শনিবার, ২৪ আগস্ট, ২০১৩

রোজগেরে ~ লোপামুদ্রা মিত্র পাল

চলতে চলতেয় আজ "রোজগেরে"

১) গত সপ্তাহে ক'দিন তুমুল বৃষ্টি হওয়ায় বাস রুট ছেড়ে অফিসফেরত ট্রেন রুট ধরলাম মেট্রো অব্দি পৌঁছাতে। এমনি একদিন ট্রেনে উঠে বসতেই একটি লোক– কানে ব্যথা, দাঁতে ব্যথা, মাথায় ব্যথা, পায়ে ব্যথা, হাতে ব্যথা, পেটে ব্যথা,দীর্ঘ দিনের ব্যথা, হটাত ব্যথা সারাতে ব্যবহার করুন এই তেল। সর্ব ব্যথাহর এই তেল,দাম মাত্র ১০ টাকা। দু ফোঁটা লাগিয়ে পাঁচ মিনিট মালিশে তিন মিনিটে ব্যথা গায়েব! এতেআছে প্রাচীন আয়ুর্বেদিক শাস্ত্র অনুযায়ী হাজারো জড়িবুটি । কোন ঝামেলা বা side effect  নেই আলোপ্যাথি্রমতো। এতোটা বলার পর একজন পাশ থেকে বললেন কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই?? লোকটি বলেন"পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া" আবার কি? কোন "side effect" নেই বললাম যে!! দেখলাম দেশের লোক বাংলা নাজানলেও ইংরেজিটা বেশ জানেন। যাই হোক হুড়মুড় করে বিক্রি হতে লাগলো । বেশির ভাগ ইখেটে খাওয়া মানুষ ,সারা দিনের কাজের শেষে গায়ে- গতরে ,মনে ব্যথা নিয়ে বাড়ির মুখে। একজনআবার পকেট থেকে ভলিনি জেল বার করে বললেন আমি লেবারের কাজ করি মেট্রো রেলে, ভলিনিলাগিয়ে একটু আরাম পেলেও খানিক বাদে আবার যে কে সেই। লোকটি বলে চলেন এই আলোপ্যাথি্রমতো খারাপ আর দুনিয়ায় কিছু নেই। আমাদের নিজস্ব শাস্ত্র অনুযায়ী চলুন। কথায় বলে নাগেঁয়ো যোগী ভিখ পায় না। বুঝলাম এদানিং হিট আয়ুর্বেদিকের "side effect" এটা। ওদিক থেকে হটাত ফিসফাস ক'জন মহিলার। একজনঅল্পবয়সী ক্ষয়াটে চেহারার বউ কি যেন বললেন। লোকটি বলেন হ্যাঁ হ্যাঁ মা জননী ওই দিনগুলোয় পেটে একটু লাগিয়ে মালিশ করলেই আপনার ব্যথা কমে শরীল একদম ঝরঝরে!! বেশ ভালইরোজগার হয়ে গেল ১৫ মিনিটে । আমায় লোকটি একদম ই পাত্তা দিচ্ছিল না, না দেওয়ার ইকথা। কারন আমি এক্কেবারেই potential customer নই। কিন্তু জাত salesman  বলতেহবে। সেই আপ্ত বাক্য sales man দের – যেখানে দেখিবে ছাই, উড়াইয়া দেখ তাই, পাইলেও পাইতে পারো অমুল্য রতন"। তাইস্মরণ করে নামার ঠিক আগে আমায় – " ম্যাডাম , একটা নিয়ে যান , দেখবেন লাগাবার আগেইব্যথা গায়েব!" আমার সরল প্রশ্ন – কোথায় লাগাব? আশ্চর্য লোকটি বলে ওঠে, "কেন?যেখানে ব্যথা সেখানে"! মুখ ফস্কে বেড়িয়ে পড়ে "দাদা সংসারে বড় জ্বালা যন্ত্রণা,কোথায় লাগাবো একটু বলবেন?" আমি জানি উনি আমায় পাগল ঠাউরালেন। দমদম এ নেমে হাঁটতে হাঁটতেমুখ ফিরিয়ে দেখি তখনো আমার দিকে সন্দিহান দৃষ্টিতে দেখছেন আর বিড়বিড় করছেন, বোধহয়গালাগাল।


২)আগে যখন অফিস আসতাম বাসে শ্যাম বাজার মোরে বাস দাঁড়ালেইএকটি ২০-২২ বছরের ছেলে উঠত কাছা পরা। বাবার শ্রাদ্ধের জন্য পয়সা চাইত। TargetCustomer  ছিল দক্ষিণেশ্বরে পুন্যলোভে আসা মহিলা পুন্যারথিরা। ভুলেও ডেলি পাষণ্ড দের থেকে চাইল না।

অবাক ব্যপার ৩ মাস maternity leave কাটিয়ে জয়েন করে দেখি তখনো সে বাবার শ্রাদ্ধেরজন্য পয়সা চাইছে!!


৩) আজ এক অভিনব অভিজ্ঞতা হোল। বাসে আসতে আসতে বোধহয় সবচেয়েক্ষুদে রোজগেরে দেখলাম। বাচ্চাটির বয়স মেরেকেটে দুই কি আড়াই। নাক দিয়ে অনবরত শিকনিপরছে আর এক হাতে প্যান্ট টা টেনে ধরে আছে। সাথে বছর ছয়েকের দিদি শুধু। এরিয়া হলসিঁথি মোড় থেকে বনহুগলি। উঠেই দিদি দুটো পাথরের পাতলা খণ্ড চটাস চটাস করে বাজিয়েগান ধরল " টাকি ও টাকি ও টাকি টাকি টাকি রে" সেই আদ্যিকালের গান তাও বেসুরো।কিন্তু ঘটনা সেটা নয়। গানের সাথে সাথে ওই টুকু ছোট ভাই চলন্ত বাসে ব্যালেন্সরাখছে, নাচছে আবার পয়সাও তুলছে। অবাক হয়ে দুচোখ ভরে দেখলাম আমাদের ঘরের ৭-৮ বছরের বাচ্চাকেওহাত ধরে রাস্তা পার করিয়ে দিতে হয় আর এদের বাবা – মা কত আয়াসে ছেড়ে দিয়েছে জীবনসংগ্রামে যুঝে নিতে নিজেদের, হয়ত বা এদের রোজগার ও ফুটপাথের ফুটিফাটা সংসারে ব্যয়হয় অভাবের ফুটো বোজাতে। রোজগার মন্দ হল না , এবার নিশ্চিন্ত জলখাবার। বাসের মেঝেয়বসে উচ্ছিষ্ট ব্রিটানিয়া কেক ভক্ষন ভাই ও বোনে ।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন