রক্তাক্ত অবস্থায় ধরা পড়েন। বিচারে নলিনী ও জগদানন্দের যাবজ্জীবন দ্বীপান্তর আর যক্ষারোগে মৃত্যুপথযাত্রী দীনেশ মজুমদারের ফাঁসি হয়ে গেল আলিপুর সেন্ট্রাল জেলে।
স্বাধীনতাকামী তিন যুবকের অসম রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের স্মৃতি বুকে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ১৩৬/৪ কর্নওয়ালিশ স্ট্রীটের বাড়িখানা। যদি খোঁজেন, ফুটপাতের দোকানে প্রায় ঢেকে যাওয়া একটা ধুলিমলিন স্মৃতিফলক আপনার চোখে পড়লেও পড়তে পারে।
ওরা আকাশে জাগাতো ঝড়, অথচ ওদের স্মৃতি বলতে কলকাতা শহরে এটুকুই।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন