সোমবার, ২২ জানুয়ারী, ২০১৮

বাজারী সম্পাদকীয় ~ রেজাউল করীম

আনন্দবাজার ধ্বজাধারী বাজারি কাগজ। বাজার অর্থনীতি তার নিয়ামক। মুনাফাখোর এই কাগজ বোঁচকাবৃদ্ধির জন্য কত নীচে নামতে পারে তার প্রতিযোগিতা করছে। হরিশ মুখার্জিরা কাগজ প্রকাশ করেছিলেন জনশিক্ষার জন্য। বাজারি কাগজ অর্থের জন্য নিজের বিবেক বিক্রি করে দেয়, সত্য ও ন্যায়ের মত অলীক স্বপ্নের জন্য শব্দ খরচ তারা করবে না জানি। একজন চিকিৎসককে কুৎসিত আক্রমণ  করে শাসকের কাছে নিজের বিজ্ঞাপন পাওয়ার যোগ্যতা বাড়ানোর জন্য কত নীচ হতে পারে তা আনন্দবাজার তার নিত্যনতুন নজীর সৃষ্টি করছে। সঞ্জয় রায়ের ঘটনার  সুষ্ঠু বিচারের স্বার্থে কয়েকটি জিনিস মনে রাখা দরকার। 1) পরপর অনেকগুলি সরকারী হাসপাতাল কেন তাকে ভর্তি নেয় নি?  2) বেসরকারী হাসপাতালে কী উপায়ে তিনি জীবিত ছিলেন?  ও 3) সরকারী হাসপাতালে স্থানান্তরের অবব্যহিত পর কেন তিনি মারা যান? সরকারের উচিত নিরপেক্ষ তদন্তকারী দিয়ে ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করা।
সাম্প্রতিক আমরি কাণ্ডে চিকিৎসককে দায়ী করে  আনন্দবাজার সম্পাদকীয় লিখেছে। চিকিৎসক ছুটি কাটাচ্ছেন আর শিশুর মা শোকে কাতর  এই মন্তব্য করে আনন্দবাজার প্রকৃতপক্ষে চিকিৎসকদের  বিরুদ্ধে জনমত তৈরী করার চেষ্টা করছে। কিন্তু, শিশুটির মা চিকিৎসককে দায়ী করে কিছু বলেছেন বলে জানা নেই। পোস্ট মর্টেম রিপোর্টেও চিকিৎসায় গাফিলতির কোন প্রমান নেই। প্রকৃতপক্ষে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক শিশুটির প্রাথমিক সমস্যার দ্রুত নিরাময় করেছিলেন। ফেব্রাইল কনভালসানের পরবর্তী পর্যায়ে চিকিৎসক উপস্থিত ছিলেন না। একজন চিকিৎসক যিনি সারাজীবন মানুষের জন্য কাজ করে গেছেন তার কি সমাজের কাছে এটাই প্রাপ্য? আনন্দবাজার কি কখনো এই প্রশ্ন করেছে:১) কেন এই রাজ্যে চিকিৎসা পরিকাঠামো গড়ে ওঠে নি। ২) এ রাজ্যে ২৫০০০০ বেড দরকার। কেন তার মাত্র অর্ধেক আছে ? ৩) এ রাজ্যে চিকিৎসকের সংখ্যা এত কম কেন? এখানে চিকিৎসক:রোগীর অনুপাত মাত্র ১: ১৭৫০ কেন?  ৪) কেন রোগীর ব্যক্তিগত খরচ ৮০%?  ৫) কেন সরকারী আমলা মন্ত্রী বা ভুঁইফোঁড় এম পি দের জন্য বেসরকারী হাসপাতালের বিলের টাকা সরকার মেটায় আর গৌতম পালদের সর্বস্ব বিক্রি করে চিকিৎসার খরচ মেটাতে হয়!! আনন্দবাজার কী কখনো এই প্রশ্ন উত্থাপন করেছে যে কেন জনদরদী সরকার থাকা সত্বেও বেসরকারী হাসপাতাল গড়ে ওঠে আর শাসকদলের সাংসদরা সেইসব হাসপাতালে সরকারী খরচে যতদিন খুশি ভর্তি থাকেন? তাদের বেশিরভাগ কোথা থেকে সেই বিপুল খরচ বহন করেন যখন রাজ্যের প্রায় ৬ লক্ষ লোক চিকিৎসার খরচ মেটাতে গিয়ে প্রতি বছর নতুন করে দরিদ্র হচ্ছেন? 
যে আনন্দবাজার চিকিৎসকদের নৈতিক মান নিয়ে নানা প্রশ্ন করে তাদের কাগজের বিজ্ঞাপন পাতা কেন হাতুডে চিকিৎসকদের বিজ্ঞাপনে ভর্তি তার জবাব দিতে পারবে? তারা একদিকে দুর্নীতিগ্রস্ত নেতাদের বিরুদ্ধে একটা কথা খরচ করার সাহস দেখাবে না, নিজেদের কাগজের পাতায় পাতায় অনৈতিক ব্যবসার নজির রাখবে আর চিকিৎসকদের বিচারালয় খুলে বসবে এই অন্যায় মেনে নেওয়া যাবে না। একজন চিকিৎসক দায়ী কিনা তা আনন্দবাজার ঠিক করবে না মেডিকেল কাউন্সিল ঠিক করবে? কোন অধিকারে আনন্দবাজার চিকিৎসকের বিশ্রাম নেওয়ার অধিকার নিয়ে প্রশ্ন তোলে? চিকিৎসক কি ভগবান যে ইচ্ছা করলেই  মৃত্যুকে রোধ করতে পারে? সে তার সাধ্যমত চেষ্টা করেও অনেককে বাঁচাতে পারে না কিন্তু তাই বলে কেউ মারা গেলেই চিকিৎসককে আসামীর কাঠগডায় দাঁড় করিয়ে সংবাদপত্রে অন্যায় বিচার বন্ধ হোক।
চিকিৎসকদের ও ভাবতে হবে পয়সা খরচ করে এই জঘন্য সাংবাদিকতার নজির তারা ক্রয় করবেন না উদয়াস্ত পরিশ্রম শেষে সেই সময়ে নিজের পরিবারকে সময় দেবেন!! 


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন