মাননীয় অভিরূপ সরকার সমীপেষু,
আপনি গত তেইশ তারিখে আনন্দবাজার পত্রিকাতে ক্যানো মা-মাটি'র সরকার সরকারী কর্মচারীদের ডিএ দিচ্ছেনা সেইটে বোঝাতে গিয়ে কিছু যুক্তি দিয়েছেন আর লাস্টে কয়েছেন যে আগের সরকার নাকি প্রছন্নভাবে মধ্যবিত্তের পক্ষে ছিল এবং আপনারা খোলাখুলিভাবে গরিবের পক্ষে। গোটাটা পড়ে সেই গরিবের ভাষাতে আপনাকে কটা মন ভালো করা রেজ্জাকীয় সাব-অল্টার্ন ফ্রিডম অফ এক্সপ্রেসনের নমুনা দিতে যারপরনাই ইচ্ছে করছিল। দিচ্ছিনা, কারণ আপনি একে 'সুশীল', তার উপরে 'বুদ্ধিজীবি' এবং সর্বোপরি পে কমিশনের চেয়ারম্যান (যদিও লেখাটা পড়ে বোঝা গেছে যে সরকারে এলে আপনি ডিএ দেওয়ার নামে কাঁচকলা দেখাবেন)।
আপনি অর্থনীতি'র পন্ডিত লোক, আপনার ডিগ্রি ইস্ট জর্জিয়া থেকে আসেন নি, আপনার পিএইচডি টাও যাদবপুরের কি নর্থবেঙ্গলের কেউ টুকে দেন নি- এতদূর নিয়ে আমাদের কারুরই কোনো দ্বিমত নেই।
এখন রাজ্যের অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো নয়, সুতরাং কেন্দ্রীয় হারে ডিএ দেওয়া সম্ভব নয়, অ্যাদ্দূর সব্বাই জানি। এইটে বকার জন্য আপনার জ্ঞান দেওয়াটা জরুরী নয়। এট্টু সমস্যা থেকে যাচ্ছে পরের অংশটা নিয়ে, যেখানে আপনি প্রমাণ করতে চেয়েছেন যে ডিএ না দিয়ে আপনারা সেই টাকায় গরিবের উন্নয়নে খরচ করেছেন।
আপনার ধরে নেওয়া হিসেবে সরকারী অনুদানপ্রাপ্ত ক্লাবের সংখ্যা সাড়ে-পাঁচ হাজারের বেশি হবেনা। এইটে ডাহা মিথ্যে কথা সার। ২০১৫ তেই সরকারী অনুদানপ্রাপ্ত ক্লাবের সংখ্যা ৭০০০। ২০১২ সালে অনুদান দেওয়া শুরু হয়েছিল ১৫.৫ কোটি টাকা দিয়ে, ২০১৫-১৬ তে সেটা দাঁড়িয়েছে ১৫০ কোটি টাকায়। এই হিসেবে গত তিন বছরে ৩০০ কোটির বেশি টাকা ক্লাবগুলোকে অনুদান দেওয়া হয়েছে। আর ইয়ে, ২০১৫-১৬ বাজেট বক্তব্যে অমিত মিত্র সগর্বে জানাচ্ছেন যে সাহায্যপ্রাপ্ত ক্লাবের সংখ্যা ১৪০০০। আপনার জন্য প্রামাণ্য লিঙ্কগুলোও থাকছে (http://indianexpress.com/article/cities/kolkata/didi-doles-out-rs-105-cr-for-clubs/, http://indiatoday.intoday.in/story/west-bengal-polls-mamata-banerjee-tmc-left-cpm/1/622050.html )
এখন যদি বুঝিয়ে দ্যান যে এই ক্লাবগুলোকে টাকা দিয়ে কোন গরিবের কিভাবে উপকার হয়েছে তাহলে উপকৃত হই।
অথবা, অনুষ্ঠান বাড়ি করে ভাড়া দিয়ে টাকা রোজগার আর বাৎসরিক পূজোটা ভালো করে করা ছাড়া এই টাকায় বাংলার কোন খেলার উন্নতি হয়েছে সেইটে তথ্যপ্রমাণ দিয়ে বোঝালেও হবে। এবং হ্যাঁ, ক্লাবগুলো সবই কিন্তু তৃণমূলের নেতা-চামচাদের বাছা। সত্যিকারের যে কটা ক্লাব খেলোয়াড় তৈরী করে তাদের পাত্তাই দেওয়া হয়নি।
ক্লাবের ছেলে আর কর্তাদের দিয়ে ভোটের সময় বিরোধী ভোটারদের চমকানোটা কি গরিবের উন্নয়নের মধ্যে ধরেছেন? তাহলে অবশ্যি, আপনি দিদিমণির দুষ্টু ভাই। কিস্যু বলার নেই।
আপনি লিখেছেন যে উৎসব বাবদ খরচ হয় বছরে আরো চল্লিশ কোটি টাকা। সিরিয়াসলি সার, আপনার অ্যাত্তো জ্ঞান, রাতে ঘুম হয় তো?
শুধু কলকাতা ফিল্ম ফেস্টিভ্যালেই কত খরচ হয় আপনার ধারণা আছে? ২০১৪তেই সেরা সিনেমা'র জন্য প্রাইজ মানি ছিল ৫১ লাখ টাকা। অফিসিয়ালদের মতে খরচ ছাড়িয়েছিল ২০ কোটি টাকার বেশি (নিউজ লিঙ্ক http://www.telegraphindia.com/1141107/jsp/frontpage/story_19008855.jsp )।
অবশ্যি নিন্দুকেরা বলে যে সেবার টাকা যুগিয়েছিলেন সুদীপ্ত সেন যার অনিদ্রার রোগ সারাতে দিদিমণি'র লেখা কবিতার বইগুলো থেরাপি হিসেবে ব্যবহার করা হত।
মুখ্যমন্ত্রী তার 'মিনি-মহাকরণ' এর নামে জেলায় জেলায় যে বিশাল এসি প্যান্ডেলে রাজসভা চালান, গোটা জেলার কর্তাব্যক্তিরা এসে হাজির হয়, ঢালাও খাওয়া-দাওয়া হয়।তার খরচ জানেন? গড়ে ৭০-৭৫ লাখ টাকা। এও শোনা যায় যে সে প্যান্ডেলের বরাত নাকি এক নির্দিষ্ট ঘেসোকেই দেওয়া হয়।
কটা মেলা হয় বছরে তা জানেন আপনি? আপনার অর্থমন্ত্রীও গুণতে পারেন নি। তিনিও বাজেট বক্তব্যে 'Dance Drama Festival, Mati Utsav, Natya Mela, Bangla Sangeet Mela,Children's Film Festival, Tele Award, Paschimbanga Charukala Utsav' এইগুলোর নাম লিখে তাপ্পর শেষে 'etc' বসিয়েছেন (সোর্স- ওয়েস্ট বেঙ্গল বাজেট স্পিচ, ২০১৫-১৬, পেজ-৫০)।
যাকগে, মেলাগুলোর আয়োজন করে মূলতঃ বিভিন্ন সরকারী দপ্তর। এর মধ্যে তথ্য সংস্কৃতি দপ্তর প্রধান, এইটা নিশ্চয়ই জানেন। তাদের বাজেট-বরাদ্দ দেখলেই মেলার খরচের হিসেব পাওয়া সম্ভব। অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র তার বাজেট বক্তব্যে জানিয়েছেন যে ২০১৪-১৫ সালে তথ্য সংস্কৃতি দপ্তরের জন্য বরাদ্দ ছিল ১৬৫ কোটি টাকা। ২০১৫-১৬ সালে সেইটে বাড়িয়ে করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে ২০০ কোটি টাকা। ক্রীড়া আর যুবকল্যাণ দপ্তরের জন্য বরাদ্দ ছিল ২৫২ কোটি টাকা, সেইটে বাড়িয়ে ৩৪০ কোটি টাকা করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
এরমধ্যে সবটা নিশ্চয়ই মেলার জন্যে খরচ হয়না। কিন্তু বড় অংশটা নিশ্চয়ই হয়। তাহলে এই খরচগুলো মিলিয়ে আপনার গপ্পে দেওয়া মাত্তর চল্লিশ কোটির হিসেব তো জাপানী তেল দিয়েও দাঁড়াচ্ছেনা সার।
বাজেটের লিঙ্কটা দিলাম না। আপনি সরকারী লোক। নিশ্চয়ই নেটে সার্চ মারলেই পেয়ে যাবেন। যেটা জানার সেটা হল এই গুচ্ছের টাকা উড়িয়ে সঠিকভাবে ঘেসো-ঘনিষ্ঠ ঠিকাদারদের কন্ট্রাক্ট পাইয়ে দেওয়া ছাড়া আর কিভাবে গরিবের উন্নতি হয়েছে সেইটা বোঝাবেন প্লিজ।
আপনি লিখেছেন যে বিস্তর উন্নয়ন হয়েছে। বলছেন যখন তখন নিশ্চয়ই কোথাও না কোথাও হয়েছে। MNREGA বা সোজা বাংলায় একশো দিনের কাজের হিসেব দেখছিলাম যাতে প্রায়শই রাজ্যসরকার নিজেদের এক নম্বর বলে দাবী করে থাকেন। স্টেট ওয়াইজ রিলেটিভ পারফরম্যান্স অনুসারে পশ্চিমবঙ্গ এইমুহুর্তে ১০ নম্বরে। মিজোরাম,অরুণাচল, জম্মু-কাশ্মীর, নাগাল্যান্ড, আসাম, পাঞ্জাব,বিহার, ছত্তিশগড় আর সিকিমের পিছনে। লিস্ট অনুযায়ী, নথিভুক্ত তফশিলীদের ৪১% কে এখনও কাজ দেওয়া যায় নি। এবং ১৫ দিনের মধ্যে টাকা মেটানো হয়েছে মাত্র ২৫.৬১% কে। দারুণ গরিব প্রেম, তাই না?
(রেগার লিঙ্ক- http://164.100.129.6/netnrega/st_weightage_drill.aspx?lflag=eng&fin_year=2015-2016&source=national&labels=labels&Digest=+WYLWwx19OhhVOg6q39p/g
)
বড়বাজারের উড়ালপুলটার কথা ভুলবেন না সার। বাম আমলে টেন্ডার হয়েছিল, তাই আপনাদের যুক্তিতে আপনাদের সরকারের আমলেও বামেরাই সেতুটা বানিয়ে যাচ্ছিল আর কি। ২৭ জনের প্রাণ গিয়েছে। পরে বেরিয়েছে যে সেতুর মালমশলা সরবরাহ করতেন এক ঘেসো নেতার ভাইপো। দেখার দায়িত্বে কমিটিতে ছিলেন একাধিক ঘেসো নেতা। এক নেতা টিভিতে বলেওছেন যে তিনি জানতেন নকশায় গলদ আছে কিন্তু রাজ্যসরকারের খরচ বাড়বে বলে চেপে গেছিলেন।
মাত্র ২৭টা প্রাণ...উন্নয়নের কর্মযজ্ঞে তার কিইবা দাম বলুন? আফটার অল, ওরা সিপিএমের আমলে জন্মেছিল নিশ্চিত।
গুচ্ছের রাস্তা আর বাড়িঘর অকারণে নীল-সাদা রঙ হয়েছে। নিন্দুকদের মতে সে রঙও নাকি এক ঘেসোর দোকান থেকেই কেনা হয় বিনা টেন্ডারে। এতে ঠিক কি উন্নয়ন হয়েছে বলবেন?
গত আর্থিক বছরে কুড়ি জন মত চাষী দেনার দায়ে আত্মহত্যা করেছেন। চা বাগানে অনাহারে মৃত্যুমিছিল বেড়েই চলেছে।
এই খেলা-মেলার টাকা, নীল সাদা রঙ করার টাকা- এসবের একটা অংশ দিয়ে এই দেনার দায়ে বিকিয়ে যাওয়া চাষী, অনাহারে ধুঁকতে থাকা চা বাগানের শ্রমিক-এদের একটু সাহায্য করা যেত না সার?
আপনার গরিব দরদী সরকারের ফিরিস্তি'র তাড়া কাগজ তৈরী আছে জানি কিন্তু কাজের কাজ কি হয়েছে?
আপনি লিখেছেন যে বেতন খাতে রাজ্য সরকারের খরচ কমেছে। ২০১৪-১৫ আর্থিক বছরে বাজেটের বরাদ্দের ৩১.৭% খরচ হয়েছে বেতন বাবদ। আমি অর্থনীতির ছাত্র নই, তবু এটুকু বোঝা যাচ্ছে বেতন খাতে খরচ কমা মানে রাজ্য সরকারের কর্মী সংখ্যাও কমেছে। অবসরপ্রাপ্তদের জায়গাতে আর স্থায়ী নিয়োগ হয়নি।
এদিকে আপনার মুখ্যমন্ত্রী ভোটের বাজারে বকে বেড়াচ্ছেন যে তিনি নাকি ৬৮ লাখ বেকারকে চাকরি দিয়েছেন। এবার ৬৮ লাখ চাকরি দিলে বেতন খাতে খরচ বাড়া উচিত। কিন্তু আপনার হিসেবে তো খরচ কমেছে।
তাহলে? মিথ্যে কথাটা কে বলছেন বলুন তো? আপনি না আপনার মুখ্যমন্ত্রী?
আপনি লিখেছেন যে ডিএ না দিয়ে সেই টাকায় আপনার সরকার সার্বজনীন উন্নতিতে হাত দিয়েছে। এখন সার্বজনীন উন্নতি বলতে আপনি কি বোঝেন সেইটে জানতে ইচ্ছে করছে। ভোটের হিসেবে দেখা যাচ্ছে ঘেসো পার্টির নেতাদের সম্পত্তি অনেকের ক্ষেত্রেই কয়েকশো থেকে কয়েক হাজার গুণ বেড়েছে, এটাই কি সার্বজনীন উন্নতি?
চাষীরা ধানের সহায়ক মূল্য পাচ্ছেনা।কিষান মান্ডিগুলো গড়া হয়েছে লোকালয়ের মূল বাজারের বাইরে। সেখানে কেউই যায়না। দেনার দায়ে আলু চাষীরা আত্মহত্যা করছেন, এইটাই কি সার্বজনীন উন্নতি?
পাঁচ বছরে কাগজে কলমে ছাড়া কোনো বড় ও ভারি শিল্প গড়ে ওঠেনি যাতে বিকল্প কর্ম-সংস্থান হতে পারে। এটাই কি সার্বজনীন উন্নতি?
সারদা কেলেঙ্কারিতে এটা জলের মতন স্পষ্ট যে গরিব দরদী সরকারের নেতারা গরিবের টাকা লুটের সাথে যুক্ত ছিলেন। কদিন আগেও এক চিটফান্ডের মালিককে দিদিমণির ভাইপো'র পাশ থেকে ধরা হয়েছিল।সত্তরের উপর মানুষ আত্মহত্যা করেছেন। সর্বস্বান্ত হয়েছেন হাজার হাজার মানুষ। এটাই কি আপনার সার্বজনীন উন্নতি?
সরকারী স্কুল শিক্ষা আপনার মতে অদক্ষতার নজির। সেই স্কুলের চাকরিকে সামনে রেখে গরিব দরদী সরকারের নেতারা প্রাইমারি আর টেট নিয়ে লাখ লাখ বেকারের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা কামিয়েছেন। আপনাদের শিক্ষামন্ত্রী অব্দি বলতে বাধ্য হয়েছেন যে যারা যারা চাকরি দেবার নাম করে টাকা নিয়েছেন তারা যেন টাকা ফেরত দেন। এটাই কি আপনার সরকারের সার্বজনীন উন্নতি?
আপনার গাঁজাখুরি'র আরেকটা উদাহরণ দিচ্ছি। সরকারী স্কুলে বেসরকারী স্কুলের থেকে কুড়িগুণ ছেলে মেয়ে পড়ে। এইটেতে আপনার ভারি দুঃখ হয়েছে নির্ঘাৎ। কারণ, স্কুলশিক্ষাটাকে বেসরকারি করণ করা গেলোনা। আপনি লিখেছেন, 'কিন্তু সমস্যা হল, সরকার বিপুল টাকা স্কুল শিক্ষায় খরচ করা সত্ত্বেও পড়াশোনার পিছনে স্কুল পড়ুয়াদের ব্যক্তিগত খরচ কমছে না। দেখা যাচ্ছে, পশ্চিমবঙ্গের স্কুল পড়ুয়াদের গড় ব্যক্তিগত খরচ সারা ভারত গড়ের খুব কাছাকাছি, এবং পশ্চিমবঙ্গের পড়ুয়ারা যে টাকাটা স্কুল-বেতনের খাতে বাঁচাচ্ছে তার থেকে বেশি তাদের খরচ হয়ে যাচ্ছে প্রাইভেট কোচিং-এ। এর মানে, সরকার শিক্ষায় এত বেশি খরচ করা সত্ত্বেও ছাত্ররা স্কুল থেকে ঠিকমত শিখতে পারছে না। এত খরচ করেও কিন্তু শিক্ষাপ্রাপ্তির নিরিখে পশ্চিমবঙ্গের স্থান সারা ভারত গড়ের কাছাকাছি। অর্থাৎ একই জায়গায় পৌঁছনোর জন্য সারা ভারতের তুলনায় পশ্চিমবঙ্গকে সরকারি ও ব্যক্তিগত খরচ মিলিয়ে অনেক বেশি ব্যয় করতে হচ্ছে। এটা অদক্ষতা।'
এবার আপনার এই ফালতু কথাগুলোর জবাব দিই। ভারতে Right of Children to Free and Compulsory Education Act বলে একটা আইন হয়েছিল ২০০৯ সালে যাতে স্পষ্ট করা বলা হয়েছে ১৪ বছর বয়স অব্দি এলিমেন্টারি এডুকেশন হবে অবৈতনিক। অর্থাৎ, স্কুলে কোনো বেতন নেওয়া হবেনা।খরচটা বহন করবে কেন্দ্র এবং রাজ্য (শতাংশ অনুপাতে প্রাথমিকভাবে কেন্দ্রই ৬৫% খরচ দেয়) ।কিন্তু পড়াশুনোর তো কিছু আনুসঙ্গিক খরচ থাকেই এবং সেটা গোটা দেশের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। রাজস্থানের ক্লাস সেভেনের ছেলেটাকেও খাতা পেন কিনতে হয় এ রাজ্যের আমডাঙ্গার ছেলেটার মতন। তাহলে পশ্চিমবঙ্গের স্কুল পড়ুয়াদের গড় ব্যক্তিগত খরচ সারা ভারত গড়ের খুব কাছাকাছি হবে এতে আশ্চর্য হবার মতন কিছু আছে কি?
নাকি, আপনারও ধারণা এরাজ্যে স্কুলের গোটা টাকাটাই মন্ত্রীসভার কারুর পৈতৃক সম্পত্তি থেকে আসে?
প্রাইভেট টিউশনের উপর নির্ভরতা বাড়ছে। তার কারণ হল প্রতিযোগিতার ইঁদুর দৌড়ে বাচ্চাদের নামিয়ে দেওয়া। সব্বাইকে সব কিছুতে ফার্স্ট হতে হবে।এইটে এক ধরণের সামাজিক অসুস্থতা। আপনি তার দায় দিচ্ছেন স্কুলের উপর। আমি বলছিনা যে সরকারী স্কুলে খুব পড়াশুনো ভালো হয়। একটা পার্সেন্টেজ শিক্ষক নিশ্চয়ই ফাঁকিবাজ। কিন্তু বেশিরভাগ খারাপ হলে তো সরকারী স্কুলের প্রতি এত নির্ভরতাই থাকতো না।
একটা হাইস্কুলে একজন মাস্টারমশাইকে দিনে কটা ক্লাস নিতে হয় সেটা আপনার জানা আছে? একটা হাইস্কুলে একজন মাস্টারমশাইকে কম করেও সপ্তাহে ২২-২৫ টা ক্লাস নিতে হয়। এর বাইরে প্রভিসনাল ক্লাস থাকে।দিনে কম করেও পাঁচটা, মোট দুশো মিনিট। প্রতি ক্লাসে গড়ে কম করেও পঞ্চাশের উপর ছেলে-মেয়ে। চল্লিশ মিনিটের ক্লাসে সবাইকে ঠিকঠাক দেখানো সম্ভব?
উত্তর হচ্ছে না। তাহলে আরো সেকশন বাড়াতে হবে। আরও শিক্ষক লাগবে।
কিন্তু শিক্ষক তো আপনারা নিয়োগ করবেন না। কারণ আপনার মতে 'অদক্ষতার একটা উদাহরণ স্কুলশিক্ষা।'
কিন্তু একইসাথে ঢালাও বেসরকারী বিএড আর ডিএড কলেজের পারমিশন দিয়ে যাবেন। মাঝে মধ্যেই স্কুলে শিক্ষক নেবো বলে বিজ্ঞাপন দেবেন। হাজার হাজার গরিব ছেলে মেয়ে জমি বিক্রি করে লাখ লাখ টাকা দিয়ে এসব কলেজ থেকে বিএড ডিএড পাশ করে বেরিয়ে এসে দেখবে যে আপনি বক্তিমে ফলাচ্ছেন যে 'অদক্ষতার একটা উদাহরণ স্কুলশিক্ষা' তাই এখানে আর শিক্ষক নিয়োগের দরকার নেই, বরং সেই টাকা দিয়ে সার্বজনীন উন্নয়নের নামে দিদিমণি'র আরও কটা ঢাউস ফ্লেক্স টাঙানো হোক।
পারলে নিজের মুখটা একবার আয়নায় দেখুন। ভালো থাকুন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন